বুলবুল ললিতকলা একাডেমী
বুলবুল ললিতকলা একাডেমী (বাফা) একটি সংস্কৃতি-চর্চাকেন্দ্র। উপমহাদেশের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী বুলবুল চৌধুরীর স্মৃতিবিজড়িত এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৫ সালের ১৭ মে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। সংক্ষেপে এটি বাফা (BAFA Bulbul Academy for Fine Arts) নামে পরিচিত। কণ্ঠসঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত, নৃত্যকলা, নাট্যকলা, চারু ও কারুশিল্পে শিক্ষাদান এবং শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীতে গবেষণা পরিচালনা এর লক্ষ্য।
বুলবুল ললিতকলা একাডেমী প্রথমে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করে। বিভিন্ন সময়ে সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল নিয়ে এটি ইরাক, ইরান, পাকিস্তান, সোভিয়েত রাশিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, নেপাল, বলিভিয়া, ওমান প্রভৃতি দেশে অনুষ্ঠান করে সুনাম অর্জন করে। এছাড়া একাডেমীর নিয়মিত অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন, বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসব ইত্যাদি উদ্যাপন এবং রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বুলবুল চৌধুরী, আববাসউদ্দীন আহমদ, জয়নুল আবেদিন প্রমুখ মনীষীর জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন। এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে একাডেমী এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
একাডেমী ললিতকলার বিভিন্ন মাধ্যম, যেমন কণ্ঠসঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত, নৃত্যকলা, নাটক, চিত্রকলা ও ভাস্কর্যশিল্পে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেয়। শিল্পের বিভিন্ন মাধ্যমে পদ্ধতিগত শিক্ষাদান ছাড়াও এখানে রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা বিভাগ। একাডেমীর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরাই এর সদস্য। এ বিভাগ উচ্চমানের অনুষ্ঠানাদি পরিচালনা করে থাকে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও এর অংশগ্রহণ থাকে। একাডেমী পরিবেশিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নৃত্যনাট্য হলো: চন্ডালিকা (১৯৫৮), প্রকৃতির লীলা (১৯৫৮), নকসী কাঁথার মাঠ (১৯৫৯), সিন্ধু (১৯৬১), মায়ার খেলা (১৯৬৪), চিত্রাঙ্গদা (১৯৬৬), হাজার তারের বীণা (১৯৬৭), বাদল বরিষণে (১৯৬৭), রাজপথ জনপথ (১৯৬৯) ও শ্যামা (১৯৭০)। এছাড়াও একাডেমী বিভিন্ন বিষয় ও গানের ওপর প্রায় অর্ধশত খন্ড নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেছে।
একাডেমীর সবচেয়ে বড় অবদান সংষ্কারমুক্ত সংস্কৃতিচর্চাকে প্রাতিষ্ঠানিকরূপ দেওয়া। এক সময় নৃত্যকলা সম্পর্কে মুসলিম সমাজের বিরূপ ধারণা ছিল। বুলবুল ললিতকলা একাডেমী সে ধারণা ভেঙে দিয়ে নৃত্যকলাকে সবার নিকট গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। সঙ্গীত, নৃত্য ও যন্ত্রশিল্পী তৈরি করে এই প্রতিষ্ঠান দেশের মৌলিক সাংস্কৃতিক দায়িত্ব পালন করছে। [মুহাম্মদ আবদুল হাই]