মুফতী

মুফতী  ফতওয়া ঘোষণা অথবা শরিয়তি আইন ব্যাখ্যা করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি। সামাজিকভাবে স্বীকৃত শরিয়তি আইন বিশেষজ্ঞকেও শ্রদ্ধাপ্রদর্শনার্থে মুফতী বলা হয়। মুসলিম আইন অনুসারে পরিচালিত রাষ্ট্রে কাজী অথবা বিচারককে মুসলিম আইন ব্যাখ্যায় সাহায্য করার জন্য মুফতী থাকেন। বাংলায় মুগল শাসনামলে আদালত এবং নওয়াবকে ন্যায় বিচার সম্পন্ন করায় সাহায্য করার জন্য মুফতী ও কাজীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এ প্রথাটি কর্নওয়ালিস এর শাসন আমল (১৭৮৬-১৭৯৩) পর্যন্ত চালু ছিল। এই সময় মুফতী তাঁর পূর্বতন গুরুত্ব হারান। একজন আইন কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর অস্তিত্ব অবশ্য তখনও বজায় ছিল।

১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৯নং আইন (Regulation) অনুযায়ী আদালতসমূহ কাঠামোগতভাবে পুনর্গঠিত হয়। এ আইন অনুসারে ইউরোপীয় বিচারকগণ দেশীয় বিচারকদের উপর প্রাধান্য লাভ করেন। তখন থেকে সদর ও জেলা আদালতসমূহ মুফতীর পরিবর্তে মৌলভী পদবিধারী মুসলমান কর্মকর্তা নিয়োগ করে। মুফতীদের প্রথাগত কর্তৃত্বের অধঃপতিত অবস্থানের সমর্থনের জন্যই দৃশ্যত এ পরিবর্তন আনা হয়েছিল। ১৮৬২ সালে আধুনিক হাইকোর্ট প্রথা প্রবর্তনের পর মুফতীদের ছায়া হিসেবে মৌলভী রাখার ব্যবস্থাটিও রহিত করা হয়।

ব্রিটিশ আদালতে আইন ব্যাখ্যাকারী হিসেবে বিলুপ্ত হলেও মুফতী পদটি এখনও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে রয়েছে। উলামা শ্রেণির সদস্যগণ শরিয়তি আইনে উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিকে প্রায়ই মুফতী বলে অভিহিত করেন। এমনকি উলামা শ্রেণি কর্তৃক স্বীকৃত না হয়েও একজন দাবিদার নিজেকে মুফতী বলে অভিহিত করতে পারেন। বিচার বিভাগীয় লুপ্ত এই উপাধিটি কেউ গ্রহণ করলে আলিমগণও তাতে আপত্তি করেন না।  [সিরাজুল ইসলাম]