ভারত সচিব

ভারত সচিব ১৮৫৮ সাল থেকে ভারত বিষয়ক দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্রিটিশ মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য। কোম্পানি আমলে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট পরোক্ষভাবে ভারতীয় বিষয়াবলি নিয়ন্ত্রণ করত ‘বোর্ড অব কন্ট্রোল’ নামক একটি সংসদীয় সংস্থার মাধ্যমে। ১৭৮৪ সালের পিটের ভারত আইন দ্বারা বোর্ড অব কন্ট্রোল সৃষ্টি হয়েছিল। বোর্ডের সভাপতি ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন সদস্য এবং তিনি একজন কেবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করতেন। ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন বোর্ড অব কন্ট্রোল বিলুপ্ত করে দেয় এবং ভারত সচিব বোর্ডের সভাপতির স্থলাভিষিক্ত হন।

ভারত সচিব পুরানো বোর্ড অব কন্ট্রোল এর সভাপতির শুধু একটি নতুন নামকরণই ছিল না। ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন ব্রিটিশ কেবিনেটের একজন সিনিয়র সদস্যকে ভারতীয় বিষয়াবলির দায়িত্ব প্রদান করে। তার উপাধি হয় স-পরিষদ ভারত সচিব। ভারত সম্পর্কে অভিজ্ঞ পনেরো সদস্যের এক পরিষদ ভারতীয় বিষয়াবলির ব্যাপারে ভারত সচিবকে সাহায্য করতেন। ভারত সচিব, পরিষদ মন্ডলীর সদস্যবর্গ ও পরিষদের কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি ভারতের রাজস্ব হতে প্রদান করা হতো।

কোম্পানি আমলে স-পরিষদ গভর্নর জেনারেল ভারত শাসন ব্যাপারে সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগ করতেন। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কলকাতা সরকার শাসনবিষয়ক সকল উদ্যোগ গ্রহণ করতেন এবং এসব বোর্ড অব কন্ট্রোল ও কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স দ্বারা যথারীতি অনুমোদিত হতো। কিন্তু গভর্নর জেনারেলকে এখন শুধু ভারত সচিবের অধীন কর্মকর্তায় পর্যবসিত করা হয়। এ যাবৎ বোর্ড অব কন্ট্রোল, কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স ও কোর্ট অব প্রোপ্রাইটার্স যে ক্ষমতা প্রয়োগ করত, এখন থেকে ভারত সচিব সে সকল ক্ষমতার অধিকারী। এসব ক্ষমতা ছাড়াও প্রাপ্ত অতিরিক্ত ক্ষমতা বলে তিনি গভর্নর জেনারেলকে নিয়োগ দেওয়া ও তাঁকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। ১৮৫৮ হতে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত ভারত সচিব ভারতের সমস্ত আইন প্রণয়ন ও সংস্কার কার্যাদিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতেন ও প্রভাব ফেলতেন। গভর্নর জেনারেল ভারত সচিবের নিকট হতে ভারত শাসন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভারত শাসন প্রণালীর নির্দেশাবলি শুধু গ্রহণ করতেন ও সেগুলি বাস্তবায়ন করতেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রবর্তিত হলে এবং প্রগতিশীল শাসনতান্ত্রিক প্রসারের ফলে ভারত সচিবের ক্ষমতা আনুপাতিক হারে কমানো হয়। এগুলি ধীরে ধীরে ভারতের প্রতিনিধিত্বশীল আইন সভার নিকট হস্তান্তরিত হয়। ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন প্রবর্তিত হওয়ার পর ভারত সচিব ক্ষমতাহীন প্রধানে পরিণত হন।  [সিরাজুল ইসলাম]