বীমা

বীমা  হচ্ছে একজনের ঝুঁকিকে অনেকের কাঁধে বিস্তৃত করার একটি বৈধ ব্যবস্থা। এটা এমন এক ধরনের চুক্তি যেখানে কোন বীমা প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত হারে প্রিমিয়াম গ্রহণের বিনিময়ে কয়েকটি অদৃষ্টপূর্ব কারণে বীমাকৃত দ্রব্যের ক্ষতি হলে তা বীমাকারী ব্যক্তিকে পূরণ করে দিতে সম্মত থাকে।

বাংলাদেশে বীমা ব্যবস্থার একটি ইতিহাস আছে। প্রায় ১০০ বছরেরও আগে ভারতে ব্রিটিশ শাসনামলে কয়েকটি বীমা কোম্পানি জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা উভয় ধরনের ব্যবসায় শুরু করেছিল। ১৯৪৭-১৯৭১ সময়কালে পূর্ব পাকিস্তানে বীমা ব্যবসা ভাল অবস্থায় ছিল। এ সময় ৪৯টি জীবন ও সাধারণ বীমা কোম্পানি ব্যবসায় পরিচালনা করত। এসব কোম্পানির উৎস ছড়ানো ছিল বিভিন্ন দেশে। এদের মধ্যে ব্রিটিশ, অস্ট্রেলীয়, ভারতীয়, পশ্চিম পাকিস্তানি ও পূর্ব পাকিস্তানি অন্যতম। ১০টি বীমা কোম্পানির সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানে, ২৭টির পশ্চিম পাকিস্তানে এবং বাকিগুলির সদর দপ্তর ছিল বিশ্বের নানাদেশে। কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ কোম্পানিই ছিল সীমিত দায়ের (limited liability) এবং কাজ করত অবাধ প্রতিযোগিতামূলক অর্থনৈতিক পরিবেশে। এগুলির মধ্যে কিছু ছিল বিশেষায়িত কোম্পানি যারা নির্দিষ্ট ধরনের ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ছিল, আবার কিছু ছিল যৌথ কোম্পানি যেগুলি একাধিক ধরনের ব্যবসায় নিয়োজিত ছিল।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৯৫ দ্বারা বীমা শিল্পকে জাতীয়করণ করে। এই আদেশ বাংলাদেশ বীমা (জাতীয়করণ) আদেশ ১৯৭২ হিসেবে বেশি পরিচিত। এই আদেশবলে প্রতিরক্ষা, ডাক জীবন বীমা এবং বিদেশি জীবন বীমা কোম্পানিসমূহ ব্যতীত এদেশে ব্যবসারত সকল বীমা কোম্পানি ও সংস্থাকে সরকারি খাতের ৫টি কর্পোরেশনের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এগুলি হচ্ছে জাতীয় বীমা কর্পোরেশন, তিস্তা বীমা কর্পোরেশন, কর্ণফুলি বীমা কর্পোরেশন, রূপসা জীবন বীমা কর্পোরেশন এবং সুরমা জীবন বীমা কর্পোরেশন।

জাতীয় বীমা কর্পোরেশন সরাসরি বীমা ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। একটি শীর্ষ সংস্থা হিসেবে এটি বীমা কাজে নিয়োজিত অন্যান্য ৪টি কর্পোরেশনের কাজকর্ম তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করত। তিস্তা ও কর্ণফুলি সাধারণ বীমা ব্যবসা করত, রূপসা ও সুরমা জীবন বীমার কাজ করত। সে সময়ে চালুকৃত ৪৯টি বীমা কোম্পানিকে এই ৪টি কর্পোরেশনের সাথে একীভূত করা হয়। পক্ষান্তরে বিশেষায়িত জীবন বীমা কোম্পানি বা মিশ্র (Composite) কোম্পানির জীবনবীমা অংশটুকু রূপসা ও সুরমার সাথে এবং বিশেষায়িত সাধারণ বীমা কোম্পানি বা মিশ্র কোম্পানির সাধারণ বীমা অংশটুকু তিস্তা ও কর্ণফুলির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। জীবন বীমা ও সাধারণ বীমা কোম্পানির প্রতিটিতে ২টি করে মোট ৪টি বীমাকারী কর্পোরেশন গঠনের পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়করণকৃত ব্যবস্থার অধীনেও প্রতিযোগিতাকে উৎসাহিত করা। কিন্তু ৪২টি কর্পোরেশন এবং তাদের একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের অপ্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ব্যয় সীমিত প্রতিযোগিতার মধ্যে প্রাপ্ত সুবিধাকে গুরুত্বহীন করে ফেলে। ফলে ১৯৭৩ সালের ১৪ মে বীমা কর্পোরেশন আইন ১৯৭৩-এর আওতায় বীমা শিল্পে অবকাঠামোগত পরিবর্তন আনা হয়। এই আইনের আওতায় ৫টি কর্পোরেশনের স্থলে ২টি কর্পোরেশন স্থাপন করা হয়, একটি হচ্ছে সাধারণ বীমা ব্যবসায়ের জন্য সাধারণ বীমা কর্পোরেশন, এবং অন্যটি জীবন বীমা ব্যবসায়ের জন্য জীবন বীমা কর্পোরেশন

ডাক জীবন বীমা ও বিদেশি কোম্পানি দ্বারা জীবন বীমা পূর্বের মতোই সক্রিয় থাকে। তবে বাস্তবে, একমাত্র আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানিই জীবন বীমার ক্ষেত্রে নতুন ব্যবসায় ও সেবার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। বাকি তিনটি কোম্পানি শুধু পাকিস্তান আমলে বীমাকৃত পলিসিগুলির প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে।

সাধারণ বীমা ব্যবসায় চালানোর সমুদয় দায়িত্ব পড়ে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ওপর। আর জীবন বীমার দায়িত্ব পড়ে জীবন বীমা কর্পোরেশন, আমেরিকান লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি ও ডাক জীবন বীমা কর্পোরেশনের ওপর। কিন্তু পরিবর্তীকালে অর্থনৈতিক উদারীকরণ নীতির ফলে বীমা শিল্পে অবকাঠামোগত পরিবর্তন সাধন করা হয়। ১৯৮৪ সালে বীমা কর্পোরেশন আইন ১৯৭৩ এর সংশোধনী আনা হয়। এতে সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা কর্পোরেশনের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানা খাতে বীমা কোম্পানি পরিচালনার ব্যবস্থা রাখা হয়। বীমা কর্পোরেশন (সংশোধনী) আইন ১৯৮৪, ব্যবসায় পরিচালনা এবং পুনঃবীমা সংক্রান্ত কয়েকটি বিধিনিষেধ সাপেক্ষে ব্যক্তিমালিকানা খাতে সাধারণ ও জীবন বীমা কোম্পানি স্থাপনের অনুমতি দেয়। নতুন আইনের আওতায় সরকারি আর্থিক খাতের সাধারণ বীমার সকল ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে ব্যক্তিমালিকানা খাতের বীমা কোম্পানিগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বেসরকারি আর্থিক খাতের বীমা ব্যবসা করারও অধিকার দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে কিছু প্রতিরক্ষা প্রদান এবং একইসাথে বেসরকারি খাতের বীমা কোম্পানিগুলিকে কিছুটা অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ প্রদানের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বেসরকারি খাতের বীমা কোম্পানি কর্তৃক পুনঃবীমা ব্যবস্থা সংক্রান্ত আরও একটি বিধিনিষেধ ছিল। আইনে বলা হয়, বেসরকারি খাতের বীমা কোম্পানিসমূহকে তাদের পুনঃবীমা প্রতিরক্ষার ১০০ শতাংশ অবশ্যই সাধারণ বীমা কর্পোরেশন থেকে নিতে হবে এবং তারা পুনঃবীমার জন্য অন্য কোথাও যেতে পারবে না। এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে পুনঃবীমা প্রিমিয়ামের আকারে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে যেতে না পারে এবং যাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সামর্থ্য অনুযায়ী একটি পুনঃবীমা বাজার গড়ে ওঠে তার পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই ব্যবস্থা বস্ত্ততপক্ষে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে একটি পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে। অবশ্য পাশাপাশি তাদের সরাসরি বীমা কার্যক্রমও চলতে থাকে। তবে সর্বমোট বাজার ধারণক্ষমতা সংরক্ষণের পর সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অতিরিক্ত অর্থ দেশের বাইরে পুনঃবীমাকরণে অনুমতি দেওয়া হয়।

ব্যবসায় বিষয়ে বিধিনিষেধ বস্ত্ততপক্ষে এক ধরনের বাধ্যবাধকতা যা বীমাকারী প্রতিষ্ঠানগুলির বীমা পলিসিগুলিকে কার্যকরতা দেওয়ার জন্য তাদের ওপর বর্তানো হয়। এর ফলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাতে নৌ বীমাপত্রের আওতায় সকল আমদানি ও রপ্তানিসহ বাংলাদেশের সম্পত্তি সম্পর্কিত সকল বীমা পলিসি বাংলাদেশের বীমা কোম্পানি কর্তৃক সম্পন্নকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়।

বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের ধারণা এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক নয়। সংরক্ষণবাদিতা বাধামুক্ত প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করে না। কারণ, যেহেতু সরকারি খাতের অর্থনীতি সর্বমোট প্রিমিয়াম পরিমাণের ৮০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে, বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলির টিকে থাকার জন্য যৎসামান্য ২০ শতাংশ প্রিমিয়াম অবশিষ্ট থাকে। এরপরও সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে বেসরকারি প্রিমিয়াম জমার নগণ্য অংশ (২০ শতাংশ) নিয়ে ব্যবসায় নিয়োজিত বেসরকারি কোম্পানিগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতার অনুমতি দেওয়া হয়।

বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলি উপরিল্লিখিত সীমাবদ্ধতাসমূহ পুরোপুরি তুলে নেওয়ার দাবি উত্থাপন করে যাতে তারা সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ব্যক্তি ও সরকারি উভয় খাতের বীমা ব্যবসা করতে পারে এবং তাদের পছন্দমতো পুনঃবীমাকারীর নিকট পুনঃবীমা করতে পারে। এর ফলে বীমা কর্পোরেশন (সংশোধনী) আইন ১৯৯০ জারির মাধ্যমে বিদ্যমান ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়। পরিবর্তনগুলি হচ্ছে:

১.   বেসরকারি খাতের বীমা কোম্পানিগুলি ব্যক্তি খাত থেকে উৎসারিত বীমা ব্যবসায়ের ৫০ শতাংশ করতে পারবে।

২.   ব্যক্তি খাতের বীমা কোম্পানিগুলি তাদের পুনঃবীমার ৫০ শতাংশ দেশে অথবা বিদেশের যে কোন পুনঃবীমাকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট করতে পারবে। বাকি ৫০ শতাংশ সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের অধীনে রাখা হয়। আইনে এভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলেও বীমা বাজারের বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্নতর।

একটি বীমা কোম্পানি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন ও জমার পরিমাণ নিম্নরূপ:

১.   মূলধন (Capyital requirements) জীবন বীমা কোম্পানি ৩০০ মিলিয়ন টাকা, এর ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা কর্তৃক প্রদেয়; পারম্পরিক মিউচুয়াল জীবন বীমা কোম্পানি: ১৫ মিলিয়ন টাকা; সাধারণ বীমা কোম্পানি: ৪০০ মিলিয়ন টাকা, এর ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তা কর্তৃক দেয়; সমবায় (Cooperative) বীমা সোসাইটি জীবন বীমার জন্য ২৫ মিলিয়ন টাকা এবং সাধারণ বীমার জন্য ২৫ মিলিয়ন টাকা।

২.   জমা (Deposit requirements) প্রতিটি বীমা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন লাভের জন্য দরখাস্ত দাখিলের সময় নগদ অথবা অনুমোদিত প্রতিরক্ষা পত্রে বিভিন্ন বীমা অনুযায়ী নানা হারে টাকা জমা দিতে হবে। যেমন, জীবন বীমা: ১৫ মিলিয়ন টাকা; সাধারণ বীমা: ২৫ মিলিয়ন টাকা; মিউচুয়াল বীমা কোম্পানি: ৩ মিলিয়ন টাকা; সমবায় বীমা সোসাইটি ২৫ মিলিয়ন টাকা।

যেহেতু বীমা কোম্পানি গঠন সরকারের একটি নীতিগত বিষয় সেজন্য কতগুলি নিয়মকানুন অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা হয়। নীতিমালাগুলি হচ্ছে:

১.   আগ্রহী উদ্যোক্তাকে অগ্রিম অনুমোদন লাভের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবরে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে।

২.   প্রয়োজনীয় বাছাইয়ের পর কর্তৃপক্ষ তার সুপারিশসহ দরখাস্তটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবেন।

৩.  অর্থ মন্ত্রণালয় আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মতামতসহ সিন্ধান্ত গ্রহণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ কমিটিতে প্রেরণ করবেন।

৪.   কমিটির সিদ্ধান্ত যদি ইতিবাচক হয় তাহলে আবেদনটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠাতে হবে এবং সেখান থেকে উদ্যোক্তাকে জানানোর জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করা হবে।

৫.  এরপর উদ্যোক্তাকে কোম্পানি আইনের অধীনে পাবলিক লায়েবিলিটি (Liability) কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন লাভের জন্য নির্ধারিত ফরমে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রারের নিকট আবেদন করতে হবে। কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যথাযথ অনুমোদিত মেমোরেন্ডাম ও আর্টিকেলস (Articles) অব অ্যাসোসিয়েশন দরখাস্তের সাথে দাখিল করতে হবে।

৬.   নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর উদ্যোক্তাকে কোম্পানির মূলধন শেয়ার ছাড়ার জন্য সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিকট থেকে অনুমোদন নিতে হবে।

৭.  পুনঃবীমা সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিকতা এ পর্যায়ে সম্পন্ন করতে হবে।

৮.  উপরে উল্লেখিত শর্তাবলি পূরণ হলে বীমা আইন ২০১০-এর আওতায় ব্যবসা শুরু করার জন্য লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করতে হবে। (এ সম্পর্কিত সরকারি ঘোষণা সাপেক্ষেই কেবল দরখাস্ত দেওয়া যেতে পারে)। বীমা কোম্পানিসমূহের বিনিয়োগ সংক্রান্ত কার্যাবলি, করারোপ এবং প্রতিবেদনসহ এদের নিয়ন্ত্রণ বীমা আইন ২০১০ অর্থ আইন, এবং বীমা উন্নয়ন এবং পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

বেসরকারিকরণ নীতির ফলে ১৯৮৫ সাল থেকে বেসরকারি খাতে বেশকিছু বীমা কোম্পানি আত্মপ্রকাশ করেছে। এর ফলে প্রিমিয়াম থেকে লব্ধ অর্থের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিযোগিতা, উন্নত সেবা এবং অনাবিষ্কৃত বিস্তৃত ক্ষেত্র থেকে নতুন নতুন ধরনের ব্যবসায় আবিষ্কারের ফলে এই প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। বেসরকারিকরণের পূর্বে দেশের বার্ষিক সর্বমোট প্রিমিয়ামের পরিমাণ ছিল সাধারণ খাতে ৯০০ মিলিয়ন টাকা এবং জীবন বীমা খাতে ৮০০ মিলিয়ন টাকা। বর্তমানে এই পরিমাণ বেড়ে সাধারণ বীমার ক্ষেত্রে  ১৩৩৯৭ মিলিয়ন টাকা ও জীবন বীমার ক্ষেত্রে ৪৪৯৫৬ মিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে।

বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে ৪৩টি সাধারণ বীমা কোম্পানি ও ১৭টি জীবন বীমা কোম্পানি ব্যবসা করছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশন ও সাধারণ বীমা করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানিগুলির মধ্যে রয়েছে: অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, এশিয়া প্যাসেফিক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, গ্রীনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, জনতা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ঢাকা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ডেলটা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পিপলস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পূরবী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রগতি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ফনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, মেটলাইফ আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, রূপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এবং হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।

দেশের বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহ শস্য বীমা ও রপ্তানি ঋণ গ্যারান্টি ছাড়া প্রায় সকল ধরনের সাধারণ ও জীবন বীমার কাজ করে থাকে। এই ২টি বিশেষ বীমা শুধু সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান, সমিতি, পেশাভিত্তিক গ্রুপ বীমা ব্যবসায়ের উন্নয়ন ও প্রসারের জন্য কাজ করে থাকে। এগুলির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নরূপ:

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন  ১৯৮৮ সালের ২৫ মে ১৯১৩ সালের কোম্পানি আইনের আওতায় এটি গঠিত হয় এবং জয়েন্ট স্টক কোম্পানি রেজিস্ট্রারের নিকট নিবন্ধিত হয়। এই সমিতির সদস্য সংখ্যা ৬০ এবং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সদস্য কোম্পানিগুলির উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, সহযোগিতা প্রদান এবং তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা।

বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমী  বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালে এটি বীমা বিষয়ে পেশাগত শিক্ষার উন্নয়ন, আয়োজন ও শিক্ষা প্রদান এবং বীমা বিষয়ে গবেষণা করার উদ্দেশ্যে স্থাপন করে।

জরিপকারী ও দালাল (Surveyors and Agents)  বাংলাদেশের বীমা ব্যবসায় জরিপকারী এবং দালালগণ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। জরিপকারীরা সাধারণ বীমার ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ ও জরিপের দায়িত্ব এবং কখনও কখনও বীমাকৃত সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করে থাকে। পক্ষান্তরে দালালগণ কমিশনের বিনিময়ে সাধারণ ও জীবন বীমা ব্যবসায় পরিচালনা করে থাকে। বীমা কোম্পানিগুলি বেতনভুক্ত উন্নয়ন কর্মকর্তাও নিয়োগ করে থাকে।

বাংলাদেশে পেশাভিত্তিক দালাল ব্যবস্থা এখনও গড়ে ওঠে নি। বীমাকারী ব্যক্তি কর্তৃক সরাসরি বীমাপত্র ক্রয়ই হচ্ছে প্রচলিত বীমা পদ্ধতি।  [এ.কে.এ.এইচ চৌধুরী]