বার্ষিক প্রশাসন প্রতিবেদন

বার্ষিক প্রশাসন প্রতিবেদন বাংলা সরকারের কার্যকলাপ ও কৃতিত্বের ধারাবাহিক বিবরণী। প্রধান প্রধান ঘটনাবলি এবং প্রশাসনের সকল স্তরে সম্পাদিত কার্যসমূহ অঙ্গীভূত করে বার্ষিক প্রতিবেদনের নিয়ম ১৭৮৬ সাল হতে চালু হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কেন্দ্রীভূত সরকার এমন নিয়মের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুধাবন করে। প্রশাসনিক ক্রমোচ্চ শ্রেণিবিভাগের প্রত্যেক কর্তৃপক্ষকে তার কার্যাবলি ও কৃতিত্বের বার্ষিক প্রতিবেদন তার প্রত্যক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করতে হতো। প্রশাসনের সর্বনিম্ন শাখা হতে শুরু করে প্রশাসনের সকল স্তর অতিক্রম করে বার্ষিক প্রতিবেদন চলে যেত কলকাতাস্থ কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট। সপরিষদ গভর্নর জেনারেলের সচিব প্রতিবেদনগুলি থেকে সারবস্ত্ত নিয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল রিপোর্টের আকারে কেন্দ্রীয় সরকার, কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স এবং বোর্ড অব কন্ট্রোল এর বিবেচনার জন্য তৈরি করতেন। কোম্পানি আমলে বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদন গোপনীয় বিষয় ছিল।

কিন্তু ১৮৫৯ সাল হতে প্রতিবেদন প্রকাশ্য দলিলে পরিণত করা হয় এবং এরপর থেকে বার্ষিক প্রতিবেদন বিলি ও সংরক্ষণের জন্য ছাপা হতো। এভাবে ১৮৫৯ সাল হতে বাংলার প্রশাসনের বার্ষিক কর্মকান্ডের ওপর একটি মুদ্রিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা শুরু হয়। এ নিয়ম উপনিবেশিক শাসনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ বার্ষিক প্রতিবেদন প্রধানত প্রশাসনের দশটি বিভাগে বিন্যস্ত ছিল যথা: রাজনৈতিক, ভূমি, ম্যাজিস্ট্রেসি ও বিচার, রাজস্ব ও আর্থিক-সংস্থান, অপরিহার্য পরিসংখ্যান, চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা, সংবাদপত্র, প্রত্নতত্ত্ব ও বিবিধ। এভাবে বাংলার প্রশাসনের ওপর লিপিবদ্ধ প্রতিবেদন উপনিবেশিক শাসন এবং এর শক্তি ও দুর্বলতার প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখার সুযোগ করে দেয়। [সিরাজুল ইসলাম]