পুন্ড্রনগর

পুন্ড্রনগর  বাংলাদেশের প্রাচীনতম নগরকেন্দ্র, এর প্রাচীনত্ব খ্রিস্টপূর্ব চার শতকের বলে ধরে নেওয়া হয়। এ নগরের সর্বপ্রথম উল্লেখ (পুদ্নগল) পাওয়া গেছে মহাস্থান ব্রাহ্মী লিপিতে এবং প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনের ফলে এ স্থানের প্রাচীনত্বের নিঃসন্দেহ প্রমাণ পাওয়া যায়। পুন্ড্রনগরের (গুপ্ত ও গুপ্ত-পরবর্তী যুগে ‘পুন্ড্রবর্ধনপুর’ নামে উল্লিখিত) ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা হয়েছে বগুড়া জেলার মহাস্থান-এ আবিষ্কৃত ধ্বংসাবশেষের সঙ্গে। এই শনাক্তীকরণের ভিত্তি হচ্ছে উপর্যুক্ত ব্রাহ্মী লিপি, সাত শতকের চৈনিক পর্যটক ও তীর্থযাত্রী হিউয়েন সাং এর বিবরণ এবং আদি মধ্যযুগের সাহিত্য করতোয়া-মাহাত্ম্য।

সেন আমল পর্যন্ত না হলেও মৌর্য যুগ হতে পাল আমলের শেষ অবধি পুন্ড্রবর্ধন বিভাগের প্রশাসনিক সদর দফতর হিসেবে পুন্ড্রবর্ধনের অবস্থান অব্যাহত ছিল। গুপ্তযুগে বাংলায় এটি ছিল তাদের শাসনের কেন্দ্র এবং  পুন্ড্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী।

করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত পুন্ড্রনগরের সঙ্গে জল ও স্থল পথে বাংলার অন্যান্য অংশের বেশ ঘনিষ্ঠ সংযোগ ছিল এবং সমগ্র প্রাচীন যুগে এটি ব্যবসায়-বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে সমৃদ্ধ ছিল। মুসলিম যুগের প্রথম দিকেও বিখ্যাত দরবেশ শাহ সুলতান বলখী অথবা মাহীসওয়ার-এর বাসস্থান হিসেবে এ নগরের গুরুত্ব অব্যাহত ছিল। শাহ সুলতান বলখী প্রাচীন নগরের দক্ষিণ-পূর্বাংশে তাঁর খানকাহ নির্মাণ করেছিলেন। নগরটি তখন সম্ভবত প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় ছিল।  [আবদুল মমিন চৌধুরী]