টেভার্নিয়ার, জে.বি

টেভার্নিয়ার, জে.বি (১৬০৫-১৬৮৯) সতেরো শতকের একজন ফরাসি পর্যটক। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে জন্মগ্রহণকারী জে.বি টেভার্নিয়ার তাঁর বাবা গ্যাব্রিয়েলের কাছ থেকে ভূগোলচর্চা ও বিদেশ ভ্রমণের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন বণিক ও ভূগোলবিদ।

জে.বি টেভার্নিয়ার

সতেরো শতকের ষাটের দশকে টেভার্নিয়ার ভারত ভ্রমণ করেন এবং ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে ট্রাভেলস ইন ইন্ডিয়া (Travels in India) শিরোনামে তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত প্রকাশিত হয়। বাংলার ওপর তাঁর বিবরণ, বিশেষ করে বাংলার তৎকালীন রাজধানী ঢাকার বর্ণনা অত্যন্ত জ্ঞানদীপ্ত। প্রকৃতপক্ষে তিনি দুবার ঢাকা ভ্রমণ করেন। প্রথমবার ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে এবং দ্বিতীয়বার ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে। দুর্ভাগ্যবশত তিনি তাঁর প্রথম ভ্রমণের কোনো বিবরণ রাখেন নি, তবে তাঁর দ্বিতীয় ভ্রমণের বিবরণ সর্বতোভাবে অত্যন্ত ব্যাপক। তাঁর বর্ণনায় দুই লিগ অথবা ৯.৫ কিলোমিটারের অধিক দৈর্ঘ্যের ঢাকা একটি অসাধারণ শহর। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এখানে প্রায় সকলেই নদীপাড়ে গৃহ-নির্মাণে আগ্রহী, ফলে শহরের বৃদ্ধিও ঘটেছে নদী বরাবর। আলাদা আলাদা ব্লকে গড়ে ওঠা ঘরগুলি সাধারণত মাটি ও বাঁশ দ্বারা নির্মিত। নদীতীরে বসবাসকারী অধিবাসীদের অধিকাংশই ছিল ছুতার শ্রেণীর। তারা যুদ্ধজাহাজ ও দেশীয় নৌকা প্রস্ত্তত করত। এখানকার সুবাহদার একটি উঁচু প্রাচীরবেষ্টিত দুর্গে বাস করতেন।

টেভার্নিয়ার উল্লেখ করেছেন যে, শহরে বসবাসকারী ওলন্দাজ ও ইংরেজগণ সুপ্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যকেন্দ্র ও সুউচ্চ গির্জা নির্মাণ করেছিল। দেশে যদিও ইংরেজ ও ওলন্দাজদেরই বৃহৎ বাণিজ্যিক অবকাঠামো ছিল এবং সুবাহদারের উপর ওলন্দাজদের প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি, তথাপি পর্তুগিজরাও দরবারে বিশেষ সুবিধা ভোগ করত। টেভার্নিয়ার ইংরেজ বাণিজ্যকুঠিএর প্রধান মি. প্রট-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পাগলা ও কদমতলি নদীর উপর ইটনির্মিত সেতু দেখতে পান।

১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জানুয়ারি টেভার্নিয়ার বাংলার তৎকালীন সুবাহদার শায়েস্তা খান এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ১৬ জানুয়ারি তিনি শায়েস্তা খানের রাজকীয় অন্দর মহলে মূল্যবান পাথর ও অলংকার বিক্রি করেন। ঢাকায় ষোল দিন অতিবাহিত করে ২৯ জানুয়ারি তিনি কাসিমবাজার এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। এর পর মহান ইলেকটর এর আমন্ত্রনে তিনি বার্লিন ভ্রমণ করেন। টেভার্নিয়ারের জীবনের শেষ দিনগুলি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। একজন প্রটেস্ট্যান্ট এর জন্য সময়টা সুবিধাজনক ছিলো না এবং সম্ভবত তিনি শেষ জীবনটা বাস্তিলে অতিবাহিত করেছেন। ১৬৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে প্যারিস ত্যাগ করেন এবং ১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দে কোপেনহেগেন থেকে ইরান যাওয়ার পথে রাশিয়া অতিক্রম করার সময় তিনি মস্কোতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  [শরীফ উদ্দীন আহমেদ]