খাদ্যনীতি

খাদ্যনীতি (Food Policy)  খাদ্যশস্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, গুদামজাতকরণ, পরিবহণ, বিতরণ এবং বিপণনের কাজে সরকার কর্তৃক গৃহীত এবং অনুসৃত পদক্ষেপ। খাদ্য মন্ত্রণালয় খাদ্যনীতির যথাযথ প্রয়োগ এবং পর্যবেক্ষণেরও দায়িত্ব পালন করে। বর্তমান খাদ্যনীতি ১৯৮৮ সালে প্রণীত হয়। এ নীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে: প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করার মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন; কৃষকদের অধিক খাদ্য ফলনে উৎসাহ প্রদান; ফসল তোলার সময় কৃষকদের নিকট থেকে ভরতুকি মূল্যে/উৎসাহব্যঞ্জক মূল্যে শস্য ক্রয়; দেশে উৎপাদিত শস্যের সুষ্ঠু সরবরাহ এবং বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ; নিম্নআয়ের ব্যক্তির কাছে খাদ্য প্রাপ্তি সহজ করা; শস্যের উৎপাদন খরচ এবং জনগণের ক্রয় ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে খাদ্যমূল্য স্থির রাখা; উৎপাদিত কিংবা অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত খাদ্যের যথাযথ সংরক্ষণ; দুর্যোগকালীন অবস্থা মোকাবেলার জন্য ‘খাদ্য মজুদ’ ব্যবস্থা অথবা দুঃসময়ে ব্যবহূত শস্য ভান্ডার গড়ে তোলা; খাদ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ; খাদ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিকে শক্তিশালী করে ক্রমান্বয়ে খাদ্যে ভরতুকি কমিয়ে আনা ইত্যাদি। এগুলি অর্জনের জন্য ২০টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখে ৩২টি নির্দেশমালা প্রস্ত্তত করা হয়। খাদ্যনীতিমালা কখনও কখনও লক্ষ্য অর্জনের জন্য নির্ভরযোগ্য কার্যক্রম গ্রহণ করারও পরামর্শ দেয়। নীতিমালার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে ধীরে ধীরে খাদ্যঘাটতি কমিয়ে আনা এবং জনপ্রতি খাদ্যগ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে প্রতিদিন তা জনপ্রতি ১৬ আউন্সে উন্নীত করা।

কৃষি মন্ত্রণালয় বার্ষিক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এবং তা খাদ্য পরিকল্পনা ও সংরক্ষণ কমিটিকে অবহিত করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দু কোটি মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচিও তৈরি করে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কৃষকদের প্রয়োজনীয়  সেচ সুবিধা দেয়। আকস্মিক বিভিন্ন দুর্বিপাকে ‘খাদ্য নিরাপত্তা’র বিষয়ে খাদ্যনীতিতে জোর দেওয়া হয়েছে। এ নীতি খাদ্য ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি আমদানিকারকদের খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনায় সীমিত কিছু ক্ষমতা দিয়েছে। তাদের শুধু গম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। খাদ্যশস্য বাজারের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণকে অসৎ ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে নিরাপদ রাখতে সরকার কর্তৃক এটি করা হয়েছে। উৎপাদনকারী এবং ভোক্তার সুলভ মূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকার ফসল তোলার সময় খাদ্য কিনে নেয় এবং প্রয়োজনের সময়ে ন্যায্যমূল্যে জনগণের নিকট তা বিক্রি করে। একটি জাতীয় কমিটি সাধারণভাবে অন্যান্য বিষয়গুলি বিবেচনায় নিয়ে এ মূল্য নির্ধারণ করে। খাদ্যনীতি যেহেতু  মাছ, মাংস,শাকসবজি,ডাল, তেল, প্রভৃতি সব ধরনের খাদ্যদ্রব্যকে তার নীতিমালার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নি, তাই এটি এখনও একটি অসম্পূর্ণ নীতিমালা বলে প্রতীয়মান হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ও ১৯৯৭ সালে ‘বাংলাদেশের খাদ্য ও পুষ্টিনীতি’ নামে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। এ নীতিমালার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের, বিশেষ করে প্রৌঢ় ব্যক্তিসহ অসহায় দরিদ্র জনগণের, পুষ্টির পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণ মাত্রায় উন্নীত করা এবং এভাবেই জীবনযাত্রার মান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা করা। স্বাভাবিকভাবেই, এ নীতিমালায় পুষ্টির প্রায় প্রত্যেকটি দিক যেমন বিভিন্ন প্রকার খাদ্য উৎপাদন, সুষম খাদ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, শস্য বহুমুখীকরণ, কৃষিজ রাসায়নিক দ্রব্য সরবরাহ, পুষ্টি শিক্ষা প্রভৃতি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরাই মূলত এ নীতিমালা মেনে চলে। এ নীতিমালা প্রয়োগের জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয় এবং এজেন্সির অংশগ্রহণ সীমিত। [এম কবিরউল্লাহ]

আরও দেখুন খাদ্যশস্য গুদামজাতকরণ; খাদ্য সংরক্ষণ; খাদ্যসামগ্রী