ক্ষারীয় মাটি

ক্ষারীয় মাটি (Alkaline Soil)  ৭.৩ এর অধিক পিএইচ (pH) মানযু্ক্ত মাটি। ক্ষারীয় শব্দটি সাধারণত পৃষ্ঠ স্তর বা শিকড় অঞ্চলের বিক্রিয়া বোঝানোর জন্য ব্যবহূত হয়, কিন্তু যে কোনো ক্ষিতিজ বা নমুনাকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্ষারত্ব তখনই সৃষ্টি হয় যখন ক্ষারক উৎপন্নকারী ধনাত্মক আয়ন, যেমন- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম ও সোডিয়াম দ্বারা তুলনামূলকভাবে অধিক মাত্রায় সম্পৃক্তি ঘটে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম কার্বনেটের উপস্থিতিও মৃত্তিকা দ্রবণে হাইড্রোজেন আয়নের উপর হাইড্রোক্সিল আয়নের আধিক্য ঘটায়। এসব অবস্থায় মাটিতে ক্ষারীয় বিক্রিয়া সম্পন্ন হয় এবং কখনো কখনো এ স্থিতিমাপের মাত্রা অনেক বেশি হয়ে থাকে। যদি সোডিয়াম কার্বনেট বিদ্যমান থাকে তবে কোনো কোনো মৃত্তিকাতে পিএইচ মান ৯ বা ১০ পর্যন্ত হতে পারে।

বাংলাদেশের চুনহীন ধূসর পললভূমি মাটি মধ্যম মাত্রার ক্ষারীয় (মৃত্তিকা পিএইচ মান ৭.৬) বিক্রিয়া প্রদর্শন করে। সাধারণত যেসব মাটির পৃষ্ঠদেশে নতুন  পলল জমা হয় সেসব মাটির পিএইচ মান সর্বাপেক্ষা বেশি হয় এবং নিচু এলাকার মাটির পিএইচ সর্বাপেক্ষা কম হয়। মানিকগঞ্জের কোনো কোনো এলাকার  পৃষ্ঠমৃত্তিকা মধ্যম মাত্রায় ক্ষারীয়। গঙ্গা কটাল পললভূমি এলাকা এবং অলবণাক্ত ও চুনহীন মৃত্তিকা অঞ্চলেও ক্ষারীয় মাটি পাওয়া যায়। ক্ষারীয় বিক্রিয়া সংবলিত মৃত্তিকা চুনহীন পলল, চুনহীন ধূসর ও গাঢ় ধূসর পললভুমি মৃত্তিকা অঞ্চলে অবস্থিত। সক্রিয় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা পললভূমির মাটি অবক্ষয়যোগ  মণিক, বিশেষ করে মাইকা দ্বারা সমৃদ্ধ। এর বিক্রিয়া মধ্যম মাত্রায় ক্ষারীয় কিন্তু চুনযুক্ত মাটির মতো নয়। গঙ্গা ও যমুনা নদীর সংযোগস্থল থেকে ভাটির দিকে অবস্থিত সক্রিয় পললভূমিতে উভয় নদীর মিশ্র পলল বিদ্যমান থাকার ফলে গড় চুনের পরিমাণ প্রায় ২-৫ শতাংশ হ্রাস পায়।

চুনের উপস্থিতির কারণে  নবীন পলল-এর বিক্রিয়া মধ্যম ক্ষারীয়, তবে এসব পলল লবণাক্তও নয় ও সক্রিকও (sodic) নয়। গাঙ্গেয় পলল চুনযুক্ত, কিন্তু  ধলেশ্বরী নদীবাহিত পলল নিরপেক্ষ থেকে ক্ষারীয় হলেও চুনহীন। গঙ্গা নদী পললভূমি মৃত্তিকার চুনময় স্তর অন্তর্মৃত্তিকাতে অধিকতর ক্ষারীয়। যমুনা পললভূমির সন্নিকটবর্তী এবং স্থানীয়ভাবে  করতোয়া নদী বরাবর অবক্ষেপিত সাম্প্রতিক পললের চুনহীন পলল স্তরীভূত বালি ও পলি দিয়ে গঠিত। চাষাবাদকৃত পৃষ্ঠমৃত্তিকা সামান্য থেকে মধ্যম অম্লীয় হতে পারে, কিন্তু অন্যান্য স্তরগুলি সাধারণত নিরপেক্ষ থেকে মধ্যম ক্ষারীয় (পিএইচ মান ৬.৮-৮.২) হলেও চুনযুক্ত নয়। অধিক প্লাবনের সময় অবক্ষেপিত যমুনার নবীন পলল স্তরগুলি চুনহীন কিন্তু বিক্রিয়ার দিক থেকে সামান্য থেকে মধ্যম ক্ষারীয়। চুনহীন গাঢ় ধূসর পললভূমি শ্রেণির মৃত্তিকা ঝিনাইদহ ও যশোর জেলার কিছু ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন এলাকাতে গরম আবহাওয়ার প্রভাবে সামান্য লবণাক্ত হয়ে ওঠে এবং কোনো কোনো এলাকার পৃষ্ঠমৃত্তিকা চরম ক্ষারীয় (পিএইচ মান ৮.৫-১০) বিক্রিয়া প্রদর্শন করে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমি এবং পুরাতন মেঘনা মোহনাজ পললভূমিতে কর্ষিত স্তর সাধারণত মৃদু অম্লীয় থেকে মধ্যম ক্ষারীয় (পিএইচ মান ৬.০-৭.৮)।

দেখা যায় যে, প্রতি সেচের পর মৃত্তিকা দ্রবণের ক্ষারত্বের মাত্রা যত বেশি হয়, সেচের পর ক্ষারত্বের বৃদ্ধি তত তাৎক্ষণিক হয়ে থাকে। মৃত্তিকা দ্রবণের পিএইচ মান ৭ থেকে ৮, এমনকি ৯ থেকে ১০-এ বৃদ্ধি  তুলা এবং সেচের ওপর নির্ভরশীল অনেক ফসলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।  [মোঃ খুরশিদ আলম]