আমিনি কমিশন ১৭৭৬

আমিনি কমিশন ১৭৭৬ যথাযথভাবে কর ধার্যের সুবিধার্থে গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ভারতের ভূ-সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি কমিশন গঠন করেন। করদাতা কৃষকদের মধ্যে নিলাম ডাকের ভিত্তিতে বিদ্যমান পাঁচসনা বন্দোবস্তের (১৭৭২-১৭৭৬) বদলে ১৭৭৭ থেকে একটি নতুন বন্দোবস্ত প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। ওয়ারেন হেস্টিংস ভূ-সম্পত্তি জরিপ (যাকে বলা হয় ‘আমিনি’) করার জন্য একটি কর কমিশন গঠন এবং পরবর্তী বন্দোবস্তের জন্য ভূমির যথাযথ কর নির্ণয়ের সুপারিশ করেন। চুক্তিভিত্তিক দুজন কর্মকর্তা এবং একজন স্থানীয় দীউয়ান সমন্বয়ে এ কমিশন গঠিত হয়। চুক্তিভিত্তিক দুই কর্মকর্তা ডেভিড অ্যান্ডারসন এবং জর্জ বোগলে কমিশনার হিসেবে এবং দীউয়ান গঙ্গাগোবিন্দ সিং পেশকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গভর্নর জেনারেল ও কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যগণ কর নির্ণয়ে একটি স্থিরমূল্য-হিসাব নির্ধারণের বিষয়ে একমত হন, যাতে নমুনামাফিক কিছু কাট-ছাঁটের পর তা স্থায়ী কর আরোপণ পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ লক্ষ্য অর্জনে কমিশনকে বাস্তবসম্মত কর্মপরামর্শ প্রণয়ন করতে বলা হয়। আমিনি কমিশন নিম্নোক্ত সুপারিশ ও মন্তব্য পেশ করে: (১) জমিদারদের অনাদায়ি কর পরিশোধে অনীহার কারণে কর মওকুফযোগ্য হবে না; (২) একটি কর বিলুপ্ত হলে আরেকটি কর সৃষ্টি হয়; ফলত কর ছাঁটাই কিংবা কর বিলোপ কোনোটাই রায়তদের জন্য সুফলদায়ক হয় না; (৩) নদী, নতুন হাট-বাজার পার্শ্ববর্তী জমিদারের হাতে বেদখল হওয়ার অজুহাতে কর হ্রাসের দাবি সমর্থনযোগ্য নয়; (৪) স্থানীয় বিষয়-আশয় সম্পর্কে সরকারি উদাসীনতার সুযোগে জমিদাররা অকল্পনীয় পরিমাণে জমিজমা আলাদা করে নিয়েছে; (5) কোম্পানির দীউয়ানির ধারণার চেয়ে কর পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

আমিনি কমিশন রিপোর্ট নিয়ে কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক হয় এবং একটি চূড়ান্ত বন্দোবস্ত প্রস্ত্তত করার আগে আরও তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য কোর্ট অব ডিরেক্টরস-এর কাছে এক বা তিন বছরের জন্য মেয়াদি বন্দোবস্ত প্রদানের সুপারিশ করা হয়। এ রিপোর্টের একটি কপি গভর্নর জেনারেলের সমর্থন ও সুপারিশসহ কোর্ট অব ডিরেক্টরস-এর কাছে পাঠানো হয়। ‘কোর্ট’ জমিদারদের সঙ্গে এক থেকে তিন বছরের একটি বন্দোবস্ত করার জন্য কলকাতা সরকারকে নির্দেশ দেয়। [সিরাজুল ইসলাম]