আদিতমারী উপজেলা

আদিতমারী উপজেলা (লালমনিরহাট জেলা)  আয়তন: ১৯৫.০৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৫১´ থেকে ২৬°০৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৭´ থেকে ৮৯°২৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে গঙ্গাচড়া উপজেলা ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা, পূর্বে লালমনিরহাট সদর উপজেলা, পশ্চিমে কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) উপজেলা।

জনসংখ্যা ২২৪৭৯৬; পুরুষ ১১২২৪৩, মহিলা ১১২৫৫৩। মুসলমান ১৮৬৫৪৭, হিন্দু ৩৮১৭৮, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ২৬ এবং অন্যান্য ৪৪।

জলাশয় ধরলা, তিস্তা ও স্বর্ণামতি নদী এবং নামুরীর বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন কার্যের সুবিধার্থে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে রংপুর কালেক্টরেট প্রতিষ্ঠা করা হয়। উক্ত কালেক্টরেট-এর অধীনে প্রতিষ্ঠিত ফুরুনবাড়ি থানা ১৮৭২ সালে কালীগঞ্জে স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮০ সালে কালীগঞ্জ থানার অংশ নিয়ে আদিতমারী থানা গঠিত হয়। ১৯৮৩ সালের ৭ নভেম্বর আদিতমারী থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৫৬ ১০২ ১৯৩৫৫ ২০৫৪৪১ ১১৫৩ ৫৮.৩ ৪৩.৮
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.৯৯ ১৯৩৫৫ ১২১০ ৫৮.৩
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কমলাবাড়ী ৫৯ ৬২৩৬ ১৪১১০ ১৩৯২৭ ৩৯.৯
দুর্গাপুর ৪১ ৮২২১ ১৪৭২৭ ১৫১৬০ ৫২.০
পলাশী ৭৭ ৬৩২০ ১৫৮৪২ ১৫৩৯৮ ৪৫.৪
ভাদাই ১০ ৫১৭৯ ১২৯১৬ ১২৯০২ ৫৮.৫
ভেলাবাড়ী ১১ ৬৫০২ ১৩৫৬৭ ১৩৬৪৪ ৪৪.৯
মহিষখোচা ৭১ ৫১৪২ ১২৪৪০ ১২৯২৬ ৩৮.৪
সাপটিবাড়ী ৮৩ ৪৬৪৪ ১২৮৮৪ ১২৮৪৮ ৪৪.০
শরপুকুর ৮৯ ৫৯৪৮ ১৫৭৫৭ ১৫৭৪৮ ৩৭.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে এ উপজেলা ৬নং সেক্টরের অধীন ছিল। ৪ এপ্রিল পাকবাহিনী আদিতমারীতে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এ সময় পাকবাহিনী বেশ সংখ্যক নিরীহ লোককে আদিতমারী রেল-স্টেশনের পূর্ব দিক লালপুলে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৬ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলার বত্রিশ হাজারী হাইস্কুল মাঠে ১টি গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন আদিতমারী উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খেতু মহাম্মদ সরকার জামে মসজিদ, শের মামুদ কুঠিয়াল জামে মসজিদ ও স্বর্ণামতি শিবাশ্রম (বটেশ্বর)।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.১%; পুরুষ ৪৮.৬%, মহিলা ৪১.৬%। কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৭, মাদ্রাসা ৩৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আদিতমারী ডিগ্রি কলেজ (১৯৯১), সাপটিবাড়ী ডিগ্রি কলেজ (১৯৯২), আদিতমারী কান্তেশ্বর বর্মণ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৮৬), মহিষখোচা ই এম স্কুল (১৯৩১), আভাদাই গিরিজা শঙ্কর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), আদিতমারী গিরিজা শংকর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), কুমড়ীরহাট এস সি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৯), সাপটিবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), ভেলাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), উত্তর গোবধা দাখিল মাদ্রাসা (১৯৮৬)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সোনালী প্রভাত, বিজয় স্মৃতি, প্রচ্ছদ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৪৩, ক্লাব ৬৪, সাংস্কৃতিক সংগঠন ২, খেলার মাঠ ১৩, সিনেমা হল ২, গ্রামীণ নাট্যদল ১২, যাত্রাপার্টি ৩, মহিলা সংগঠন ১।

দর্শনীয় স্থান খেতু মহাম্মদ সরকারের সেতু ও কুয়া।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৭.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪০%, ব্যবসা ৯.৫৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৩১%, চাকরি ৩.২৬%, শিল্প ০.৩৬%, নির্মাণ ০.৪৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২৩%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২৮% এবং অন্যান্য ৩.৮১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৪.০২%, ভূমিহীন ৩৫.৯৮%। শহরে ৬১.৮৮% এবং গ্রামে ৬৪.২৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, তামাক, আলু, ভুট্টা, সরিষা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ও আমন ধানের স্থানীয় জাত, পাট, চিনা, কাউন, বিভিন্ন জাতের ডাল।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, সুপারি, আম, লিচু, জাম্বুরা, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৮ কিমি; রেলপথ ১৭ কিমি; নৌপথ ৪ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন গরু, ঘোড়া ও মহিষের গাড়ি।

কুটিরশিল্প বিড়িশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ১১। নামুড়ির হাট, দুর্গাপুর হাট, শঠিবাড়ি হাট, ভেলাবাড়ী হাট ও কুমড়ীর হাট এবং নটকুর বান্নী মেলা, মাষানের মেলা, দশহরার মেলা ও চড়কের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   তামাক, বিড়ি, আলু, ভুট্টা, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২০.৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় উন্নতমানের সিলিকেট ও ম্যাঙ্গানিজসমৃদ্ধ পাথরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.১%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ২.৬%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৯.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৫.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র   উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ১।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা।  [তানজিমুল নয়ন]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; আদিতমারী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।