গঙ্গাচড়া উপজেলা
গঙ্গাচড়া উপজেলা (রংপুর জেলা) আয়তন: ২৬৯.৬৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৮´ থেকে ২৫°৫৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৫´ থেকে ৮৯°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) ও জলঢাকা উপজেলা, দক্ষিণে রংপুর সদর এবং কাউনিয়া উপজেলা, পূর্বে আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলা, পশ্চিমে কিশোরগঞ্জ (লালমনিরহাট) ও তারাগঞ্জ উপজেলা। শহরটি তামাক ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ।
জনসংখ্যা ২৯৭৮৬৯; পুরুষ ১৫০৩০০, মহিলা ১৪৭৫৬৯। মুসলিম ২৬৩৫০০, হিন্দু ৩৪৩০৫, খ্রিস্টান ১৭ এবং অন্যান্য ৪৭।
জলাশয় তিস্তা ও ঘাঘট প্রধান নদী এবং বড়বিল, বুল্লাই বিল, মোহসানকুরা বিল ও দোনদ্বারা বিল।
প্রশাসন গঙ্গাচড়া থানা গঠিত হয় ১৯১৭ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১০ | ৯৩ | ১২৮ | ১২৩৪৫ | ২৮৫৫২৪ | ১১০৫ | ৫৭.০ | ৪২.৬ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৫.৬৪ | ১ | ১২৩৪৫ | ২১৮৯ | ৫৭.০ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আলম বিদিতার ১৬ | ৭১৭৫ | ১৭০৮৬ | ১৭০১৯ | ৩৮.৫ | ||||
কোলকোন্দ ৬৩ | ৮৫৫৮ | ১৪১৮২ | ১৩৬২৬ | ৩৯.৭ | ||||
খলেয়া ৫২ | ৫৯৩৬ | ১৩১৯৮ | ১৩২৪৮ | ৪৪.৬ | ||||
গঙ্গাচরা ৩১ | ৬১৬০ | ১৯৮৮১ | ১৯৪০৩ | ৫৬.৬ | ||||
গজঘন্টা ৪২ | ৪৭৬১ | ১৬৫২৭ | ১৬৭৪৮ | ৪৯.০ | ||||
নোহালি ৭৭ | ৭৬৬৭ | ১২৪৩৩ | ১১৮০৩ | ৩৭.১ | ||||
বড়বিল ১৯ | ৮৫৪৩ | ২০০১৬ | ২০০৫৯ | ৪২.১ | ||||
বেতগাড়ী ২১ | ৬০২৯ | ১২৫৯৮ | ১২০৩৯ | ৩৮.০ | ||||
মরনিয়া ৮৪ | ৫১০৬ | ১৩৫১১ | ১৩২০১ | ৩১.৯ | ||||
লক্ষ্মীতরী ৭৩ | ৬৭০৩ | ১০৮৬৮ | ১০৪২৩ | ৪৭.৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কোলকোন্দা মসজিদ, বড়বিল মান্দাইলের মসজিদ, মহীপুর জমিদারবাড়ী মসজিদ, পাকুরিয়া শরীফ পীর সাহেবের মাযার, চন্দনহাটের হরিমন্দির ও ঠাকুরদহের মন্দির।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক পাকিস্তানি সৈন্য গঙ্গাচড়ায় ঢুকে এক তরুণী ও তার পিতাকে তাড়া করলে নিরুপায় পিতা ও কন্যা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান। অক্টোবর মাসে শঙ্কর দহ গ্রামের তালতলায় মুজিব বাহিনীর গেরিলাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর এক লড়াইয়ে ২জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ৫জন রাজাকার নিহত হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরীহ লোকজনের উপর আক্রমণ চালায় এবং উপজেলার তালতলা মসজিদে ঢুকে ১৭জন মুসল্লীকে হত্যা করে। ১৩ ডিসেম্বর গঙ্গাচড়া থানার ২১২জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। উপজেলার মহীপুরে ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন গঙ্গাচড়া উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩০৫, মন্দির ৪৮।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.২%; পুরুষ ৪৬.৩%, মহিলা ৪০.০%। কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৮২, মাদ্রাসা ২৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: গজঘন্টা উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় (১৯০৬), পাকুড়িয়া শরীফ দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৫৬, সিনেমা হল ২, নাট্যদল ২।
বিনোদন কেন্দ্র ভিন্ন জগৎ বিনোদন পার্ক (খলেয়াগঞ্জিপুর)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৬.০৪%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৭৮%, শিল্প ০.২৮%, ব্যবসা ৯.৩৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১৭%, চাকরি ৩.৪৩%, নির্মাণ ০.৩৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৫% এবং অন্যান্য ৩.২৯%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.৪৪%, ভুমিহীন ৪১.৫৬%। শহরে ৫৫.৭৫% এবং গ্রামে ৫৮.৫৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, তামাক, গম, আলু, আদা, ভূট্টা, বেগুন, পেঁয়াজ, পটল, মরিচ, মাশরুম, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন, মিষ্টি আলু।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২৭, গবাদিপশু ১০, হাঁস-মুরগি ১২০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১১০ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৪৩৪ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ী।
শিল্প ও কলকারখানা চালকল, করাতকল, বিড়িকারখানা, ওয়েল্ডিং প্রভৃতি।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বিড়িশিল্প।
হাটবাজার, মেলা হাটবাজার ২২। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার ও মেলা: গজঘন্টা, মহীপুর, গঙ্গাচড়া, মৌলভীবাজার, বেতগাড়ী, মন্থনা হাট, বকশীগঞ্জ, খাপড়িখাল, চৌধুরীর হাট, পাগলা পীরের বাজার পাকুড়িয়া শরীফ মেলা, মহীপুর মহররম মেলা, ধামুর চৈত্র সংক্রান্তি মেলা, মংলা তোবা চৈত্র সংক্রান্তি মেলা।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য তামাক, আলু, মরিচ, শাকসবজি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলাকাটি নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকা। ১৭৮৭ সালে তিস্তা নদীর গতিমুখ পরিবর্তনের ফলে মহীপুর জমিদারীর এক চতুর্থাংশ ভেঙ্গে যায়। সে কারণে বহু লোক ভূমিহীন হয়ে পড়ে। ১৯৬৪ সালে তিস্তার ভাঙ্গনে মরনিয়া, গজঘন্টা ও মহীপুর ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া ১৯৬৪, ১৯৬৮, ১৯৭১ এবং ১৯৭৪ সালে পরপর ছোট বড় বন্যা ও নদী ভাঙ্গনে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৯.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৪%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ২.৫%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৪১.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৩.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৫.২% পরিবারের কোন ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ২৪০।
এনজিও ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, কর্মীর হাত, ব্র্যাক, আশা, এসোড। [মো. আবদুস সাত্তার]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গঙ্গাচড়া উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।