হোসেন, তফাজ্জল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

হোসেন, তফাজ্জল (১৯১১-১৯৬৯)  সাংবাদিক, রাজনীতিক, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক। মানিক মিয়া নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। ১৯১১ সালে পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিরোজপুর হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে ১৯৩৫ সালে তিনি বি.এ পাস করেন। পিরোজপুর মহকুমা হাকিমের আদালতে সহকারী হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু। পরবর্তী সময়ে তিনি বরিশালে জেলা জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ লাভ করেন।

বরিশালে কর্মরত থাকাকালে মানিক মিয়া হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আনুকূল্য লাভ করেন এবং তাঁর পরামর্শে চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে কলকাতা যান (১৯৪৩)। সেখানে তিনি প্রাদেশিক  মুসলিম লীগ কার্যালয়ে সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। এসময় থেকেই তিনি সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪৭ সালে তিনি এ চাকরি ছেড়ে সোহরাওয়ার্দী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার পরিচালনা বোর্ডের সেক্রেটারি পদে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালের শেষের দিকে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেলে তিনি কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন। অতঃপর ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হন (১৯৪৯) এবং ১৯৫১ সালে এ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৫৩ সালে তাঁর সম্পাদনায় সাপ্তাহিক ইত্তেফাক দৈনিক ইত্তেফাকে রূপান্তরিত হয়।

তফাজ্জল হোসেন

আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনে তফাজ্জল হোসেন ও তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামরিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৯৫৯ সালে তিনি কারারুদ্ধ হন এবং এক বছর কারাভোগ করেন। সামরিক শাসন বিরোধী ছাত্র বিক্ষোভে ইন্ধন যোগাবার অভিযোগে ১৯৬২ সালে পুনরায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয়দফা আন্দোলনের প্রতি তিনি দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং ছয়দফার মুখপত্র হিসেবে ইত্তেফাক এ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৩ সালের ১৬ জুন তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হন। দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনা নিষিদ্ধ ও নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেস বাজেয়াপ্ত করা হয়। এর ফলে তাঁর প্রতিষ্ঠিত অপর দুটি পত্রিকা ঢাকা টাইমস ও পূর্বাণী বন্ধ হয়ে যায়। গণআন্দোলনের মুখে ইত্তেফাকের প্রকাশনার ওপর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হলে ১৯৬৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশিত হয়।

মানিক মিয়া ছিলেন বস্ত্তনিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিক। সংসদীয় গণতন্ত্র ও পূর্ব বাংলার আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি ইত্তেফাকের ‘রাজনৈতিক হালচাল’ ও পরবর্তী সময়ে ‘মঞ্চে নেপথ্যে’ উপসম্পাদকীয় কলামে ‘মোসাফির’ ছদ্মনামে নিয়মিত রাজনৈতিক নিবন্ধ লিখতে শুরু করেন।

ষাটের দশকে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে মানিক মিয়া ছিলেন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৬১ সালে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী পালনের বিরোধিতা করলে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির সদস্য হিসেবে শতবার্ষিকী পালনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী। ১৯৬৪ সালে ‘হযরত বাল’ (মহানবীর কথিত কেশ)-কে উপলক্ষ করে কাশ্মীরে সৃষ্ট দাঙ্গা ঢাকায় ছড়িয়ে পড়লে তিনি তা প্রতিরোধে সাহসী ভূমিকা রাখেন। তিনি ছিলেন দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি।

তফাজ্জল হোসেন ১৯৫২ সালে চীনে অনুষ্ঠিত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে আন্তর্জাতিক প্রেস ইনস্টিটিউটের পাকিস্তান শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। সরকারি উদ্যোগে গঠিত পাকিস্তান প্রেস কোর্ট অব অনার-এর সেক্রেটারি এবং পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারওয়েজ-এর পরিচালক হিসেবেও (১৯৫৬-৫৮) তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ পাকিস্তানী রাজনীতির বিশ বছর এবং নির্বাচিত ভাষণ ও নিবন্ধ। তাঁরই স্মৃতিতে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে মানিক মিয়া এভিনিউর নামকরণ করা হয়। মানিক মিয়া ১৯৬৯ সালের ১ জুন পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে মৃত্যুবরণ করেন।  [মোঃ হাফিজুর রহমান]