সুজাউদ্দীন মুহম্মদ খান

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সুজাউদ্দীন মুহম্মদ খান  বাংলার নওয়াব (১৭২৭ থেকে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত)। তিনি তাঁর শ্বশুর মুর্শিদকুলী খানের মৃত্যুর পর মুর্শিদাবাদের মসনদে আরোহণ করেন। মুর্শিদকুলী খান তাঁর দৌহিত্র  সরফরাজ খানকে (সুজাউদ্দীনের পুত্র) উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। ফলে পিতা ও পুত্রের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সৃষ্টির উপক্রম হলেও শেষ পর্যন্ত দ্বন্দ্ব এড়ানো সম্ভব হয়। সুজাউদ্দীনই ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং তাঁর সন্তান মুহম্মদ তকী ও জামাতা  মুর্শিদকুলী খান (দ্বিতীয়) কে যথাক্রমে উড়িষ্যা ও ঢাকার  নায়েব নাজিম নিযুক্ত করেন। সরফরাজ খানকে বাংলার  দীউয়ান নিয়োগ করা হয়। উড়িষ্যার দীউয়ান আলম চাঁদকে (পরবর্তীকালে রায় রায়ান) মুর্শিদাবাদের খাল্সা ভূমির দীউয়ান নিযুক্ত করা হয়।

সুজাউদ্দীন জমিদারদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের নীতি গ্রহণ করেন এবং পূর্ববর্তী শাসনামলে কারারুদ্ধ জমিদারদের মুক্ত করে দেন। যে সকল কর্মচারী রাজস্ব আদায়কালে প্রজাদের উপর নির্যাতন চালাত তাদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তিনি শাস্তির ব্যবস্থা করেন। সুজাউদ্দীন জমিদারদের কাছ থেকে দেড় কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে ফতেহ চাঁদের মাধ্যমে সমুদয় অর্থ দিলি­র রাজ কোষাগারে প্রেরণ করেন। সম্রাট মুহম্মদ শাহ তাঁর উপর খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাঁকে ‘মুতামান-ই-মুলক সুজাউদ্দৌলা আসাদ জং’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

সুজাউদ্দীন ছিলেন নিরপেক্ষ ও ন্যায়পরায়ণ শাসক। সামরিক ও বেসামরিক সকল কর্মচারীর প্রতি তিনি ছিলেন দয়ালু ও উদার।  শায়েস্তা খানএর শাসনামলের দীর্ঘকাল পর তাঁর শাসনামলেই আবার টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত। শাসনকার্যে অধীনস্থ কর্মকর্তাদের ওপর তিনি অতিমাত্রায় নির্ভর করতেন। এসব তথাকথিত বিশ্বস্ত রাজকর্মচারীগণ নওয়াবের চারিত্রিক দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে তৎপর হয়ে ওঠে। হাজী আহমদ, আলম চাঁদ ও  জগৎ শেঠ ফতেহ চাঁদের উপর প্রশাসনিক দায়ভার ন্যস্ত হয়। এসব রাজকর্মচারী তাদের দুষ্কর্মের দ্বারা নওয়াবের দুই পুত্র সরফরাজ খান ও তকী খানের পারস্পরিক সম্পর্কে ভাঙন ধরায়।

সুজাউদ্দীনের শাসনামলে বেশ কিছু প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সাধিত হয়। ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে বিহারকে বাংলা সুবাহর সাথে যুক্ত করা হয়। নওয়াব সুজাউদ্দীন প্রদেশসমূহকে চারটি ভাগে বিভক্ত করেন: (ক) পশ্চিম, উত্তর ও মধ্য বাংলার সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় বিভাগ; (খ) পূর্ব ও দক্ষিণ বাংলা, উত্তরবঙ্গের কিছু অংশ এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ে ঢাকা বিভাগ; (গ) বিহার এবং (ঘ) উড়িষ্যা বিভাগ। কেন্দ্রীয় বিভাগ উপদেষ্টামন্ডলীর সহায়তায় সরাসরি নওয়াব কর্তৃক শাসিত হতো। অন্যান্য বিভাগ একজন নায়েব নাজিম বা  নায়েব সুবাহদারের অধীনে ন্যস্ত করা হতো।  আলীবর্দী খানকে বিহার এবং সুজাউদ্দীনের জামাতা দ্বিতীয় মুর্শিদকুলী খানকে ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মুহম্মদ তকীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় মুর্শিদকুলী খানকে উড়িষ্যায় বদলি করা হয় এবং তাঁর স্থলে ঢাকার নায়েব নাজিম নিযুক্ত হন সরফরাজ খান। সরফরাজ কখনই ঢাকায় বসবাস করেন নি। তিনি তাঁর উপদেষ্টা সৈয়দ গালিব আলী খানের মাধ্যমে  ঢাকা শাসন করতেন।

সুজাউদ্দীনের শাসনামলে বাংলায় শান্তি বিরাজিত ছিল। কিছুকালের জন্য বীরভূমের আফগান জমিদার বদিউজ্জামান দেশের শান্তি বিনষ্ট করলেও আলীবর্দী ও সরফরাজ খান সম্মিলিতভাবে তাঁকে দমন করেন।  জমিদারগণ কর্তৃক আদায়কৃত আবওয়াব খাজনা প্রজাদের ওপর একটি অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নওয়াব  আবওয়াব আদায় থেকে জমিদারদের বিরত করেন।

১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দে সুজাউদ্দীনের মৃত্যু হয় এবং মুর্শিদাবাদের ফারাহ্বাগ্ বাগিচায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।  [কে.এম করিম]