নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা

Banglapedia admin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৬:৫২, ৩ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা (নারায়ণগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ১০০.৭৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৩৩´ থেকে ২৩°৪৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৬´ থেকে ৯০°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ডেমরা থানা, দক্ষিণে মুন্সিগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলা, পূর্বে বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) ও সোনারগাঁও উপজেলা, পশ্চিমে কেরানীগঞ্জ ও সিরাজদিখাঁন উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৩২৩৬০০; পুরুষ ৬৯০৬৪১, মহিলা ৬৩২৯৫৯। মুসলিম ১২৪৮০১৩, হিন্দু ৭৪৭৮৯, বৌদ্ধ ২৪৫, খ্রিস্টান ৪৬৩ এবং অন্যান্য ৯০।

জলাশয় প্রধান নদী: শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, বুড়িগঙ্গাইছামতী

প্রশাসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা গঠিত হয় ১৯৮৪ সালে। পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৭৬ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৪৪ ১০৩ ৫৪৩০৯০ ৭৮০৫১০ ১৩১৩৮ ৬৭.৭ ৫৯.২
নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১২.৬৯ ৭৫ ২৮৬৩৩০ ২২৫৬৩ ৬৮.৬
সিদ্দিরগঞ্জ পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২২.৭১ ৩৬ ২৫৬৭৬০ ১১৩০৬ ৬৬.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরূষ মহিলা
আলীরটেক ২০ ২০৮৩ ১০০৬০ ৮৬১৬ ৪৭.৬
এনায়েতনগর ৩১ ১৩৬৯ ৫০৭৪১ ৪৬৩০৮ ৬২.৮
কাশীপুর ৬৩ ১৪০৩ ৬১০১০ ৫৬৩১৬ ৫৭.০
কুতুবপুর ৭৯ ৩৬৪৭ ১৩৬৩৪২ ১২২৯২০ ৬২.৪
গোগনগর ৪৭ ৪৬২ ১৪০৭৭ ১৩৪৫৭ ৬২.২
ফতুল্লা ৩৭ ১৭৯১ ১০৮৬৬৯ ৯৭৭৫৭ ৬০.৫
বক্তাবলী ২৫ ৫৩৯১ ২৮৮৩০ ২৫৪০৭ ৩৯.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হাজীগঞ্জ দূর্গ ও শাহী মসজিদ, বিবি মরিয়মের মাযার ও মসজিদ, এনায়েতনগর মসজিদ, মিয়া শাহের মাযার,  লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির।

ঐতিহাসিক ঘটনা ১৯৪৯ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলকাতা থেকে ঢাকায় এলে নারায়ণগঞ্জের রহমতুল্লাাহ ইনস্টিটিউটে এক সভার আয়োজন করা হয়। এটা ছিল পূর্ববঙ্গের সরকার বিরোধী প্রথম সভা। ১৯৫২ সালে ভাষাআন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের অধিবাসীরা সক্রিয় ভুমিকা রেখেছে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবুরাইল পুলে (রাজাকারদের অবস্থানস্থল) মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ৭ জন রাজাকারকে হত্যা করে। ২৯ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদরে বুড়িগঙ্গার পাড়ের বক্তাবলী ডিক্রিচর এলাকায় পাকবাহিনী ১৩৯ জন নিরীহ লোককে গুলি করে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা নারায়ণগঞ্জের জেনারেল পোস্ট অফিস, লাঙ্গলবন্দ ব্রিজ, বার্মা ইস্টার্ন-এর তেলের ডিপো প্রভৃতি স্থানে অভিযান পরিচালনা করে।

বিস্তারিত দেখুন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ফকিরটোলা জামে মসজিদ, আমলাপাড়া জামে মসজিদ, নারায়ণগঞ্জ সাধুপৌলের গির্জা, ঢাকেশ্বরী মন্দির ও নাগবাড়ির মন্দির, হযরত শাহ্ ফতেহ উল্লাহ বোগদাদীর (র.) দরগাহ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬২.৭%; পুরুষ ৬৫.৩%, মহিলা ৬০.০%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১১২, কিন্ডার গার্টেন ৭০, মাদ্রাসা ২০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নারায়ণগঞ্জ কলেজ, হাজী মিছির আলী কলেজ, সানার পাড়া রওশনারা কলেজ, আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় এন্ড কলেজ, নারায়ণগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, তোলারাম সরকারি কলেজ (১৯৩৭), নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল (১৮৮৫), নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমী (১৯০৬), মর্গ্যান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১০), দেওভোগ হাজী উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৪), নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  দৈনিক: শীতলক্ষ্যা, খবরের পাতা, সচেতন, আজকের নারায়ণগঞ্জ, সোজা সাপ্টা, ডান্ডি বার্তা, দেশের আলো, ইহকাল ও যুগের চিন্তা। অবলুপ্ত পত্রিকা: সবুজ বাংলা, বার্তাবহ, গণদেশ, পরিচয়, রক্তগোলাপ, ক্রীড়া সপ্তাহ, অক্ষত পলাশ, রক্তাক্ত ফাল্গুন, চিত্র লেখা, রূপসী বাংলা, দি ইকনোমিস্টস, ভাস্কর, ঝিকিমিকি, শাপলা, প্যাপিরাস, দারুচিনি, রবিসাবর্গ, আমৃত্যু, আজীবন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৫, ক্লাব ১২, নাট্যদল ৫, সিনেমা হল ১৪, খেলার মাঠ ৩০, সাহিত্য সমিতি ৩।

দর্শনীয় স্থান ফকিরটোলা মসজিদ, চাষাড়া ঈদগা, কালীমন্দির, রাম কৃষ্ণ মিশন, ব্যাপটিস্ট চার্চ, সেন্ট পলের চার্চ, ব্রহ্মমন্দির, ড্রেজার বেইজ, মেরী এন্ডানসন ভাসমান রেস্তোঁরা।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪.২০%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১১%, শিল্প ৪.৬৭%, ব্যবসা ২৫.৩০%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৭.৬৬%, চাকরি ২৯.৭১%, নির্মাণ ৩.৪৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৯৩% এবং অন্যান্য ১৮.৮৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৪.০২%, ভূমিহীন ৩৮.৯০%। শহরে ৬৫.৯৮% এবং গ্রামে ৬২.৫৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, পাট, আখ, মসুর, সরিষা।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, কলাই, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কলা ও পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪৮.৩১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৯.৪৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৩৯.০৯ কিমি; নৌপথ ৩১ কিমি; রেলপথ ১৭ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, এ্যালুমিনিয়াম ফ্যাক্টরি, ডাইং ও নিটিং ফ্যাক্টরি, ময়দামিল, স্টিলমিল, অয়েলমিল, টেক্সটাইলমিল, জুটমিল, পেপারমিল, ইটভাটা, বিড়ি ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প হোসিয়ারি শিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, মৃৎশিল্প।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৭০, মেলা ১০। ফতুল্লা গরুর হাট, পাগলা হাট, ডিক্রিরচর হাট, বক্তাবলী হাট, দিগুবাবুর বাজার, মাছুয়া বাজার, কালীর বাজার, মাসদাইর বাজার, হাজীগঞ্জ বাজার, কাশিপুর বাংলা বাজার, বেও-বাজার, খানপুর বাজার, সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এবং দেওভোগ লক্ষ্মী নারায়ণ আখড়ার মেলা ও ফতুল্লার বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৯৭.২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পাটজাত দ্রব্য, তৈরি পোশাক।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৬৫.৫%, ট্যাপ ৩১.৪% এবং অন্যান্য ৩.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৯০.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৯.১% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ০.৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, ক্লিনিক ২৬, অন্যান্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৮, ইপিআই কেন্দ্র ৬১।

এনজিও আশা, ব্র্যাক, প্রশিকা, মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, আত্মকর্মসংস্থান উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ মহিলা সংঘ। [রুহুল আমীন প্রধান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।