বুড়িগঙ্গা নদী

বুড়িগঙ্গা নদী (Buriganga River)  ঢাকা শহরের দক্ষিণ এবং পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত জোয়ারভাটা প্রভাবিত একটি নদী। মুগলরা এই নদীটির জোয়ারভাটার রূপ দেখে বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়েছিল। নদীটির নামকরণ বুড়িগঙ্গা করার পেছনে একটি সনাতনী কাহিনী রয়েছে। প্রাচীনকালে গঙ্গা নদীর একটি প্রবাহ ধলেশ্বরীর মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে পতিত হতো। ধীরে ধীরে এই প্রবাহটি তার গতিপথ পরিবর্তন করার ফলে একসময় গঙ্গার সঙ্গে তার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই বিচ্ছিন্ন প্রবাহটি বুড়িগঙ্গা নামে অভিহিত হয়।

সাভারের দক্ষিণে ধলেশ্বরী নদী থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর উদ্ভব। নদীটির গড় গভীরতা ও প্রশস্ততা যথাক্রমে ১০ মিটার ও ৪০০ মিটার এবং মোট দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার। ঢাকা শহরের কামরাঙ্গীর চরের কাছে তুরাগ নদী বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বুড়িগঙ্গার প্রধান প্রবাহটি তুরাগ নদী থেকেই আসে। বুড়িগঙ্গা মুন্সিগঞ্জে ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিলিত হয়। ছাগলাকান্দির কাছে বুড়িগঙ্গার উজান অঞ্চল পলিভরাটের মাধ্যমে বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং শুধুমাত্র বন্যার সময় প্রবাহ লাভ করে। বুড়িগঙ্গার ভাটি অঞ্চল সারাবছরই নাব্য থাকে। ধলেশ্বরী নদীর গতি-প্রকৃতির উপর নির্ভর করে ভাটি অঞ্চলে বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী মিলনস্থানের পরিবর্তন ঘটে। বর্তমানে এই মিলনস্থল ফতুল্লা থেকে ৩.২২ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থিত। ঢাকা শহরে ভূ-পৃষ্ঠে অথবা ভূগর্ভের অতি স্বল্প গভীরতায় ক্ষয়রোধকারী মধুপুর কর্দমশিলা পাওয়া যায়, ফলে বুড়িগঙ্গা নদীর গতিপ্রবাহ ঢাকা শহরে খুবই সুস্থিত।

ঢাকা শহরের জন্য বুড়িগঙ্গা নদী অর্থনৈতিকভাবেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই নদী দিয়ে লঞ্চ এবং দেশী নৌকা চলাচল করতে পারে। তবে শুকনা মৌসুমে এই নদী দিয়ে বড় বড় স্টিমার চলাচল করতে পারে না। এই নদীর উপর দিয়ে ১৯৮৯ সালে ‘বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু’ নামে একটি সড়ক সেতু নির্মিত হয়েছে। এই সেতুর উপর দিয়ে পথচারী পারাপারও সম্ভব।  [সিফাতুল কাদের চৌধুরী]

মানচিত্রের জন্য দেখুন ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীপ্রণালী