দিহার

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৪২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

দিহার পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার দ্বারকেশ্বর নদীর উত্তর তীরে আবিষ্কৃত চারটি আদি ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে একটি। যদিও নব্যপ্রস্তর-যুগের কিছু হাতিয়ার স্থানটিতে পাওয়া গেছে, কিন্তু তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নাতীত নয়। একটি সুরক্ষিত টিবির খনন থেকে প্রমাণিত হয় যে, দিহারে মানববসতি স্থাপন দ্বারকেশ্বর-দামোদর উপত্যকার তাম্র-প্রস্তর প্রযুক্তির সূচনার সমকালীন। খনন কাজের ফলে প্রাপ্ত দ্রব্যসামগ্রী এবং এদের কোনো কোনোটির রেডিও কার্বন পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়কাল এ ধারণা প্রদান করে যে, খ্রিস্টপূর্ব এক হাজার বছরের মধ্যে দিহারের তাম্রযুগের মানুষেরা দ্বারকেশ্বরের জলপ্লাবিত পুরাতন পলিভূমিতে বসতি স্থাপন করেছিল এবং তাদের জীবিকা ছিল প্রধানত কৃষি। ঠাসা চুনসহ মাটির মেঝে এবং টেরাকোটা প্রলেপ ও খুঁটির উপর চালা দিয়ে তারা আদিম বাড়িঘর তৈরি করত। তাদের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য অরঞ্জিত ও রঞ্জিত লাল-কালো মৃৎপাত্র, তামার দ্রব্যাদি, মাইক্রোলিথ্স, জপমালার গুটিকা, এবং হাড়ের তৈরি প্রচুর যন্ত্রপাতি যেমন, গাঁইতি, চওড়া এবং সরু প্রান্তসহ বাটালি, মসৃণ করার যন্ত্র, সুচ ও তুরপুন-এর মাঝে বিধৃত। দিহারের অধিবাসীগণ বস্ত্তর মিশ্রণ পদ্ধতির প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছিল এবং কালক্রমে তারা ব্রোঞ্জ নির্মাণের কৌশল অর্জন করে।

এ বসতি ঐতিহাসিক যুগের প্রথম পর্যায়ে লৌহ এবং ঢালাই তাম্রমুদ্রা প্রচলিত হওয়ার সময় পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। লৌহের প্রবর্তন সত্ত্বেও এ যুগে লাল-কালো ক্যালকোলিথিক মৃৎপাত্রের ধারা অব্যাহত থাকতে দেখা যায়। পূর্বভারতেও অনুরূপ দৃষ্টান্ত বিরল নয়। এ প্রসঙ্গে বিহারের চিরান্দ ও সোনপুর এবং পশ্চিমবঙ্গের মহিষদল ও তুলসিপাড়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বেড়া দেওয়া বৃক্ষ এবং হাতির প্রতীক উৎকীর্ণ মুদ্রাসমূহ গঠন ও নকশার দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের চন্দ্রকেতুগড় এবং মঙ্গলকোটে প্রাপ্ত মুদ্রাসমূহ থেকে ভিন্ন নয়। আর্কিও মেট্রিকাল গবেষণায় দেখা যায় যে, দিহারের অধিবাসীগণ মুদ্রা প্রস্ত্ততের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ সংমিশ্রণের জন্য তামার সাথে টিন ও সীসা মিশ্রিত করে গলনাংক হ্রাস করত। এ অঞ্চলে প্রাপ্ত অল্প কয়েকটি তাম্র খনিই দিহারের জন্য ধাতু সরবরাহের প্রধান উৎস ছিল। লৌহনির্মিত যন্ত্রপাতির মধ্যে পেরেক, ছোরা এবং তলোয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঐতিহাসিক যুগের প্রথম পর্বে চীনা মাটির দ্রব্যাদি সাদামাটা বা চিত্রিত ছিল। এগুলির মধ্যে ছিল সুহ্ম-কুষাণ বাটি, সংরক্ষণ কুজো এবং অগভীর পাত্র প্রভৃতি। লক্ষণীয় যে, এ স্থানে কোনো উত্তর ভারতীয় মৃৎপাত্র পাওয়া যায় নি। এ যুগের প্রাপ্ত অন্যান্য দ্রব্যাদির মধ্যে কয়েকটি পোড়ামাটির দ্রব্য এবং মূল্যবান ও আধা মূল্যবান পাথরের বিপুলসংখ্যক জপমালার গুটিকা রয়েছে।

ঐতিহাসিক যুগের প্রথম পর্বের পরে অঞ্চলটিতে আর তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ক্রিয়াকলাপ লক্ষ করা যায় না। সর্বপ্রাচীন কালের শেষভাগ থেকে মধ্যযুগে উত্তরণের সময়কালে শৈলেশ্বর ও সন্ধেশ্বর-এর জোড়া শিব মন্দিরের অধীনে একটি বড় শৈবকেন্দ্র রূপে দিহার বিকাশলাভ করে (আনু. চৌদ্দ শতক)।

গ্রামটি এখনও এর ধর্মীয় গুরুত্ব ধরে রেখেছে। ভগবান শিবের সম্মানে বাংলা চৈত্র মাসে এখানে একটি বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দূর-দূরান্তর ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক ভক্ত সমবেত হয়।  [দীপকরঞ্জন দাস]

গ্রন্থপঞ্জি  Anil Chandra Pal, ‘Dihar: A Chalcolithic Site’, Pratna-Samiksha, I, 1992.