ত্রিপুরা কৃষক সমিতি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৩৩, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ত্রিপুরা কৃষক সমিতি উনিশ শতকের তিরিশের দশকে ত্রিপুরায় (বর্তমানের বৃহত্তর কুমিল্লা) বিশেষভাবে সংগঠিত কৃষক সংগঠন।  বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল এর সদস্য মৌলভী এমদাদুল হক ১৯১৯ সালে এটি গঠন করেন। শুরুতে গ্রামীণ সমবায়কে জোরদার করার ফোরাম হিসেবে এ সমিতি গঠিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত এটি বাংলার প্রাদেশিক কংগ্রেসের স্থানীয় বামপন্থীদের দ্বারা পরিচালিত আমূল সংস্কারের পক্ষপাতী সংগঠনে পরিণত হয়।  মহামন্দার (১৯২৯-৩৫) সময়টা ছিল কৃষকদের জন্য অতীব দুর্দশার দিন। ব্রিটিশ-বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত মুখলেসুর রহমান, কামিনীকুমার দত্ত ও আবদুল মালেকের নেতৃত্বে সমিতিটি পুনর্গঠিত হয়। বামপন্থী ও কুমিল্লার উকিল সম্প্রদায়ের একজন নামজাদা সদস্য কামিনীকুমার দত্ত ছিলেন সমিতির প্রধান সংগঠক, অর্থের যোগানদার ও তাত্ত্বিক। এর রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক ভিত্তি প্রশস্ত করার উদ্দেশ্যে ১৯৩৬ সালে সমিতির পুনঃনামকরণ হয় ‘কৃষক ও শ্রমিক সমিতি’। কিন্তু নামকরণের পরিবর্তন সত্ত্বেও এর সমর্থকদের নিকট সমিতিটি সব সময় ত্রিপুরা কৃষক সমিতি নামেই পরিচিত ছিল। দলটির নামের ঈষৎ পরিবর্তন এটিকে আন্তঃজেলা দলে পরিণত করেনি। কিন্তু ত্রিপুরায় দলটি এত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে, ১৯৩৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে ত্রিপুরা জেলার জন্য নির্ধারিত সাতটি আসনের সবকটিতেই সমিতি তার নিজস্ব প্রার্থী দাঁড় করায় এবং পাঁচটিতে জয়লাভ করে। তাঁরা কংগ্রেস, মুসলিম লীগকৃষক প্রজা পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অভিজাত প্রার্থীদের অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে।

ওই সময়কার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে সমিতিটিতে কম্যুনিস্টদের প্রভাব ক্ষীণ হয়ে আসে। ক্রমে ক্রমে সমিতিটি দলের অভ্যন্তরস্থ আমূল সংস্কারের পক্ষপাতী ও মধ্যপন্থীদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। মুসলিমলীগ সহ সকল বৃহৎ দল সমিতিটিকে তাদের নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার চেষ্টা চালায়। আমূল সংস্কারের পক্ষপাতী অংশের নেতৃত্বে ছিলেন ইয়াকুব আলী এবং মধ্যপন্থীদের নেতৃত্ব দেন আশরাফউদ্দীন চৌধুরী। বিশ শতকের চল্লিশের দশকে সাম্প্রদায়িকতা ও মুসলিম জাতীয়তাবাদের উন্মেষের ফলে ত্রিপুরা কৃষক সমিতি অত্যধিকভাবে পড়ন্ত অবস্থায় পতিত হয় এবং বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যায়। একদিন ত্রিপুরাকে সমিতির দুর্গ বলে মনে করা হতো, কিন্তু ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগের প্রার্থীরা সেখানকার সবকটি আসন দখল করে। সংগঠনটি এতই অলীকরূপ ধারণ করে যে, বাংলার উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকের জেলাগুলিতে কম্যুনিস্টদের নেতৃত্বে তেভাগা আন্দোলন (১৯৪৬-৪৭) নামে যে মহান ও ব্যাপক আন্দোলন পরিচালিত হয়, তাতে ত্রিপুরা কৃষক সমিতির কার্যত কোনো অংশগ্রহণই ছিল না।  [সিরাজুল ইসলাম]