কামতা-কামতাপুর

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৩২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কামতা-কামতাপুর  তেরো শতকে স্থাপিত একটি রাজ্য। তবে এটি ইতিহাসে প্রসিদ্ধতা পায় ষোল শতক থেকে খেন রাজবংশের জনৈক নীলধ্বজের সময়ে। মনে করা হয়, তিনি সম্ভবত ধরলা নদীর তীরে অবস্থিত তার রাজধানী কামতানগর (কামতাপুর) থেকে শাসন পরিচালনা করতেন। ১৮২৩ সালে রচিত গোসাঁই মঙ্গল-এ উল্লেখ করা হয়েছে যে, সামান্য পরিবার থেকে আগত কান্তেশ্বর (কান্তা-র রাজা = কামদা বা কামাক্ষা) রাজা হওয়ার পর দেবী কান্তেশ্বরী বা কামতেশ্বরী -এর (চন্ডী, ভবানী বা গোসাঁই নামেও পরিচিত) নামানুসারে কামতাপুর শহরটি প্রতিষ্ঠা করেন। নীলধ্বজকে গোসাঁই মঙ্গল-এর কান্তেশ্বর-এর সাথে অভিন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। পি.এন বিদ্যাবিনোদ কামতাকে কামারূ-এর (কামা > কামদ > কামতা > কামরূপ) সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এখন এটি প্রতিষ্ঠিত যে, এ দুটি নাম বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থান হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে। সম্ভবত মুসলমান ঐতিহাসিকগণ কামরূপের ‘প’টি ফেলে দিয়ে কামারূ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তদুপরি, মিনহাজ যখন তবকাত রচনা করেন, তখন কামতা বা কামতাপুর ছিল সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞাত এবং তিনি শুধু ‘কামারূদ’ লিখেছেন, কামরূপ-এর জায়গায় ‘কামতা’ লিখেন নি। ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দে হোসেন শাহ কামতা রাজ্য আক্রমণ করলে খেন রাজবংশের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং তিনি ‘কামরূপ-কামতা-জাজনগর-উড়িষ্যা’র বিজেতা’ উপাধি ধারণ করেন। কথিত আছে যে, তিনি কামতাপুর ধ্বংস করার পর দেশটির পূর্বেদিকে বড়নদী পর্যন্ত পদানত করেছিলেন এবং এ বিজয়কে স্মরণীয় করার জন্য মালদায় একটি বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন।

কিন্তু কামতায় হোসেন শাহের অধিকার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বিশ্বসিংহের প্রতিষ্ঠিত কোচবিহার সাম্রাজ্যের উত্থানের মাধ্যমে এখানকার ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। দরং রাজবংশাবলি অনুসারে কোচ উপজাতির হরিয়া মন্ডলের পুত্র বিশ্বসিংহ করতোয়া থেকে বড়নদী পর্যন্ত এলাকার অধিপতি হয়ে বসেন। তিনি নিজেও, অনেকটা দেবী কামতেশ্বরী’র নামানুকরণে, নিজেকে কামতেশ্বর হিসেবে অভিহিত করেন (কামতার রাজা) এবং তার রাজধানী ছিল কামতানগর।

বিশ্বসিংহের উত্তরসূরি নারায়ণও ব্যাপকভাবে রাজ্য বিস্তারে সক্ষম হন এবং কামতা রাজ্যকে সুদৃঢ় করেন। তবে তিনি কামতেশ্বর উপাধিটি ধারণ করেন নি। এখানে উল্লেখ্য যে, বুকানন হ্যামিল্টন কামতাপুর ভ্রমণ করেন এবং এ স্থানের একটি সুন্দর বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। তাঁর বিবরণ অনুযায়ী, কামতাপুর তিন দিক দিয়ে ২০ থেকে ৪০ ফুট উঁচু মাটির ঢিবি দ্বারা সুরক্ষিত ছিল। উল্লেখ্য যে, এস.পি ওটা-এর নেতৃত্বে কামতাপুরের এ ঢিবিতে ১৯৯৭ থেকে প্রায় তিন বৎসরকাল প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কার্য চলেছে এবং এ পর্যন্ত যে সব দ্রব্য পাওয়া গেছে সেগুলি মোটামুটিভাবে দশ শতকের।  [ইছামউদ্দীন সরকার]