সিরাজী, ইসমাইল হোসেন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

০৬:২৪, ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

সিরাজী, ইসমাইল হোসেন (১৮৮০-১৯৩১) লেখক, বাগ্মী এবং কৃষক নেতা। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন (এ কারণেই তিনি তাঁর নামের সঙ্গে ‘সিরাজী’ উপাধি যুক্ত করেন)। পিতা আব্দুল করিম খন্দকার (১৮৫৬-১৯২৪) ইউনানি (ভেষজ ঔষধ) চিকিৎসক ছিলেন। আর্থিকভাবে তিনি তেমন সচ্ছল ছিলেন না। তাই যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সিরাজীর কলেজে পড়া সম্ভব হয় নি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলেও তিনি মেধা চর্চা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। সিরাজী লেখালেখি করে এবং সভা সমিতিতে বক্তৃতা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর লেখা ও বক্তৃতার প্রধান বিষয়বস্ত্ত ছিল বাংলার অনগ্রসর মুসলিম সমাজকে জাগিয়ে তোলা। বাগ্মী হিসেবে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। মুসলমানদের স্বার্থের পক্ষে কথা বললেও তিনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, সম্পদের সুষম বন্টনের মধ্যেই হিন্দু-মুসলমানের সৌহার্দ্য নির্ভর করছে।

ইসমাইল হোসেন সিরাজী একই সাথে বেশ কিছু সংগঠন ও দলের সদস্য ছিলেন, যেমন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা, জামিয়াত-ই-উলামা-ই-হিন্দ, স্বরাজ পার্টি ও কৃষক সমিতি। শিবলী নোমানী (১৮৫৭-১৯১৪) ও মুহম্মদ ইকবালের (১৮৭৬-১৯৩৮) প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছিল সিরাজীর ওপর। তাঁদের মতো তিনিও অনুভব করেছিলেন যে ধর্মীয় ও সেক্যুলার চিন্তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একদিকে যেমন ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলা সম্ভব, অন্য দিকে তেমনি সম্ভব অবনতিশীল হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উন্নয়ন।

সমসাময়িক পত্রিকা আল-এসলাম, ইসলাম প্রচারক, প্রবাসী, প্রচারক, কোহিনূর, সোলতান, মোহাম্মদী, সওগাত, নবযুগ ও নবনূর প্রভৃতিতে সিরাজীর লেখা প্রকাশিত হতো। তাঁর অধিকাংশ লেখাতেই ইসলামী ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকারকে উদ্দীপ্ত করে তোলার প্রয়াস ছিল। তিনি আধুনিক শিক্ষা ও সত্যিকার ইসলামী শিক্ষার পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী সিরাজগঞ্জে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি জমিদার ও মহাজন বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের সংগঠিত করেন।

ইসমাইল হোসেন সিরাজীর কাব্য গ্রন্থগুলি হচ্ছে অনল প্রবাহ (১৯০০), আকাঙ্ক্ষা (১৯০৬), উচ্ছ্বাস (১৯০৭), উদ্বোধন (১৯০৭), নব উদ্দীপনা (১৯০৭), স্পেন বিজয় কাব্য (১৯১৪), সঙ্গীত সঞ্জীবনী (১৯১৬), প্রেমাঞ্জলি (১৯১৬)। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হচ্ছে রায়নন্দিনী (১৯১৫), তারাবাঈ (১৯১৬), ফিরোজা বেগম (১৯১৮) ও নূরুদ্দীন (১৯১৯)। [রাণা রাজ্জাক]

@@ ১ নং লাইন: / ১ নং লাইন: @@
 [[Category:বাংলাপিডিয়া]]
-'''সিরাজী, ইসমাইল হোসেন '''(১৮৮০-১৯৩১)'''  '''লেখক, বাগ্মী এবং কৃষক নেতা। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন (এ কারণেই তিনি তাঁর নামের সঙ্গে ‘সিরাজী’ উপাধি যুক্ত করেন)। পিতা আব্দুল করিম খন্দকার (১৮৫৬-১৯২৪) ইউনানি (ভেষজ ঔষধ) চিকিৎসক ছিলেন। আর্থিকভাবে তিনি তেমন সচ্ছল ছিলেন না। তাই যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সিরাজীর কলেজে পড়া সম্ভব হয় নি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলেও তিনি মেধা চর্চা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। সিরাজী লেখালেখি করে এবং সভা সমিতিতে বক্তৃতা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর লেখা ও বক্তৃতার প্রধান বিষয়বস্ত্ত ছিল বাংলার অনগ্রসর মুসলিম সমাজকে জাগিয়ে তোলা। বাগ্মী হিসেবে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। মুসলমানদের স্বার্থের পক্ষে কথা বললেও তিনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, সম্পদের সুষম বন্টনের মধ্যেই হিন্দু-মুসলমানের সৌহার্দ্য নির্ভর করছে।
+'''সিরাজী, ইসমাইল হোসেন''' (১৮৮০-১৯৩১)  লেখক, বাগ্মী এবং কৃষক নেতা। তিনি সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন (এ কারণেই তিনি তাঁর নামের সঙ্গে ‘সিরাজী’ উপাধি যুক্ত করেন)। পিতা আব্দুল করিম খন্দকার (১৮৫৬-১৯২৪) ইউনানি (ভেষজ ঔষধ) চিকিৎসক ছিলেন। আর্থিকভাবে তিনি তেমন সচ্ছল ছিলেন না। তাই যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও সিরাজীর কলেজে পড়া সম্ভব হয় নি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলেও তিনি মেধা চর্চা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। সিরাজী লেখালেখি করে এবং সভা সমিতিতে বক্তৃতা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাঁর লেখা ও বক্তৃতার প্রধান বিষয়বস্ত্ত ছিল বাংলার অনগ্রসর মুসলিম সমাজকে জাগিয়ে তোলা। বাগ্মী হিসেবে তিনি যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। মুসলমানদের স্বার্থের পক্ষে কথা বললেও তিনি সাম্প্রদায়িক ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, সম্পদের সুষম বন্টনের মধ্যেই হিন্দু-মুসলমানের সৌহার্দ্য নির্ভর করছে।
-ইসমাইল হোসেন সিরাজী একই সাথে বেশ কিছু সংগঠন ও দলের সদস্য ছিলেন, যেমন  [[ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস|ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস]],  [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]],  [[আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা|আঞ্জুমান]][[আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা|-ই]][[আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা|-উলামা]][[আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা|-ই]][[আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা|-বাঙ্গালা]], জামিয়াত-ই-উলামা-ই-হিন্দ, স্বরাজ পার্টি ও কৃষক সমিতি। শিবলী নোমানী (১৮৫৭-১৯১৪) ও মুহম্মদ ইকবালের (১৮৭৬-১৯৩৮) প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছিল সিরাজীর ওপর। তাঁদের মতো তিনিও অনুভব করেছিলেন যে ধর্মীয় ও সেক্যুলার চিন্তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একদিকে যেমন ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলা সম্ভব, অন্য দিকে তেমনি সম্ভব অবনতিশীল হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উন্নয়ন।
+[[Image:ShirajiIsmailHossain.jpg|thumb|400px|ইসমাইল হোসেন সিরাজী]]
+ইসমাইল হোসেন সিরাজী একই সাথে বেশ কিছু সংগঠন ও দলের সদস্য ছিলেন, যেমন  [[ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস|ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস]],  [[মুসলিম লীগ|মুসলিম লীগ]],  [[আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা|আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা]], জামিয়াত-ই-উলামা-ই-হিন্দ, স্বরাজ পার্টি ও কৃষক সমিতি। শিবলী নোমানী (১৮৫৭-১৯১৪) ও মুহম্মদ ইকবালের (১৮৭৬-১৯৩৮) প্রভাব প্রতিফলিত হয়েছিল সিরাজীর ওপর। তাঁদের মতো তিনিও অনুভব করেছিলেন যে ধর্মীয় ও সেক্যুলার চিন্তার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে একদিকে যেমন ভারতীয় মুসলমান সম্প্রদায়কে জাগিয়ে তোলা সম্ভব, অন্য দিকে তেমনি সম্ভব অবনতিশীল হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উন্নয়ন।
 সমসাময়িক পত্রিকা আল-এসলাম, ইসলাম প্রচারক,  [[প্রবাসী|প্রবাসী]], প্রচারক, কোহিনূর, সোলতান, মোহাম্মদী,  [[সওগাত|সওগাত]],  [[নবযুগ|নবযুগ]] ও নবনূর প্রভৃতিতে সিরাজীর লেখা প্রকাশিত হতো। তাঁর অধিকাংশ লেখাতেই ইসলামী ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও উত্তরাধিকারকে উদ্দীপ্ত করে তোলার প্রয়াস ছিল। তিনি আধুনিক শিক্ষা ও সত্যিকার ইসলামী শিক্ষার পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী সিরাজগঞ্জে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি জমিদার ও মহাজন বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের সংগঠিত করেন।
-[[Image:ShirajiIsmailHossain.jpg|thumb|400px|ইসমাইল হোসেন সিরাজী]]
 ইসমাইল হোসেন সিরাজীর কাব্য গ্রন্থগুলি হচ্ছে অনল প্রবাহ (১৯০০), আকাঙ্ক্ষা (১৯০৬), উচ্ছ্বাস (১৯০৭), উদ্বোধন (১৯০৭), নব উদ্দীপনা (১৯০৭), স্পেন বিজয় কাব্য (১৯১৪), সঙ্গীত সঞ্জীবনী (১৯১৬), প্রেমাঞ্জলি (১৯১৬)। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হচ্ছে রায়নন্দিনী (১৯১৫), তারাবাঈ (১৯১৬), ফিরোজা বেগম (১৯১৮) ও নূরুদ্দীন (১৯১৯)।  [রাণা রাজ্জাক]