শাহ নিয়ামতউল্লাহ মসজিদ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

শাহ নিয়ামতউল্লাহ মসজিদ  তাহখানা কমপ্লেক্সের টিকে থাকা তিনটি নিদর্শনের মধ্যে একটি। ধারণা করা হয় সুবাহদার শাহ সুজা (১৬৩৯-১৬৬০ খ্রি) সুফি-সাধক শাহ নিয়ামতউল্লাহ ওয়ালী (রঃ) (২)-এর সম্মানে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদের নিকটবর্তী একটি সমাধিতে এই সুফি-সাধক সমাহিত আছেন। ছোট সোনা মসজিদের উত্তর-পশ্চিমে একটি বড় দিঘির পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত। কমপ্লেক্সটিতে যাতায়াতের জন্য বর্তমানে একটি পাকা রাস্তা আছে যা ছোট সোনা-কোতোয়ালী সড়ক থেকে উদ্ভূত।

ইটের তৈরি মসজিদটি একটি নিচু খিলানকৃত প্রাচীর ঘেরা প্রাঙ্গণের পশ্চিম প্রান্তে স্থাপিত। প্রাচীরের পূর্ব দিকে একটি সাধারণ মানের প্রবেশদ্বার রয়েছে। বাইরের দিকে মসজিদটির পরিমাপ ১৯.৮১ মি × ৭.৬২ মি। মসজিদের চার কোণের বুরুজগুলি ভবনের কোণগুলিকে দৃঢ়তা প্রদান করে অনুভূমিক প্যারাপেট ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা উপরে উঠে গেছে। বুরুজগুলি নিরেট বন্ধনীযুক্ত ছত্রী দ্বারা আচ্ছাদিত ও কলস শীর্ষ চূড়া শোভিত।

ভুমি নকশা, শাহ নিয়ামতউল্লাহ মসজিদ

বুরুজগুলি প্যারাপেট পর্যন্ত অষ্টভুজাকার এবং এরপর গোলাকার হয়ে উপরে উঠে গেছে। পূর্ব দেওয়ালে তিনটি সামান্য খাড়া চতুষ্কেন্দ্রিক খাঁজযুক্ত খিলানপথ রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে একটি করে খিলানপথ বর্তমান। কেন্দ্রীয় খিলানপথটি পার্শ্ববর্তী খিলান দুটি অপেক্ষা বড় এবং সামনের দিকে সামান্য অভিক্ষেপের কারণে ইওয়ানের ন্যায় ফাসাদের সৃষ্টি হয়েছে।

দুটি আড়াআড়ি খিলান আয়তাকার মসজিদ অভ্যন্তরকে তিনটি সমান বর্গাকার ‘বে’তে বিভক্ত করেছে। প্রতিটি ‘বে’ উপরে সামান্য কন্দাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত। আড়াআড়ি খিলানদুটি ও এদের কোণের ত্রিভুজাকৃতি পেন্ডেন্টিভ তিনটি গম্বুজের ভার বহন করছে। গোলাকার ড্রামের উপর স্থাপিত গম্বুজগুলির শীর্ষ পদ্ম ও কলস শোভিত।

শাহ নিয়ামতউল্লাহ মসজিদ

#পূর্ব দেওয়ালের খিলানপথ বরাবর কিবলা দেওয়ালে রয়েছে তিনটি মিহরাব। অষ্টভুজাকৃতির কেন্দ্রীয় মিহরাবটি পার্শ্ববর্তী মিহরাব কুলুঙ্গিদ্বয় অপেক্ষা বড় এবং সামনের দিকে সামান্য অভিক্ষিপ্ত আয়তাকার কাঠামোর মধ্যে ন্যস্ত। কেন্দ্রীয় মিহরাব ও কেন্দ্রীয় খিলানপথের অভিক্ষিপ্ত আয়তাকার কাঠামোদ্বয় উভয়ই অনুভূমিক প্যারাপেট ছাড়িয়ে উপরে উঠে গেছে।

সমস্ত ভবনটি পলেস্তারা দ্বারা আবৃত। পূর্ব ফাসাদটি খিলান কুলুঙ্গি প্যানেল দ্বারা জাঁকজমকভাবে সজ্জিত। প্যারাপেটগুলি সারিবদ্ধ মারলোন নকশায় অলঙ্কৃত। গম্বুজ অভ্যন্তরে গোলাকার ড্রামের ভিত্তিটি রোসেট শীর্ষ সম্বলিত ফ্রীজ নকশায় অলঙ্কৃত।


মসজিদ অভ্যন্তরে চারদিকের দেওয়াল আয়তাকার ও বর্গাকার প্যানেল নকশায় শোভিত। মিহরাব কুলুঙ্গি ছাড়াও মসজিদ অভ্যন্তরে বাড়তি কিছু কুলুঙ্গি রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবের উত্তর দিকে অবস্থিত এরকমই একটি কুলুঙ্গি অস্বাভাবিকভাবে উঁচু ও প্রশস্ত। তিনধাপ বিশিষ্ট মিম্বার (pulpit) সম্বলিত কুলুঙ্গিটির শীর্ষ অর্ধ-গম্বুজ দ্বারা খিলানকৃত। অর্ধ-গম্বুজ শীর্ষটি মুকারনা শৈলীতে অসাধারণভাবে অলঙ্কৃত। ড্রামের ঠিক নিচে ত্রিভুজাকৃতির পেন্ডেন্টিভগুলি ও কেন্দ্রীয় মিহরাবের অর্ধ-গম্বুজ আচ্ছাদনের শীর্ষ স্টাকো (stucco) নকশায় শোভিত।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বেশ কয়েকবার সংস্কারের বদৌলতে মসজিদটি বর্তমানে বেশ ভাল অবস্থায় বিদ্যমান। এর দুটি ফারসি বৈশিষ্ট্যের জন্য বাংলার স্থাপত্য শিল্পে মসজিদটি বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। বৈশিষ্ট্যগুলি হলো এর গম্বুজের কন্দাকার অবয়ব ও অপূর্ব মুকারনা নকশা।  [এম.এ বারি]