রূপবান মুড়া

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:৪১, ২১ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (fix: tag)

রূপবান মুড়া  ময়নামতীর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল। কুমিল্লা-কালীর বাজার সড়কের দক্ষিণে বর্তমান বার্ড (Bangladesh Academy for Rural Development) এবং বি.জি.বি (Border Guard Bangladesh) স্থাপনার মাঝখানে একটি টিলার উপর এ মুড়া অবস্থিত। খননকার্যের পর এখানে মাঝারি আকারের (পূর্ব-পশ্চিমে ২৮.২ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ২৮ মিটার) প্রায় ক্রুশাকৃতি একটি আকর্ষণীয় সমাধিমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে। এর সাথে আরও পাওয়া গেছে অষ্টাকোণাকৃতি সূতপ এবং বর্গাকৃতির ভিতের উপর আর একটি স্তূপসহ বেশ সংখ্যক সহায়ক কাঠামোসমূহ। আয়তাকার স্তূপ অঙ্গনের মধ্যে প্রাচীর দেওয়াল এগুলিকে বেষ্টন করে রেখেছে। প্রথানুযায়ী পূর্বদিকে প্রবেশপথ আছে এবং এর সম্মুখে আছে মঠের প্রবেশদ্বার। গভীর খননকার্যের ফলে দেখা যায় যে, এর নির্মাণ, সংস্কার ও পুনঃনির্মাণের তিনটি স্তর আছে। প্রাচীনতম স্তরটি ছিল ছয়-সাত শতকে। ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এ প্রত্নস্থলের সর্বশেষ স্তরের (দশ-এগারো শতক) ধ্বংসাবশেষের সামান্য কিছু বর্তমানে বিদ্যমান আছে।

ক্রুশাকৃতি সমাধিমন্দির আদিতে বর্গক্ষেত্রাকার ভিতের উপর নিরেট স্তূপ হিসেবে নির্মিত এবং পরবর্তীকালে দ্বিতীয় পর্যায়ে (আট শতক) এটিকে একটি প্রায় ক্রুশাকৃতি সমাধিমন্দিরে রূপান্তরিত করা হয়। এতে এমন সব বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে যা অন্য কোথাও লক্ষ্য করা যায় না। ক্রুশাকৃতি মন্দিরের প্রতিটি লম্বা বাহুতে একটি ভজনালয় নির্মাণের পরিবর্তে সমাধিমন্দিরের পূর্ব (সম্মুখ) ভাগে তিনটি লম্বা সরু ভজনালয় নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে ময়নামতী জাদুঘরে প্রদর্শিত বুদ্ধের পাথরের বিশাল মূর্তিটি মাঝের ভজনালয়ে পাওয়া গিয়েছিল। সন্নিকটবর্তী ইটাখোলামুড়া এর চমৎকার স্তূপ-এ অনুরূপ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। #


  1. রূপবান মুড়া, ময়নামতী

এখানেও এটির পূর্বদিক প্রবেশদ্বারের মুখোমুখি ছিল। অন্যান্য ভজনালয়ে ব্রোঞ্জ মূর্তির খন্ডসমূহ পাওয়া গেলে বোঝা যায় যে, সেখানেও এ ধরনের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল।

মঠ  ৩৪.১ মিটারের বর্গাকৃতির ছোট মঠটি ক্রুশাকৃতি স্তূপ-এর ৩১ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে আলাদাভাবে নির্মিত হয়েছিল। এ মঠের একটি দীপ্যমান প্রবেশপথ কমপ্লেক্স রয়েছে (১২.৫ মি × ৬.৯ মি)। এটি উত্তর অংশের মাঝখানে বাইরের দিকে প্রক্ষিপ্ত। প্রচলিত বর্গাকৃতি পরিকল্পনায় নির্মিত এ মঠের চার অংশেই আদিতে মোট ২৪টি প্রকোষ্ঠ ছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে দ্বিতীয় পর্যায়ে তা ১৮-তে হ্রাস পায়। ১১.৭ মিটার আয়তনের দক্ষিণাংশ পরিত্যক্ত হয়, কারণ এটি তখন মেরামতের অযোগ্য ছিল। এর সম্মুখে এক সারি নতুন প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করা হলে মঠটির আকার হয় ৩৪.১ মিটার × ২৪.৮ মিটার। দ্বিতীয় পর্বে নির্মিত প্রকোষ্ঠগুলিতে কর্বেলকৃত কুলুঙ্গি এবং ইটের তৈরি ফ্রেম দেখা যায়। বর্ষার পানি বের করার জন্য অঙ্গনে একটি কর্বেলকৃত নর্দমা তৈরি করা হয়েছিল।

পাথরের বিশাল বুদ্ধমূর্তি ছাড়া প্রত্নস্থলে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনসূহের মধ্যে ছিল খড়গ বংশীয় রাজা বলভট্টের খাদ মিশ্রিত পাঁচটি স্বর্ণমুদ্রা।  [এম হারুনুর রশিদ]