রামকৃষ্ণ মিশন, বাংলাদেশ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২২:৫৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

রামকৃষ্ণ মিশন, বাংলাদেশ  শ্রীরামকৃষ্ণের (১৮৩৬-১৮৮৬) আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় প্রতিষ্ঠিত বেলুড় মঠের শাখাকেন্দ্র। এটি একটি আধ্যাত্মিক ও সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। শ্রীরামকৃষ্ণ বিশ্বাস করতেন যে, সকল ধর্মই সত্য এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ ধর্মীয় পথে সাধনা করে ঈশ্বরের অভিমুখে এগিয়ে যেতে পারে। মানুষ স্বরূপত ঐশী-সত্তার অধিকারী, সুতরাং পাপ বা নৈতিক স্খলনের কারণে শুধু বিলাপ না করে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে অগ্রসর হওয়াই মানবজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। স্বামী  বিবেকানন্দ (১৮৬৩-১৯০২) শ্রীরামকৃষ্ণের এই ধর্মীয় একত্বানুভূতি ও জীবনদর্শনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ১ মে গঙ্গাতীরবর্তী বেলুড়ে প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণ মিশন। এটি রামকৃষ্ণ সংঘ বা বেলুড় মঠ নামে পরিচিতি এবং কালক্রমে এটি শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শন প্রচারের প্রধান কেন্দ্র পরিণত হয়।

আধ্যাত্মিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রামকৃষ্ণ মিশনের বিশেষত্ব হলো সামাজিক দর্শন ও সামাজিক দায়বদ্ধতার স্বীকৃতি। এর সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয় অধ্যাত্মসেবা ও পূজাজ্ঞানে, কারণ শ্রীরামকৃষ্ণের মতে মানুষে দয়া নয়, মানুষে ঈশ্বরের প্রকাশ জেনে মানবজাতির সেবায় ব্রতী হওয়াই মানুষের ধর্ম। রামকৃষ্ণ মিশনের সেবার আদর্শ হলো ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’

বাংলাদেশের ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে রামকৃষ্ণ মিশনের শাখাকেন্দ্র রয়েছে। ঢাকা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে, যা ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে বেলুড় মঠের স্বীকৃতি লাভ করে।

রামকৃষ্ণ মিশন, বাংলাদেশ

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ অঞ্চলে এটি অধ্যাত্মচর্চা এবং সমাজসেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের অন্য কেন্দ্রগুলি হচ্ছে: বরিশাল (১৯০৪), নারায়ণগঞ্জ (১৯০৯), মানিকগঞ্জের বালিয়াটি (১৯১০), সিলেট (১৯১৬), ফরিদপুর (১৯২১), হবিগঞ্জ (১৯২১), ময়মনসিংহ (১৯২২), দিনাজপুর (১৯২৩) ও বাগেরহাট (১৯২৬)। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্যাপন ছাড়াও কেন্দ্রগুলি চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা, ত্রাণ, পুনর্বাসন প্রভৃতি কাজও পরিচালনা করে। ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের চিকিৎসাকেন্দ্রটি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ্র সহায়তায় কর্মকান্ড শুরু করে। বর্তমানে এটি মিশন পরিচালিত নানাবিধ সেবামূলক কার্যক্রমে বিশেষ অবদান রাখছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে মিশন ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহযোগিতাসহ চিকিৎসাসেবা নিয়ে আর্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে একটি স্কুল ও একটি গণগ্রন্থাগার রয়েছে। এখানে গ্রাম থেকে আগত উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রদের জন্য একটি ছাত্রাবাসও রয়েছে। গণগ্রন্থাগারে বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ছাড়াও রয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার পর্যাপ্ত সংখ্যক পুস্তক ও পত্রপত্রিকা। প্রতিদিন নানা বয়সের বিপুল সংখ্যক পাঠক-পাঠিকা এখানে নির্বিঘ্নে জ্ঞানচর্চা করার সুযোগ পায়।

রামকৃষ্ণ মিশনের কর্মকান্ড সকল ধর্মের মানুষের জন্যই উন্মুক্ত।  দুর্গাপূজাকালীপূজা ও  সরস্বতীপূজাসহ ইসলাম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের বিশেষ বিশেষ পর্ব উপলক্ষে এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রামকৃষ্ণ মিশন ধর্মীয় একত্বানুভূতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে বছরব্যাপী বিশ্বের বিভিন্ন শিক্ষা ও সংস্কৃতিমূলক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকে। এতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজের খ্যাতনামা পন্ডিতবর্গ। শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতি বছর তাঁর জীবনদর্শন নিয়ে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেশি-বিদেশী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে এখানে রচিত হয় সহাবস্থানের এক মিলনক্ষেত্র। এটিই শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনদর্শন এবং রামকৃষ্ণ মিশনেরও আদর্শ।  [স্বামী অক্ষরানন্দ]