রহমান, বিচারপতি হামুদুর ও মেটক্যাফ, স্যার চার্লস টি: পাতাগুলির মধ্যে পার্থক্য

(পাতাগুলির মধ্যে পার্থক্য)
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:RahmanJusticeHamoodur.jpg|thumb|right|বিচারপতি হামুদুর রহমান]]
[[Image:MetcalfeCharles.jpg|thumb|right|স্যার চার্লস টি মেটক্যাফ]]
'''রহমান, বিচারপতি হামুদুর''' (১৯১০-১৯৭৫পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি। হামুদুর রহমান ১৯১০ সালের ১ নভেম্বর ভারতের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.বি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি লন্ডনের গ্রে’স ইন থেকে বার-এট-ল সম্পন্ন করে ১৯৩৭ সালে স্বল্পকালের জন্য লন্ডনে আইন ব্যবসায়ে নিয়োজিত ছিলেন।
'''মেটক্যাফ, স্যার চার্লস টি''' (১৭৮৫-১৮৪৬১৮৩৫ সালের মার্চ থেকে ১৮৩৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর মেজর টমসন মেটক্যাফের পুত্র চার্লস থিওফিলাস মেটক্যাফ ১৭৮৫ সালের ৩০ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্রোমলি ও ইটনে শিক্ষালাভের পর ১৮০১ সালে ১৬ বছর বয়সে তিনি কোম্পানিতে কেরানির চাকরি নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন।


হামুদুর রহমান ১৯৩৮ সালে কলকাতা হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু করেন। তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলর (১৯৪০) এবং কলকাতার ডেপুটি মেয়র (১৯৪৩) ছিলেন। হামুদুর রহমান ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বাংলা প্রদেশের জুনিয়র স্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর তিনি পূর্ববাংলায় অবস্থানের পক্ষে মত দেন এবং ১৯৪৮ সালে ঢাকায় আসেন। ১৯৫৩ সালে তাঁকে পূর্ববাংলায় অ্যাডভোকেট জেনারেল নিয়োগ করা হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি পদে উন্নীত হন।
তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৮০৯ সালে রণজিৎ সিং-এর সঙ্গে অমৃতসর চুক্তি সম্পাদনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, যা পাঞ্জাবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনে এবং তা ১৮৪৫ সালের প্রথম শিখযুদ্ধ পর্যন্ত বজায় ছিল। শিখদের শক্তি আফগানিস্তান ও সিন্ধুর বিরুদ্ধে পরিচালিত হলে ব্রিটিশ শাসিত এলাকা সুরক্ষিত হয়। এর পুরস্কারস্বরূপ চার্লস মেটক্যাফ ১৮১০ সালে গোয়ালিয়র, ১৮১১ থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত দিল্লি এবং ১৮২০-১৮২২ সাল এবং ১৮২৫-১৮২৭ সালে হায়দ্রাবাদে রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।


ঢাকা হাইকোর্টের বিচারপতি থাকাকালে হামুদুর রহমান ১৯৫৮ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন। ১৯৬০ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৬০ সালে হামুদুর রহমান পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ লাভ করেন।
তিনি সরকারি গুপ্তচর ও রাজনৈতিক বিভাগসমূহের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮১৯ থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত তিনি লর্ড হেস্টিংসের একান্ত সচিব এবং ১৮২৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৮৩৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতার সুপ্রীম কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। লর্ড বেন্টিঙ্কের পর তিনি ভারতের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল ছিলেন (মার্চ ১৮৩৫-মার্চ ১৮৩৬)। [[কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স|কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স]] তাঁর নিয়োগ স্থায়ী করার জন্য সুপারিশ করার বিষয়টি বিবেচনা করছিল, কিন্তু উদার মনোভাবাপন্ন মেটক্যাফ কোর্টের বিরাগভাজন হন, যখন তিনি লর্ড [[ওয়েলেসলী, লর্ড|ওয়েলেসলী]] কর্তৃক ভারতীয় ছাপাখানার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন এবং এভাবে তিনি ভারতীয়দের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। এর পরিণতিস্বরূপ তাঁকে উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে (বর্তমান উত্তর প্রদেশ) লেফটেন্যান্ট গভর্নর করে পাঠানো হয় এবং তিনি ১৮৩৬ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত দুবছর এ পদে কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তিনি মাদ্রাজের গভর্নর নিযুক্ত হন।


জজিয়তি পেশায় নিয়োজিত থাকাকালে বিচারপতি হামুদুর রহমান কতিপয় মর্যাদাসম্পন্ন পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব আরবিট্রেশনের সদস্য (হেগ, ১৯৫৯-৬০), ছাত্র সমস্যা ও ছাত্র কল্যাণ বিষয়ক কমিশনের চেয়ারম্যান (১৯৬৪), আইন সংস্কার কমিশনের সদস্য (১৯৬৭), যুদ্ধ তদন্ত কমিশনের সদস্য (১৯৭২), অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য গঠিত জাতিসংঘ কমিটির সদস্য (১৯৭২-৭৩) এবং কাউন্সিল অব ইসলামিক আইডিওলজির (পাকিস্তান) চেয়ারম্যান (১৯৭৪-৭৭) ছিলেন।
পরিচালকমন্ডলী তাঁর উদার সংস্কারের প্রতিশ্রুতিসমূহ অননুকূলভাবে বিবেচনা করলে মেটক্যাফ হতাশ হয়ে কোম্পানির চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ইংল্যান্ড চলে যান।


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পর হামুদুর রহমান স্বেচ্ছায় পাকিস্তানের নাগরিকত্ব বহাল রাখেন। পাকিস্তান সরকার তাঁকে পাকিস্তান বিভক্তির কারণ এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভূমিকা তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করে। তাঁর প্রতিবেদনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে রাজনীতি চর্চার বিভিন্ন দিক এবং বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানে তাঁদের অত্যাচার-নিপীড়নের বিষয়টি বিশদভাবে প্রকাশ পায়। হামুদুর রহমান ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর মৃতুবরণ করেন।  [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
পরে তিনি জ্যামাইকার গভর্নর (১৮৩৯-৪২) ও ক্যানাডার গভর্নর জেনারেল (১৮৪৩-৪৫) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৪৫ সালে তাঁকে প্রিভি কাউন্সিলর করা হয় এবং ১৮৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।


[[en:Rahman, Justice Hamoodur]]
মেটক্যাফের মতো এত দীর্ঘ দিন আর কোন ইংরেজ ভারতে চাকরি করেননি। তিনি যখন ভারতে আসেন তখন লর্ড ওয়েলেসলীর অধীনে ব্রিটিশ শক্তি ছিল গৌরবের শিখরে। তিনি এদেশে ৩৮ বছর অবস্থান করেছিলেন। সংস্কারের প্রতি তাঁর আগ্রহ তাঁকে ১৮১২ সালেই দিল্লি এলাকায় [[দাসপ্রথা|দাসপ্রথা]], [[সতীদাহ প্রথা|সতীদাহ]] ও [[শিশুহত্যা|শিশুহত্যা]] নিবারণে প্রণোদিত করে। কাউন্সিলের একজন সদস্য হিসেবে মেটক্যাফই গভর্নর জেনারেল বেন্টিঙ্ককে দেশ শাসনের কাজে স্থানীয় অধিবাসীদেরকে অংশিদার রূপে গ্রহণ করতে প্রভাবিত করেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তাধারার অধিকারী একজন যোগ্য বেসামরিক কর্মকর্তা। তাঁর উদার প্রেসনীতি তাঁকে ভারতীয়দের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলে এবং তারা কলকাতায় মেটক্যাফ হল নির্মাণ এবং সেখানে তাঁর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে।  [কে.এম মোহসীন]


[[en:Rahman, Justice Hamoodur]]
[[en:Metcalfe, Sir Charles T]]


[[en:Rahman, Justice Hamoodur]]
[[en:Metcalfe, Sir Charles T]]


[[en:Rahman, Justice Hamoodur]]
[[en:Metcalfe, Sir Charles T]]
 
[[en:Metcalfe, Sir Charles T]]

০৪:২৪, ৫ আগস্ট ২০২১ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

স্যার চার্লস টি মেটক্যাফ

মেটক্যাফ, স্যার চার্লস টি (১৭৮৫-১৮৪৬)  ১৮৩৫ সালের মার্চ থেকে ১৮৩৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ভারতের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর মেজর টমসন মেটক্যাফের পুত্র চার্লস থিওফিলাস মেটক্যাফ ১৭৮৫ সালের ৩০ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্রোমলি ও ইটনে শিক্ষালাভের পর ১৮০১ সালে ১৬ বছর বয়সে তিনি কোম্পানিতে কেরানির চাকরি নিয়ে কলকাতায় ফিরে আসেন।

তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ১৮০৯ সালে রণজিৎ সিং-এর সঙ্গে অমৃতসর চুক্তি সম্পাদনে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, যা পাঞ্জাবে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনে এবং তা ১৮৪৫ সালের প্রথম শিখযুদ্ধ পর্যন্ত বজায় ছিল। শিখদের শক্তি আফগানিস্তান ও সিন্ধুর বিরুদ্ধে পরিচালিত হলে ব্রিটিশ শাসিত এলাকা সুরক্ষিত হয়। এর পুরস্কারস্বরূপ চার্লস মেটক্যাফ ১৮১০ সালে গোয়ালিয়র, ১৮১১ থেকে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত দিল্লি এবং ১৮২০-১৮২২ সাল এবং ১৮২৫-১৮২৭ সালে হায়দ্রাবাদে রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

তিনি সরকারি গুপ্তচর ও রাজনৈতিক বিভাগসমূহের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮১৯ থেকে ১৮২০ সাল পর্যন্ত তিনি লর্ড হেস্টিংসের একান্ত সচিব এবং ১৮২৭ সালের আগস্ট মাস থেকে ১৮৩৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত কলকাতার সুপ্রীম কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। লর্ড বেন্টিঙ্কের পর তিনি ভারতের ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল ছিলেন (মার্চ ১৮৩৫-মার্চ ১৮৩৬)। কোর্ট অব ডাইরেক্টর্স তাঁর নিয়োগ স্থায়ী করার জন্য সুপারিশ করার বিষয়টি বিবেচনা করছিল, কিন্তু উদার মনোভাবাপন্ন মেটক্যাফ কোর্টের বিরাগভাজন হন, যখন তিনি লর্ড ওয়েলেসলী কর্তৃক ভারতীয় ছাপাখানার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন এবং এভাবে তিনি ভারতীয়দের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেন। এর পরিণতিস্বরূপ তাঁকে উত্তর-পশ্চিম প্রদেশে (বর্তমান উত্তর প্রদেশ) লেফটেন্যান্ট গভর্নর করে পাঠানো হয় এবং তিনি ১৮৩৬ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত দুবছর এ পদে কর্মরত ছিলেন। অতঃপর তিনি মাদ্রাজের গভর্নর নিযুক্ত হন।

পরিচালকমন্ডলী তাঁর উদার সংস্কারের প্রতিশ্রুতিসমূহ অননুকূলভাবে বিবেচনা করলে মেটক্যাফ হতাশ হয়ে কোম্পানির চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ইংল্যান্ড চলে যান।

পরে তিনি জ্যামাইকার গভর্নর (১৮৩৯-৪২) ও ক্যানাডার গভর্নর জেনারেল (১৮৪৩-৪৫) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৪৫ সালে তাঁকে প্রিভি কাউন্সিলর করা হয় এবং ১৮৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

মেটক্যাফের মতো এত দীর্ঘ দিন আর কোন ইংরেজ ভারতে চাকরি করেননি। তিনি যখন ভারতে আসেন তখন লর্ড ওয়েলেসলীর অধীনে ব্রিটিশ শক্তি ছিল গৌরবের শিখরে। তিনি এদেশে ৩৮ বছর অবস্থান করেছিলেন। সংস্কারের প্রতি তাঁর আগ্রহ তাঁকে ১৮১২ সালেই দিল্লি এলাকায় দাসপ্রথা, সতীদাহশিশুহত্যা নিবারণে প্রণোদিত করে। কাউন্সিলের একজন সদস্য হিসেবে মেটক্যাফই গভর্নর জেনারেল বেন্টিঙ্ককে দেশ শাসনের কাজে স্থানীয় অধিবাসীদেরকে অংশিদার রূপে গ্রহণ করতে প্রভাবিত করেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তাধারার অধিকারী একজন যোগ্য বেসামরিক কর্মকর্তা। তাঁর উদার প্রেসনীতি তাঁকে ভারতীয়দের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলে এবং তারা কলকাতায় মেটক্যাফ হল নির্মাণ এবং সেখানে তাঁর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে।  [কে.এম মোহসীন]