মৈত্রেয়, অক্ষয়কুমার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''মৈত্রেয়, অক্ষয়কুমার''' (১৮৬১-১৯৩০)  আইনজীবী, সমাজকর্মী ও ঐতিহাসিক। তিনি ১৮৬১ সালের ১ মার্চ নদীয়া জেলার নওয়াপাড়া থানার সিমুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৭৮ সালে বোয়ালিয়া ইংলিশ স্কুল (বর্তমানে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৮০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এফ.এ ১৮৮৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ এবং ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বি.এল পাস করেন এবং একই বছর তিনি রাজশাহীতে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
'''মৈত্রেয়, অক্ষয়কুমার''' (১৮৬১-১৯৩০)  আইনজীবী, সমাজকর্মী ও ঐতিহাসিক। তিনি ১৮৬১ সালের ১ মার্চ নদীয়া জেলার নওয়াপাড়া থানার সিমুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৭৮ সালে বোয়ালিয়া ইংলিশ স্কুল (বর্তমানে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৮০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এফ.এ ১৮৮৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ এবং ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বি.এল পাস করেন এবং একই বছর তিনি রাজশাহীতে আইন ব্যবসা শুরু করেন।


[[Image:MaitreyaAkshay.jpg|thumb|right|400px|অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়]]
[[Image:MaitreyaAkshay%20Kumar.jpg|thumb|400px|অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়]]
গবেষণা ও ইতিহাস চর্চার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল এবং এর জন্য তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি দীর্ঘকাল ধরে সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক উভয়বিধ উৎস থেকে তথ্যাবলি সংগ্রহ করেন। তিনি বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস, শিল্পকলা ও পটশিল্প সম্পর্কে গভীর ও প্রামাণিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি [[ঐতিহাসিক চিত্র|ঐতিহাসিক চিত্র]] (১৮৯৯) শিরোনামে  [[সিরাজউদ্দৌলা |সিরাজউদ্দৌলা]], [[মীরকাসিম| মীর কাসিম]], [[রাণী ভবানী| রানী ভবানী]], সীতারাম, ফিরিঙ্গি বণিক প্রমুখ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতিহাস বিষয়ক প্রথম বাংলা সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন। যুগপৎ তিনি বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থান, শিল্পকলা ও পটশিল্প সম্পর্কে তথ্যমূলক নিবন্ধও প্রকাশ করেন। ১৯১২ সালে প্রকাশিত গৌড়লেখমালায় তিনি কয়েকটি পাল তাম্রশাসন ও শিলালিপি বাংলা অনুবাদসহ সম্পাদনা করেন। এতে করে বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক গবেষণার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়।
গবেষণা ও ইতিহাস চর্চার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল এবং এর জন্য তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি দীর্ঘকাল ধরে সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক উভয়বিধ উৎস থেকে তথ্যাবলি সংগ্রহ করেন। তিনি বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস, শিল্পকলা ও পটশিল্প সম্পর্কে গভীর ও প্রামাণিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি [[ঐতিহাসিক চিত্র|ঐতিহাসিক চিত্র]] (১৮৯৯) শিরোনামে  [[সিরাজউদ্দৌলা |সিরাজউদ্দৌলা]], [[মীরকাসিম| মীর কাসিম]], [[রাণী ভবানী| রানী ভবানী]], সীতারাম, ফিরিঙ্গি বণিক প্রমুখ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতিহাস বিষয়ক প্রথম বাংলা সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন। যুগপৎ তিনি বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থান, শিল্পকলা ও পটশিল্প সম্পর্কে তথ্যমূলক নিবন্ধও প্রকাশ করেন। ১৯১২ সালে প্রকাশিত গৌড়লেখমালায় তিনি কয়েকটি পাল তাম্রশাসন ও শিলালিপি বাংলা অনুবাদসহ সম্পাদনা করেন। এতে করে বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক গবেষণার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়।



০৬:৪৩, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মৈত্রেয়, অক্ষয়কুমার (১৮৬১-১৯৩০)  আইনজীবী, সমাজকর্মী ও ঐতিহাসিক। তিনি ১৮৬১ সালের ১ মার্চ নদীয়া জেলার নওয়াপাড়া থানার সিমুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৭৮ সালে বোয়ালিয়া ইংলিশ স্কুল (বর্তমানে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৮০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে এফ.এ ১৮৮৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি.এ এবং ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বি.এল পাস করেন এবং একই বছর তিনি রাজশাহীতে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়

গবেষণা ও ইতিহাস চর্চার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ ছিল এবং এর জন্য তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি দীর্ঘকাল ধরে সাহিত্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক উভয়বিধ উৎস থেকে তথ্যাবলি সংগ্রহ করেন। তিনি বাংলার প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় ইতিহাস, শিল্পকলা ও পটশিল্প সম্পর্কে গভীর ও প্রামাণিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ঐতিহাসিক চিত্র (১৮৯৯) শিরোনামে  সিরাজউদ্দৌলা,  মীর কাসিম,  রানী ভবানী, সীতারাম, ফিরিঙ্গি বণিক প্রমুখ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতিহাস বিষয়ক প্রথম বাংলা সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন। যুগপৎ তিনি বাংলার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন স্থান, শিল্পকলা ও পটশিল্প সম্পর্কে তথ্যমূলক নিবন্ধও প্রকাশ করেন। ১৯১২ সালে প্রকাশিত গৌড়লেখমালায় তিনি কয়েকটি পাল তাম্রশাসন ও শিলালিপি বাংলা অনুবাদসহ সম্পাদনা করেন। এতে করে বাংলা ভাষায় ঐতিহাসিক গবেষণার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়।

গবেষণা ও প্রাচীন নিদর্শনাদি সম্বন্ধে অভিন্ন আগ্রহের ফলে বিশ শতকের প্রথম দশকে  দিঘাপতিয়া রাজ পরিবারের কুমার শরৎকুমার রায়, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ও জনৈক স্কুল শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দকে পরস্পরের কাছাকাছি নিয়ে আসে। সামগ্রিকভাবে বাংলার এবং বিশেষত বরেন্দ্রবাসীদের গৌরবময় অতীত সম্পর্কে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণাকে উৎসাহিত করার জন্য তাঁরা বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। রাজশাহীর সন্নিহিত এলাকায় তাঁদের প্রথম সফল সফরকালে উদ্ধারকৃত প্রত্ননিদর্শনাদি সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের লক্ষ্যে তাঁরা ১৯১০ সালের এপ্রিলে রাজশাহী জাদুঘরও (বর্তমান বরেন্দ্র রিসার্চ মিউজিয়াম) প্রতিষ্ঠা করেন। বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটির তদারকিতেই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কাজেই জাদুঘর বিষয়ে সোসাইটির ভূমিকা ছিল স্বত্বাধিকারী ও তত্ত্বাবধানকারীর। জাদুঘরটি বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটির ব্যবস্থাপনা পরিষদের অধীনে ন্যস্ত ছিল।এ পরিষদের সভাপতি ছিলেন কুমার শরৎকুমার রায়, পরিচালক ছিলেন অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এবং সচিব ছিলেন রমাপ্রসাদ চন্দ।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ছিলেন এ দুটি প্রতিষ্ঠানেরই প্রাণপুরুষ। সোসাইটির পরিচালক হিসেবে তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর এর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক ও বিভিন্ন নিদর্শন সংগ্রহের জন্য অনুসন্ধানমূলক সফরের আয়োজন ও তাতে অংশগ্রহণ করতেন এবং প্রচুর পরিমাণে প্রত্ননিদর্শন সংগ্রহ করেন।

রাজশাহী পৌরসভার কমিশনার থাকাকালে অক্ষয়কুমার রাজশাহীর নাগরিক সুবিধাসংশ্লিষ্ট অবকাঠামো ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করেন। ডায়মন্ড জুবিলি ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুলের সূচনালগ্নে তিনি এ প্রতিষ্ঠানকে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন। এমনকি স্কুলের অবৈতনিক প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি ছাত্রছাত্রীদের রেশম চাষ পদ্ধতি শিক্ষা দিতেন। বেশ কিছুসংখ্যক সংস্কৃত নাটকের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। একজন ভাল ক্রিকেট খেলোয়াড় ও চিত্রকর অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এর ১৯৩০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু হয়।  [সাইফুদ্দিন চৌধুরী]