মুখোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''মুখোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ '''(১৯০১-১৯৭৬) ''' '''কথাশিল্পী, চলচ্চিত্রকার। ১৯০১ সালের ২১ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার অন্ডাল গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস বীরভূমের রূপসীপুর গ্রামে। তিন বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু হলে বর্ধমানের ধনাঢ্য কয়লা ব্যবসায়ী মাতামহ রায়সাহেব মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের আশ্রয়ে তিনি বড় হন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রানীগঞ্জ সিয়ারসোল স্কুলে। সেখানে  [[ইসলাম, কাজী নজরুল|কাজী নজরুল ইসলাম]] ছিলেন তাঁর সহপাঠী। দুজনে ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
'''মুখোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ''' (১৯০১-১৯৭৬) কথাশিল্পী, চলচ্চিত্রকার। ১৯০১ সালের ২১ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার অন্ডাল গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস বীরভূমের রূপসীপুর গ্রামে। তিন বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু হলে বর্ধমানের ধনাঢ্য কয়লা ব্যবসায়ী মাতামহ রায়সাহেব মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের আশ্রয়ে তিনি বড় হন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রানীগঞ্জ সিয়ারসোল স্কুলে। সেখানে  [[ইসলাম, কাজী নজরুল|কাজী নজরুল ইসলাম]] ছিলেন তাঁর সহপাঠী। দুজনে ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁরা দুজন ছিলেন এন্ট্রান্স শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলে প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা না দিয়ে দুজনে যুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশে পালিয়ে যান আসানসোল। কিন্তু মেডিক্যাল টেস্টে শৈলজানন্দ বাদ পড়ে যাওয়ায় ফিরে আসেন, আর নজরুল যুদ্ধে চলে যান। পরে শৈলজানন্দ এন্ট্রান্স পাস করে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু কিছুকাল পরে কলেজ ত্যাগ করে শর্টহ্যান্ড-টাইপরাইটিং শিখে তিনি কয়লাকুঠিতে চাকরি নেন। এ চাকরিও তিনি বেশিদিন করেননি। ১৯৩২ সালের দিকে চাকরি ছেড়ে তিনি সাহিত্যচর্চা ও চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এ সময় বাঁশরী  পত্রিকায় তাঁর রচিত ‘আত্মঘাতীর ডায়েরী’ প্রকাশিত হলে মাতামহ তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। আশ্রয়হীন শৈলজানন্দ তখন  [[কলকাতা|কলকাতা]] এসে পুরোপুরি সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। কলকাতায় তিনি সান্নিধ্য লাভ করেন  [[সেনগুপ্ত, অচিন্ত্যকুমার|অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত]], প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু,  [[সান্যাল, প্রবোধকুমার|প্রবোধকুমার সান্যাল]], পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের এবং এক সময় তিনি কালিকলম ও কল্লোল গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক হন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁরা দুজন ছিলেন এন্ট্রান্স শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলে প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা না দিয়ে দুজনে যুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশে পালিয়ে যান আসানসোল। কিন্তু মেডিক্যাল টেস্টে শৈলজানন্দ বাদ পড়ে যাওয়ায় ফিরে আসেন, আর নজরুল যুদ্ধে চলে যান। পরে শৈলজানন্দ এন্ট্রান্স পাস করে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু কিছুকাল পরে কলেজ ত্যাগ করে শর্টহ্যান্ড-টাইপরাইটিং শিখে তিনি কয়লাকুঠিতে চাকরি নেন। এ চাকরিও তিনি বেশিদিন করেননি। ১৯৩২ সালের দিকে চাকরি ছেড়ে তিনি সাহিত্যচর্চা ও চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এ সময় বাঁশরী  পত্রিকায় তাঁর রচিত ‘আত্মঘাতীর ডায়েরী’ প্রকাশিত হলে মাতামহ তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। আশ্রয়হীন শৈলজানন্দ তখন  [[কলকাতা|কলকাতা]] এসে পুরোপুরি সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। কলকাতায় তিনি সান্নিধ্য লাভ করেন  [[সেনগুপ্ত, অচিন্ত্যকুমার|অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত]], প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু,  [[সান্যাল, প্রবোধকুমার|প্রবোধকুমার সান্যাল]], পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের এবং এক সময় তিনি কালিকলম ও কল্লোল গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক হন।
৬ নং লাইন: ৬ নং লাইন:
কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবেশ ঘটলেও শৈলজানন্দ পরবর্তীকালে কথাসাহিত্যিক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। খনিশ্রমিক  [[সাঁওতাল|সাঁওতাল]] ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের শ্রমজীবী মানুষের জীবন অবলম্বনে তিনি অনেকগুলি উপন্যাস রচনা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনিই পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। কয়লাখনির শ্রমিকদের নিয়ে তিনি অনেক গল্পও লিখেছেন।  [[উপন্যাস|উপন্যাস]] ও গল্প মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা প্রায় দেড়শত। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি: কয়লাকুঠির দেশে, ডাক্তার, বন্দী, আজ শুভদিন, ঝড়ো হাওয়া (১৯২৩), মাটির ঘর (১৯২৪), বাংলার মেয়ে (১৯২৫), জোয়ার ভাটা (১৯২৬), নারীমেধ, বানভাসি, দিনমজুর, জীবননদীর তীরে, পৌষপার্বণ (১৯৩১), অভিশাপ (১৯৩৩), রূপং দেহি, আমি বড় হব, ক্রৌঞ্চমিথুন, বিজয়িনী, রূপবতী, গঙ্গা যমুনা, পাতালপুরী, আকাশকুসুম, সারারাত  ইত্যাদি।
কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবেশ ঘটলেও শৈলজানন্দ পরবর্তীকালে কথাসাহিত্যিক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। খনিশ্রমিক  [[সাঁওতাল|সাঁওতাল]] ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের শ্রমজীবী মানুষের জীবন অবলম্বনে তিনি অনেকগুলি উপন্যাস রচনা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনিই পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। কয়লাখনির শ্রমিকদের নিয়ে তিনি অনেক গল্পও লিখেছেন।  [[উপন্যাস|উপন্যাস]] ও গল্প মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা প্রায় দেড়শত। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি: কয়লাকুঠির দেশে, ডাক্তার, বন্দী, আজ শুভদিন, ঝড়ো হাওয়া (১৯২৩), মাটির ঘর (১৯২৪), বাংলার মেয়ে (১৯২৫), জোয়ার ভাটা (১৯২৬), নারীমেধ, বানভাসি, দিনমজুর, জীবননদীর তীরে, পৌষপার্বণ (১৯৩১), অভিশাপ (১৯৩৩), রূপং দেহি, আমি বড় হব, ক্রৌঞ্চমিথুন, বিজয়িনী, রূপবতী, গঙ্গা যমুনা, পাতালপুরী, আকাশকুসুম, সারারাত  ইত্যাদি।


শৈলজানন্দ দীর্ঘকাল কালিকলম পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তাঁর অনেক উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি নিজেও একজন পরিচালক ছিলেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘নন্দিনী’। পরে তিনি বন্দী, শহর থেকে দূরে, মানে না মানা, অভিনয় নয় ইত্যাদি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ‘নিউ থিয়েটার্স’ নাট্যদলের তিনি একজন কাহিনীকার ছিলেন। শৈলজানন্দ সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য প্রফুল্লকুমার ও সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (১৯৫৯) লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়।
শৈলজানন্দ দীর্ঘকাল কালিকলম পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তাঁর অনেক উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি নিজেও একজন পরিচালক ছিলেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘নন্দিনী’। পরে তিনি বন্দী, শহর থেকে দূরে, মানে না মানা, অভিনয় নয় ইত্যাদি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ‘নিউ থিয়েটার্স’ নাট্যদলের তিনি একজন কাহিনীকার ছিলেন। শৈলজানন্দ সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য প্রফুল্লকুমার ও সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (১৯৫৯) লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। [বদিউজ্জামান]
 
[বদিউজ্জামান]


[[en:Mukhopadhyay, Shailajananda]]
[[en:Mukhopadhyay, Shailajananda]]

০৯:৪৫, ৪ মার্চ ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

মুখোপাধ্যায়, শৈলজানন্দ (১৯০১-১৯৭৬) কথাশিল্পী, চলচ্চিত্রকার। ১৯০১ সালের ২১ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার অন্ডাল গ্রামে মাতুলালয়ে তাঁর জন্ম। তাঁর পৈতৃক নিবাস বীরভূমের রূপসীপুর গ্রামে। তিন বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু হলে বর্ধমানের ধনাঢ্য কয়লা ব্যবসায়ী মাতামহ রায়সাহেব মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের আশ্রয়ে তিনি বড় হন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রানীগঞ্জ সিয়ারসোল স্কুলে। সেখানে  কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তাঁর সহপাঠী। দুজনে ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁরা দুজন ছিলেন এন্ট্রান্স শ্রেণীর ছাত্র। স্কুলে প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষা না দিয়ে দুজনে যুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশে পালিয়ে যান আসানসোল। কিন্তু মেডিক্যাল টেস্টে শৈলজানন্দ বাদ পড়ে যাওয়ায় ফিরে আসেন, আর নজরুল যুদ্ধে চলে যান। পরে শৈলজানন্দ এন্ট্রান্স পাস করে কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু কিছুকাল পরে কলেজ ত্যাগ করে শর্টহ্যান্ড-টাইপরাইটিং শিখে তিনি কয়লাকুঠিতে চাকরি নেন। এ চাকরিও তিনি বেশিদিন করেননি। ১৯৩২ সালের দিকে চাকরি ছেড়ে তিনি সাহিত্যচর্চা ও চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এ সময় বাঁশরী  পত্রিকায় তাঁর রচিত ‘আত্মঘাতীর ডায়েরী’ প্রকাশিত হলে মাতামহ তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। আশ্রয়হীন শৈলজানন্দ তখন  কলকাতা এসে পুরোপুরি সাহিত্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। কলকাতায় তিনি সান্নিধ্য লাভ করেন  অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, মুরলীধর বসু,  প্রবোধকুমার সান্যাল, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের এবং এক সময় তিনি কালিকলম ও কল্লোল গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক হন।

কবিতা রচনার মধ্য দিয়ে সাহিত্যক্ষেত্রে প্রবেশ ঘটলেও শৈলজানন্দ পরবর্তীকালে কথাসাহিত্যিক হিসেবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। খনিশ্রমিক  সাঁওতাল ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের শ্রমজীবী মানুষের জীবন অবলম্বনে তিনি অনেকগুলি উপন্যাস রচনা করেন। এ ক্ষেত্রে তিনিই পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। কয়লাখনির শ্রমিকদের নিয়ে তিনি অনেক গল্পও লিখেছেন।  উপন্যাস ও গল্প মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থসংখ্যা প্রায় দেড়শত। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি: কয়লাকুঠির দেশে, ডাক্তার, বন্দী, আজ শুভদিন, ঝড়ো হাওয়া (১৯২৩), মাটির ঘর (১৯২৪), বাংলার মেয়ে (১৯২৫), জোয়ার ভাটা (১৯২৬), নারীমেধ, বানভাসি, দিনমজুর, জীবননদীর তীরে, পৌষপার্বণ (১৯৩১), অভিশাপ (১৯৩৩), রূপং দেহি, আমি বড় হব, ক্রৌঞ্চমিথুন, বিজয়িনী, রূপবতী, গঙ্গা যমুনা, পাতালপুরী, আকাশকুসুম, সারারাত  ইত্যাদি।

শৈলজানন্দ দীর্ঘকাল কালিকলম পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তাঁর অনেক উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িতও হয়েছে। তিনি নিজেও একজন পরিচালক ছিলেন। তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘নন্দিনী’। পরে তিনি বন্দী, শহর থেকে দূরে, মানে না মানা, অভিনয় নয় ইত্যাদি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ‘নিউ থিয়েটার্স’ নাট্যদলের তিনি একজন কাহিনীকার ছিলেন। শৈলজানন্দ সাহিত্য ও চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য প্রফুল্লকুমার ও সুরেশচন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার (১৯৫৯) লাভ করেন। ১৯৭৬ সালের ২ জানুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। [বদিউজ্জামান]