তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:Banglapedia]]
[[Category:Banglapedia]]
[[Image:Sunflower.jpg|thumb|400px|right|তেল উৎপাদক উদ্ভিদ :সূর্যমুখী ]]
'''তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ''' (Oil plant)  খাবার তেল অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার্য তেল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ। উদ্ভিজ্জ তেল তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীলতা ভিত্তি করে দুটি দলে ভাগ করা হয়। এর একটি উদ্বায়ী (volatile), অন্যটি অউদ্বায়ী। বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি (aromatic) গাছপালা থেকে উদ্বায়ী তেল তৈরি হয়। এসব উদ্ভিদ প্রধানত Lauraceae, Myrtaceae, Umbelliferae, Labiatae, Compositae ইত্যাদি গোত্রের সদস্য। অধিকাংশ উদ্বায়ী তেল বিভিন্ন প্রসাধনী বা সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহূত হয়।
'''তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ''' (Oil plant)  খাবার তেল অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার্য তেল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ। উদ্ভিজ্জ তেল তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীলতা ভিত্তি করে দুটি দলে ভাগ করা হয়। এর একটি উদ্বায়ী (volatile), অন্যটি অউদ্বায়ী। বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি (aromatic) গাছপালা থেকে উদ্বায়ী তেল তৈরি হয়। এসব উদ্ভিদ প্রধানত Lauraceae, Myrtaceae, Umbelliferae, Labiatae, Compositae ইত্যাদি গোত্রের সদস্য। অধিকাংশ উদ্বায়ী তেল বিভিন্ন প্রসাধনী বা সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহূত হয়।


[[Image:Sunflower.jpg|thumb|400px|তেল উৎপাদক উদ্ভিদ :সূর্যমুখী ]]
[[Image:MustardCrop.jpg|thumb|400px|right|তেল উৎপাদক উদ্ভিদ : সরিষা ]]
 
অউদ্বায়ী বা চর্বিযুক্ত তেল (Fatty Oils) সাধারণত ভোজ্য তেল হিসেবে অথবা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদের বীজে শতকরা ৪০-৬০ ভাগ তেল জমা থাকতে পারে। অনেক উদ্ভিদের ফল, পাতা, কন্দ, কান্ড এবং অন্যান্য অংশও কম বেশি তেল ধারণ করে। চর্বিযুক্ত তেল পাওয়া যায় নানা গোত্রের বহু উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে। তবে প্রধানত তেল সংগ্রহ করা হয় Brassicaceae (Cruciferae), Asteraceae (Compositae), Fabaceae (Leguminosae), Euphorbiaceae, Pedaliaceae, Arecaceae (Palmae) ইত্যাদি গোত্রের কতক প্রজাতি থেকে। নিম্নে ১ এবং ২ নম্বর সারণিতে বাংলাদেশের প্রধান ও অপ্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদের তালিকা দেওয়া হলো:  
অউদ্বায়ী বা চর্বিযুক্ত তেল (Fatty Oils) সাধারণত ভোজ্য তেল হিসেবে অথবা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদের বীজে শতকরা ৪০-৬০ ভাগ তেল জমা থাকতে পারে। অনেক উদ্ভিদের ফল, পাতা, কন্দ, কান্ড এবং অন্যান্য অংশও কম বেশি তেল ধারণ করে। চর্বিযুক্ত তেল পাওয়া যায় নানা গোত্রের বহু উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে। তবে প্রধানত তেল সংগ্রহ করা হয় Brassicaceae (Cruciferae), Asteraceae (Compositae), Fabaceae (Leguminosae), Euphorbiaceae, Pedaliaceae, Arecaceae (Palmae) ইত্যাদি গোত্রের কতক প্রজাতি থেকে। নিম্নে ১ এবং ২ নম্বর সারণিতে বাংলাদেশের প্রধান ও অপ্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদের তালিকা দেওয়া হলো:  


[[Image:MustardCrop.jpg|thumb|400px|তেল উৎপাদক উদ্ভিদ : সরিষা ]]
''সারণি'' ১ প্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদ।
 
সারণি ১ প্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদ
{| class="table table-bordered"
{| class="table table-bordered"
|-
|-
| স্থানীয় নাম  || বৈজ্ঞানিক নাম  || গোত্র  || ফসল উৎপাদনের মৌসুম  ||    ব্যবহার  
| স্থানীয় নাম  || বৈজ্ঞানিক নাম  || গোত্র  || ফসল উৎপাদনের মৌসুম  ||    ব্যবহার  
|-
|-
| সরিষা  || Brassica species(কয়েকটি প্রজাতি ও জাত) '' || ''Brassicaceae  || বার্ষিক, রবি ফসল || প্রধান ভোজ্য তেল; আচার সংরক্ষণে; মাথায় ও দেহে মালিশের জন্য; বাতের ব্যথা উপশমে; খৈল গোখাদ্য  
| সরিষা  || Brassica species(কয়েকটি প্রজাতি ও জাত) '' || ''Brassicaceae  || বার্ষিক, রবি ফসল || প্রধান ভোজ্য তেল; আচার সংরক্ষণে; মাথায় ও দেহে মালিশের জন্য; বাতের ব্যথা উপশমে; খৈল গোখাদ্য  
|-
|-
| তিল  || Sesamum Indicum                '' || ''Pedaliaceae || বার্ষিক, রবি ও খরিপ ফসল  || রান্নার কাজে; মাথার তেল হিসেবে, সাবান তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য  
| তিল  || Sesamum Indicum                '' || ''Pedaliaceae || বার্ষিক, রবি ও খরিপ ফসল  || রান্নার কাজে; মাথার তেল হিসেবে, সাবান তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য  
|-
|-
| তিসি  || Linum Usitatissimum'' || ''Linaceae                 || বার্ষিক, রবি ফসল || বার্নিশ; রং এবং কালি তৈরির উপাদান হিসেবে; খাবার তেল হিসেবেও ব্যবহার্য; খৈল গোখাদ্য  
| তিসি  || Linum Usitatissimum'' || ''Linaceae                 || বার্ষিক, রবি ফসল || বার্নিশ; রং এবং কালি তৈরির উপাদান হিসেবে; খাবার তেল হিসেবেও ব্যবহার্য; খৈল গোখাদ্য  
|-
|-
| চীনাবাদাম  || Arachis Hypogea      '' || ''Fabaceae || বার্ষিক, রবি ও খরিপ ফসল || খাবার তেল হিসেবে; মার্জারিন, পি-নাট বাটার এবং  ঘি তৈরিতে; বীজ বাদাম হিসেবে খাওয়া যায়  
| চীনাবাদাম  || Arachis Hypogea      '' || ''Fabaceae || বার্ষিক, রবি ও খরিপ ফসল || খাবার তেল হিসেবে; মার্জারিন, পি-নাট বাটার এবং  ঘি তৈরিতে; বীজ বাদাম হিসেবে খাওয়া যায়  
|-
|-
| সূর্যমুখী  || Helianthus Annuus'' || ''Asteraceae || বার্ষিক || খাবার তেল হিসেবে; সাবান, মার্জারিন, বার্নিশ, পেইন্ট ইত্যাদি তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য  
| সূর্যমুখী  || Helianthus Annuus'' || ''Asteraceae || বার্ষিক || খাবার তেল হিসেবে; সাবান, মার্জারিন, বার্নিশ, পেইন্ট ইত্যাদি তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য  
|-
|-
| সয়াবিন  || Glycine Max'' || ''Fabaceae || বার্ষিক || খাবার তেল হিসেবে ব্যাপক ব্যবহূত; সয়াবিস্কুট, সয়াডাল,সয়াখিচুরি, সয়ারুটি, সয়ামার্জারিন ইত্যাদি তৈরিতে; সাবান, ছাপার কালি, পেইন্ট, প্রসাধনী তৈরিতে  
| সয়াবিন  || Glycine Max'' || ''Fabaceae || বার্ষিক || খাবার তেল হিসেবে ব্যাপক ব্যবহূত; সয়াবিস্কুট, সয়াডাল,সয়াখিচুরি, সয়ারুটি, সয়ামার্জারিন ইত্যাদি তৈরিতে; সাবান, ছাপার কালি, পেইন্ট, প্রসাধনী তৈরিতে  
৩৩ নং লাইন: ২৫ নং লাইন:
| নারিকেল  || Cocos Nucifera'' || ''Arecaceae || বহুবর্ষজীবী || শোধিত তেল রান্নার কাজে ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে; ক্যান্ডিবার, মার্জারিন ও মিষ্টান্ন তৈরিতে; মাথার তেল হিসেবে ও প্রসাধনী তৈরিতে  
| নারিকেল  || Cocos Nucifera'' || ''Arecaceae || বহুবর্ষজীবী || শোধিত তেল রান্নার কাজে ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে; ক্যান্ডিবার, মার্জারিন ও মিষ্টান্ন তৈরিতে; মাথার তেল হিসেবে ও প্রসাধনী তৈরিতে  
|}
|}
সারণি ২ অপ্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদ
 
''সারণি'' ২ অপ্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদ।
{| class="table table-bordered"
{| class="table table-bordered"
|-
|-
| স্থানীয় নাম  || বৈজ্ঞানিক নাম  || গোত্র  || ফসল উৎপাদনের মৌসুম  ||    ব্যবহার  
| স্থানীয় নাম  || বৈজ্ঞানিক নাম  || গোত্র  || ফসল উৎপাদনের মৌসুম  ||    ব্যবহার  
|-
|-
| গর্জনতিল  || Guizotia Abyssinica '' || ''Asteraceae  || বার্ষিক, রবি ফসল  || খাবার তেল হিসেবে; পেইন্ট ও সাবান তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য ও সার হিসেবে  
| গর্জনতিল  || Guizotia Abyssinica '' || ''Asteraceae  || বার্ষিক, রবি ফসল  || খাবার তেল হিসেবে; পেইন্ট ও সাবান তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য ও সার হিসেবে  
|-
|-
| ভেরেন্ডা  || Ricinus Communis '' || ''Euphorbiaceae  || একাধিক বর্ষজীবী  || প্রধানত যন্ত্রপাতি পিচ্ছিলকারক হিসেবে; রেচক পদার্থ হিসেবে, মাথার তেল হিসেবে; লোশন, সাবান, বার্নিশ, ফিনাইল ইত্যাদি তৈরিতে; চামড়া সংরক্ষণে  
| ভেরেন্ডা  || Ricinus Communis '' || ''Euphorbiaceae  || একাধিক বর্ষজীবী  || প্রধানত যন্ত্রপাতি পিচ্ছিলকারক হিসেবে; রেচক পদার্থ হিসেবে, মাথার তেল হিসেবে; লোশন, সাবান, বার্নিশ, ফিনাইল ইত্যাদি তৈরিতে; চামড়া সংরক্ষণে  
|-
|-
| কুসুমফুল  || Carthamus Tinctorius '' || ''Asteraceae  || বর্ষজীবী  || খাবার তেল হিসেবে; সাবান, পেইন্ট, বার্নিশ ইত্যাতি তৈরিতে
| কুসুমফুল  || Carthamus Tinctorius '' || ''Asteraceae  || বর্ষজীবী  || খাবার তেল হিসেবে; সাবান, পেইন্ট, বার্নিশ ইত্যাতি তৈরিতে
|-
|-
| লেমন গ্রাস  || Cymbopogon Citratus '' || ''Poaceae  || একাধিক বর্ষজীবী  || সাবান ও প্রসাধনী সামগ্রীর সুগন্ধিদায়ক উপাদান হিসেবে  
| লেমন গ্রাস  || Cymbopogon Citratus '' || ''Poaceae  || একাধিক বর্ষজীবী  || সাবান ও প্রসাধনী সামগ্রীর সুগন্ধিদায়ক উপাদান হিসেবে  
|}
|}
২০০-১০ অর্থবছরে জাতীয় পর্যায়ে প্রধান তেল ফসল উৎপাদন এলাকা, চাষকৃত মোট জমির পরিমাণ এবং উৎপাদনের প্রাককলিত এক হিসাব ৩ নম্বর সারণিতে উল্লেখ করা হলো।সারণি ৩  তেলপ্রদায়ী প্রধান ফসল, চাষকৃত জমির পরিমাণ, বার্ষিক উৎপাদন এবং প্রধান চাষ এলাকা (২০০৯-১০)
 
২০০-১০ অর্থবছরে জাতীয় পর্যায়ে প্রধান তেল ফসল উৎপাদন এলাকা, চাষকৃত মোট জমির পরিমাণ এবং উৎপাদনের প্রাককলিত এক হিসাব ৩ নম্বর সারণিতে উল্লেখ করা হলো।
 
''সারণি'' ৩  তেলপ্রদায়ী প্রধান ফসল, চাষকৃত জমির পরিমাণ, বার্ষিক উৎপাদন এবং প্রধান চাষ এলাকা (২০০৯-১০)
{| class="table table-bordered"
{| class="table table-bordered"
|-
|-
| ফসলের নাম  || জমির পরিমাণ (হে.)  || উৎপাদন (মে টন)  || প্রধান চাষাবাদ এলাকা  
| ফসলের নাম  || জমির পরিমাণ (হে.)  || উৎপাদন (মে টন)  || প্রধান চাষাবাদ এলাকা  
|-
|-
| সরিষা (দেশী)  || ৪,৩১,৪৬৯  || ১,৫১,২৫১  || টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, কুষ্টিয়া,  
| সরিষা (দেশী)  || ৪,৩১,৪৬৯  || ১,৫১,২৫১  || টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, কুষ্টিয়া,  
|-
|-
| সরিষা (উচ্চ ফলনশীল)  || ১,৬৬,৭৮৫  || ৭০,৬৭৭  || দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী, রংপুর  
| সরিষা (উচ্চ ফলনশীল)  || ১,৬৬,৭৮৫  || ৭০,৬৭৭  || দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী, রংপুর  
|-
|-
| তিল  || ৮৭,৮৫০  || ৩২,৩০৬  || ফরিদপুর, রাঙ্গামাটি, বরিশাল, দিনাজপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, পাবনা  
| তিল  || ৮৭,৮৫০  || ৩২,৩০৬  || ফরিদপুর, রাঙ্গামাটি, বরিশাল, দিনাজপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, পাবনা  
|-
|-
| চীনাবাদাম (শীতকালীন)  || ৬৬,৩৮৫  || ৪৩,০৬০  || নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ,  
| চীনাবাদাম (শীতকালীন)  || ৬৬,৩৮৫  || ৪৩,০৬০  || নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ,  
|-
|-
| চীনাবাদাম (গ্রীষ্মকালীন)  || ১৬,৬২২  || ১০,৪০৭  || বরিশাল, পটুয়াখালী, রংপুর, বগুড়া  
| চীনাবাদাম (গ্রীষ্মকালীন)  || ১৬,৬২২  || ১০,৪০৭  || বরিশাল, পটুয়াখালী, রংপুর, বগুড়া  
|-
|-
| তিসি  || ২৬,০৪৯  || ৬,৮৭০  || ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, দিনাজপুর  
| তিসি  || ২৬,০৪৯  || ৬,৮৭০  || ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, দিনাজপুর  
|-
|-
| নারিকেল (২০০৮-০৯)  || ৬,৮৬২  || ৩,১৬,৪০৫  || নোয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফরিদপুর, খুলনা, পটুয়াখালী, যশোর  
| নারিকেল (২০০৮-০৯)  || ৬,৮৬২  || ৩,১৬,৪০৫  || নোয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফরিদপুর, খুলনা, পটুয়াখালী, যশোর  
|}
|}
উৎস  কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ, ২০১০


তেল ফসল দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তেলের উৎপাদন যথেষ্ট কম।
''উৎস''  কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ, ২০১০।


[মোঃ মাহফুজুর রহমান]  
তেল ফসল দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তেলের উৎপাদন যথেষ্ট কম।  [মোঃ মাহফুজুর রহমান]  


'''ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ'''  বাংলাদেশের তৈলবীজ উৎপাদক ফসলের মধ্যে সরিষা (''Brassica species''), তিল (''Sesamum indicum''),  চীনাবাদাম (''Arachis hypogea''), সূর্যমুখী (''Helianthus annuus''), কুসুমফুল (''Carthamus tinctorius''), তিসি (''Linum usitatissimum''), সয়াবিন (''Glycine max'') ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কয়েক ডজন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ এসব তৈলবীজ উৎপাদক ফসল আক্রমণ করে, তবে এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাত্র কয়েকটি (সারণি )।  
'''''ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ'''''  বাংলাদেশের তৈলবীজ উৎপাদক ফসলের মধ্যে সরিষা (''Brassica species''), তিল (''Sesamum indicum''),  চীনাবাদাম (''Arachis hypogea''), সূর্যমুখী (''Helianthus annuus''), কুসুমফুল (''Carthamus tinctorius''), তিসি (''Linum usitatissimum''), সয়াবিন (''Glycine max'') ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কয়েক ডজন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ এসব তৈলবীজ উৎপাদক ফসল আক্রমণ করে, তবে এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাত্র কয়েকটি (সারণি )।  


সারণি তৈলবীজ উৎপাদক ফসলের ক্ষতিকর সাধারণ পতঙ্গ এবং এদের ক্ষতির ধরণ
''সারণি'' ৪ তৈলবীজ উৎপাদক ফসলের ক্ষতিকর সাধারণ পতঙ্গ এবং এদের ক্ষতির ধরণ।
{| class="table table-bordered"
|-
| সাধারণ নাম ।। বৈজ্ঞানিক নাম  ।। গোত্র ও বর্গের নাম  ।। তির ধরন
|-
| সরিষা
|-
| সরিষার জাবপোকা || ''Lipaphis erysimi'' || Aphididae: Homoptera || নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও শুঁটি থেকে রস চুষে খায়
|-
| সফাই || ''Athelia proxima lugens'' || Tenthredinidae: Hymenoptera || লার্ভা পাতা খায় 
|-
| প্রজাপতি || ''Delias eucharis'' || Pieridae: Lepidoptera || লার্ভা পাতা খায়
|-
| পাতার শুঁয়াপোকা  || ''Crocidolomia binotalis'' || Pyralidae: Lepidoptera || লার্ভা পাতা খায়, শুঁটি ছিদ্র করে ও গাছে জাল বুনে
|-
| তিল 
|-
| তিলশুঁটির বাগ || ''Eysarcoris ventralis'' || Pentatomidae: Hemiptera ||  নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও শুঁটি থেকে রস চুষে খায়
|-
| তিলের হক-মথ || ''Acherontia styx'' || Sphingidae: Lepidoptera ||  লার্ভা পাতা খায়
|-
| পাতা ও শুঁটির || ''Antigastra catalaunalis''  || Pyralidae: Lepidoptera ||  লার্ভা পাতা খায়
|-
| পাটের শুঁয়াপোকা  || ''Spilosoma obliqua'' || Arctiidae: Lepidoptera || লার্ভা পাতা খায়
|-
| মিরিড বাগ || ''Cyrtopeltis'' species || Miridae: Hemiptera  || নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতার রস চুষে এবং পাতায় ছিদ্র করে
|-
| চীনাবাদাম
|-
| পাতার বিটল  || ''Oxycetonia versicolor'' || Cetoniidae: Coleoptera ||  প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা খায়
|-
| চুঙ্গিপোকা  || ''Anarsia ephippias'' || Gelechiidae: Lepidoptera || পাতা দুমড়িয়ে তি করে
|-
| জেসিড  || ''Amrasca devastans'' || Cicadellidae: Homoptera || অপূর্ণদেহ কীট ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতার রস চুষে খায়
|-
| পাটের শুঁয়াপোকা  || ''Spilosoma obliqua''  || Arctiidae: Lepidoptera || লার্ভা পাতা খায়
|-
| কাটুই পোকা || ''Agrotis ipsilon'' || Noctuidae: Lepidoptera || জমির লেভেলে  গাছ কাটে
|-
| জাবপোকা  || ''Aphis craccivora'' || Aphididae: Homoptera || নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও কুঁড়ি থেকে রস চুষে খায়
|-
| উইপোকা || ''Odontotermes'' species ''Microtermis'' species ''Odontotermes obesus''  || Termitidae: Isoptera ||  মাটির নিচে গাছ ছিদ্র  করে
|-
| চীনাবাদামের থ্রিপস || ''Haplothrips indicus'' || Phlaeothripidae: Thysanoptera ||  অপরিণত ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও ফুলের রস খায়
|-
| সয়াবিন 
|-
| সয়াবিন বাগ  || ''Nezara viridula'' || Pentatomidae: Hemiptera ||  অপূর্ণদেহ কীট ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ উদ্ভিদের রস চুষে খায়
|-
| পাটের শুঁয়াপোকা || ''Spilosoma obliqua'' || Arctiidae: Lepidoptera || লার্ভা পাতা খায় ।। 
|-
| ল্যাবল্যাব বাগ || ''Coptosoma cribraria'' || Pentatomidae: Hemiptera ||  নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ উদ্ভিদের রস খায়
|-
| মিলিবাগ ।। ''Pseudococcus filamentosus'' || Pseudococcidae: Hemiptera ||  নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও ডগার রস চুষে খায়
|-
| সয়াবিনের শুঁয়াপোকা || ''Anarsia ephippias'' || Gelechiidae: Lepidoptera ||  লার্ভা পাতা খায়
|-
| পাতামোড়ক পতঙ্গ  || ''Hedylepta indicata'' || Pyralidae: Lepidoptera  ||  শুঁয়াপোকা পাতা মুড়িয়ে ফেলে
|-
| লিফ মাইনার || ''Aproaerema'' species || Gelechiidae: Lepidoptera ||  লার্ভা পাতায় শুড়ঙ্গ তৈরি করে
|-
| সয়াবিনের কাণ্ডমাছি || ''Ophiomyia phaseoli'' || Agromyzidae: Diptera || লার্ভা কচি চারা গাছে ছিদ্র করে
|-
| সাদামাছি  || ''Bemisia tabaci''  || Aleyrodidae: Homoptera  || নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতার রস খায়
|-
| ফি-বিটল  || ''Monolepta signata''  || Chrysomelidae: Coleoptera  ||  লার্ভা ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা খায়
|-
| সূর্যমুখী 
|-
| পাটের শুঁয়াপোকা || ''Spilosoma obliqua'' || Arctiidae: Lepidoptera ||  লার্ভা পাতা খায় 
|-
| ফি-বিটল  || ''Monolepta signata'' || Chrysomelidae: Coleoptera  || লার্ভা ও বিটল পাতা খায়
|-
| কুসুমফুল
|-
| ফি বিটল || ''Monolepta signata''  || Chrysomelidae: Coleoptera || লার্ভা ও বিটল পাতা খায়
|-
| মাজরা পোকা  || ''Melanogromyza'' species || Agromyzidae: Lepidoptera  || লার্ভা কাণ্ড ছিদ্র করে
|-
| জাবপোকা || ''Macrosiphum'' species  || Aphididae: Homoptera || নিম্ফ ও পূর্ণবয়স্ক পোকা পাতার রস চুষে খায়
|-
| তিসি 
|-
| তিসির গলমিজ  || ''Dasineura lini''  || Cecidomyiidae: Diptera || লার্ভা শুঁটি ছিদ্র করে
|-
| শুঁয়াপোকা || ''Spodoptera litura'' || Noctuidae: Lepidoptera ||  লার্ভা পাতা খায়
|-
| কাটুই পোকা || ''Agrotis ipsilon'' || Noctuidae: Lepidoptera  || লার্ভা উদ্ভিদের গোড়া কাটে
|}


সব ধরনের কীটপতঙ্গের মধ্যে সরিষার জাবপোকা এবং তিলের হক-মথ অনুকূল পরিবেশে মাঠপর্যায়ে তেল ফসলের সর্বাধিক ক্ষতিক করে।  [মোঃ ইব্রাহিম আলী]
সব ধরনের কীটপতঙ্গের মধ্যে সরিষার জাবপোকা এবং তিলের হক-মথ অনুকূল পরিবেশে মাঠপর্যায়ে তেল ফসলের সর্বাধিক ক্ষতিক করে।  [মোঃ ইব্রাহিম আলী]


'''রোগবালাই''' বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের তেলবীজ শস্য নানা ধরনের রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়। এতে অনেক সময় অর্থনৈতিকভাবে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
'''''রোগবালাই''''' বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের তেলবীজ শস্য নানা ধরনের রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়। এতে অনেক সময় অর্থনৈতিকভাবে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


সরিষা  বাংলাদেশে''' '''''Albugo candida'' ছত্রাক সৃষ্ট সাদা মরিচা এক সাধারণ রোগ। এ রোগে সরিষা গাছের উপরের অংশ আক্রান্ত হয়। এ রোগে পাতা ও কান্ডে সাদা বা হালকা-হলদে রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। সাধারণত এ দাগ পাতার নিচের দিকে দেখা দেয় এবং সংক্রমণের মারাত্মক অবস্থায় দাগগুলি পাতার উভয় পৃষ্ঠে বিস্তৃত হয়। ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়া এ রোগ বৃদ্ধিতে অনুকূল প্রভাব ফেলে।
সরিষা  বাংলাদেশে ''Albugo candida'' ছত্রাক সৃষ্ট সাদা মরিচা এক সাধারণ রোগ। এ রোগে সরিষা গাছের উপরের অংশ আক্রান্ত হয়। এ রোগে পাতা ও কান্ডে সাদা বা হালকা-হলদে রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। সাধারণত এ দাগ পাতার নিচের দিকে দেখা দেয় এবং সংক্রমণের মারাত্মক অবস্থায় দাগগুলি পাতার উভয় পৃষ্ঠে বিস্তৃত হয়। ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়া এ রোগ বৃদ্ধিতে অনুকূল প্রভাব ফেলে।


''Alternaria brassicae'' ও ''A. bracissicola'' ছত্রাক সৃষ্ট অলটারন্যারিয়া ধসা রোগ সরিষা ফসলের একটি বিস্তৃত ও মারাত্মক রোগ। পাতায় সৃষ্ট দাগ প্রাথমিকভাবে বেশ ছোট থাকে। খুব শীঘ্র এ দাগগুলি বেশ বড় আকার ধারণ করে ও প্রায় এক সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট হয়। শুরুতে নিচের দিকের পাতাগুলি আগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ প্রাথমিকভাবে বীজবাহিত। আর্দ্র, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এ রোগের বৃদ্ধিতে অনুকূল প্রভাব ফেলে।
''Alternaria brassicae'' ও ''A. bracissicola'' ছত্রাক সৃষ্ট অলটারন্যারিয়া ধসা রোগ সরিষা ফসলের একটি বিস্তৃত ও মারাত্মক রোগ। পাতায় সৃষ্ট দাগ প্রাথমিকভাবে বেশ ছোট থাকে। খুব শীঘ্র এ দাগগুলি বেশ বড় আকার ধারণ করে ও প্রায় এক সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট হয়। শুরুতে নিচের দিকের পাতাগুলি আগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ প্রাথমিকভাবে বীজবাহিত। আর্দ্র, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এ রোগের বৃদ্ধিতে অনুকূল প্রভাব ফেলে।


'''চীনাবাদাম  '''বাংলাদেশে ''Cercospora personata'' ও ''Cercospora arachidicola'' ছত্রাকদ্বয়ের সৃষ্ট চীনাবাদামের টিক্কা রোগটি খুব সাধারণ ও প্রধান রোগ। দুটি রোগজীবাণুই একই পাতায় কিছুটা পার্থক্যসহ দাগ সৃষ্টি করে থাকে। ''C. personata'' সৃষ্ট পাতায় দাগগুলি বৃত্তাকার, প্রায় ৩ থেকে ৮ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। এ ক্ষতগুলি সাধারণত গাঢ় বাদামি থেকে কালো রঙের হয় ও পাতার উভয় পৃষ্ঠেই দেখা যায়। অপরপক্ষে ''C. arachidicola'' সৃষ্ট রোগে পাতায় দাগগুলি চীনাবাদাম গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে দেখা দেয়। দাগগুলি বাদামি-লাল রঙের ও অনিয়ত বৃত্তাকার। বাতাসে বেশি আর্দ্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রা থাকলে এবং ঘন করে গাছ লাগানো হলে এ রোগ বেশি দেখা দেয়।
চীনাবাদাম  বাংলাদেশে ''Cercospora personata'' ও ''Cercospora arachidicola'' ছত্রাকদ্বয়ের সৃষ্ট চীনাবাদামের টিক্কা রোগটি খুব সাধারণ ও প্রধান রোগ। দুটি রোগজীবাণুই একই পাতায় কিছুটা পার্থক্যসহ দাগ সৃষ্টি করে থাকে। ''C. personata'' সৃষ্ট পাতায় দাগগুলি বৃত্তাকার, প্রায় ৩ থেকে ৮ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। এ ক্ষতগুলি সাধারণত গাঢ় বাদামি থেকে কালো রঙের হয় ও পাতার উভয় পৃষ্ঠেই দেখা যায়। অপরপক্ষে ''C. arachidicola'' সৃষ্ট রোগে পাতায় দাগগুলি চীনাবাদাম গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে দেখা দেয়। দাগগুলি বাদামি-লাল রঙের ও অনিয়ত বৃত্তাকার। বাতাসে বেশি আর্দ্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রা থাকলে এবং ঘন করে গাছ লাগানো হলে এ রোগ বেশি দেখা দেয়।


''Sclerotium rolfsii'' ছত্রাক সৃষ্ট চীনাবাদামের ধসা রোগ সারা বিশ্বে বিস্তৃত। এ ছত্রাকের আক্রমণে গাছের গোড়ায় হালকা বাদামি পচন দেখা দেয়। পচে যাওয়া স্থানে সরিষা দানার মতো স্কেলরোসিয়াগুলির সাথে মিশ্রিত অবস্থায় সাদাটে ও তুলার মতো ছত্রাকের মাইসেলিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
''Sclerotium rolfsii'' ছত্রাক সৃষ্ট চীনাবাদামের ধসা রোগ সারা বিশ্বে বিস্তৃত। এ ছত্রাকের আক্রমণে গাছের গোড়ায় হালকা বাদামি পচন দেখা দেয়। পচে যাওয়া স্থানে সরিষা দানার মতো স্কেলরোসিয়াগুলির সাথে মিশ্রিত অবস্থায় সাদাটে ও তুলার মতো ছত্রাকের মাইসেলিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
১০০ নং লাইন: ১৭২ নং লাইন:
চীনাবাদামের অপ্রধান রোগগুলো হলো- ভাইরাস সৃষ্ট চীনাবাদামের মোজাইক রোগ; Aspergillus, Rhizopus ও Penicillium প্রজাতির ছত্রাক আক্রমণে বীজ পচন; ''Rhizoctonia solani'' ছত্রাক সৃষ্ট কান্ড পচা; ''Puccinia arachidis'' ছত্রাক সৃষ্ট মরিচা রোগ ও ''Meloidogyne arenaria'' নিমাটোড দ্বারা সৃষ্ট শিকড়ে গুঁটি রোগ।
চীনাবাদামের অপ্রধান রোগগুলো হলো- ভাইরাস সৃষ্ট চীনাবাদামের মোজাইক রোগ; Aspergillus, Rhizopus ও Penicillium প্রজাতির ছত্রাক আক্রমণে বীজ পচন; ''Rhizoctonia solani'' ছত্রাক সৃষ্ট কান্ড পচা; ''Puccinia arachidis'' ছত্রাক সৃষ্ট মরিচা রোগ ও ''Meloidogyne arenaria'' নিমাটোড দ্বারা সৃষ্ট শিকড়ে গুঁটি রোগ।


''' সয়াবিন '''অ্যানথ্রাকনোজ সয়াবিনের অন্যতম প্রধান রোগ। ''Colletotrichum dematium'' var. ''truncata'' ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। সয়াবিন গাছের বৃদ্ধির প্রায় সব পর্যায়ে এ রোগের লক্ষণসমূহ স্পষ্টরূপে দেখা দেয়। ফসলের উপরের অংশে বিশেষ করে শুঁটি ও পুষ্পবৃন্তে এ রোগ বেশি হয়। রোগের লক্ষণ হিসেবে ধূসর থেকে লালচে বাদামি পচন ক্ষত লক্ষ্য করা যায়। এ ছত্রাক বীজবাহিত।
সয়াবিন অ্যানথ্রাকনোজ সয়াবিনের অন্যতম প্রধান রোগ। ''Colletotrichum dematium'' var. ''truncata'' ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। সয়াবিন গাছের বৃদ্ধির প্রায় সব পর্যায়ে এ রোগের লক্ষণসমূহ স্পষ্টরূপে দেখা দেয়। ফসলের উপরের অংশে বিশেষ করে শুঁটি ও পুষ্পবৃন্তে এ রোগ বেশি হয়। রোগের লক্ষণ হিসেবে ধূসর থেকে লালচে বাদামি পচন ক্ষত লক্ষ্য করা যায়। এ ছত্রাক বীজবাহিত।


''Phomopsis sojai'' ছত্রাকের আক্রমণে সয়াবিনের শুঁটি বা কান্ড ধসা রোগ হয়ে থাকে। সয়াবিন গাছের যে কোনো বায়বীয় অংশ ও মূল এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল। লক্ষণ হিসেবে কান্ড ও শুঁটিতে পিকনিডিয়া (pycnidia) বহনকারী ফুস্কুড়ির মতো স্পোর দেখা যায়। ''Septoria glycines'' ছত্রাক সৃষ্ট বাদামি দাগ রোগ হলে সয়াবিনের পাতায় হলুদ রঙের বৃত্তাকার বাদামি অথবা কোণাকার দাগ দেখা যায়। দাগগুলি সয়াবিন পাতায় বেশ কিছুটা স্থান জুড়ে গর্তের সৃষ্টি করে। কান্ড, শুঁটি ও বীজ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
''Phomopsis sojai'' ছত্রাকের আক্রমণে সয়াবিনের শুঁটি বা কান্ড ধসা রোগ হয়ে থাকে। সয়াবিন গাছের যে কোনো বায়বীয় অংশ ও মূল এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল। লক্ষণ হিসেবে কান্ড ও শুঁটিতে পিকনিডিয়া (pycnidia) বহনকারী ফুস্কুড়ির মতো স্পোর দেখা যায়। ''Septoria glycines'' ছত্রাক সৃষ্ট বাদামি দাগ রোগ হলে সয়াবিনের পাতায় হলুদ রঙের বৃত্তাকার বাদামি অথবা কোণাকার দাগ দেখা যায়। দাগগুলি সয়াবিন পাতায় বেশ কিছুটা স্থান জুড়ে গর্তের সৃষ্টি করে। কান্ড, শুঁটি ও বীজ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।


''তিসি'' মরিচা তিসির খুব সাধারণ রোগ। ''Melamspora lini'' সৃষ্ট এ রোগে তিসির পাতার উজ্জ্বল কমলা রঙের ইউরিডোসোরি দেখা দেয়। এ রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সোরির রঙ কালো হতে থাকে। এতে অপরিপক্ক অবস্থাতেই পাতাগুলি মারা যেতে পারে।
তিসি মরিচা তিসির খুব সাধারণ রোগ। ''Melamspora lini'' সৃষ্ট এ রোগে তিসির পাতার উজ্জ্বল কমলা রঙের ইউরিডোসোরি দেখা দেয়। এ রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সোরির রঙ কালো হতে থাকে। এতে অপরিপক্ক অবস্থাতেই পাতাগুলি মারা যেতে পারে।


''Fusarium oxysporum'' ছত্রাকের আক্রমণে তিসির নেতিয়ে পড়া রোগ হয়। এ রোগজীবাণুর কারণেই তিসির বৃদ্ধির যে কোনো পর্যায়ে মূলের পচন, ড্যাম্পিং অফ বা নেতিয়ে পড়া লক্ষণ দেখা দেয়। কান্ডের পরিবহন কলাগুচ্ছে বাদামি রঙের অাঁকাবাঁকা মাইসেলিয়াম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।  [আবুল খায়ের]
''Fusarium oxysporum'' ছত্রাকের আক্রমণে তিসির নেতিয়ে পড়া রোগ হয়। এ রোগজীবাণুর কারণেই তিসির বৃদ্ধির যে কোনো পর্যায়ে মূলের পচন, ড্যাম্পিং অফ বা নেতিয়ে পড়া লক্ষণ দেখা দেয়। কান্ডের পরিবহন কলাগুচ্ছে বাদামি রঙের অাঁকাবাঁকা মাইসেলিয়াম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।  [আবুল খায়ের]


আরও দেখুন চীনাবাদাম; তিল; তিসি; সরিষা; সয়াবিন; সূর্যমুখী।
''আরও দেখুন''  [[চীনাবাদাম|চীনাবাদাম]]; [[তিল|তিল]]; [[তিসি|তিসি]]; [[সরিষা|সরিষা]]; [[সয়াবিন|সয়াবিন]]; [[সূর্যমুখী|সূর্যমুখী]]।


[[en:Oil Plant]]
[[en:Oil Plant]]

০৫:১৮, ১ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

তেল উৎপাদক উদ্ভিদ :সূর্যমুখী

তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ (Oil plant)  খাবার তেল অথবা অন্য কোনো প্রয়োজনে ব্যবহার্য তেল উৎপাদনকারী উদ্ভিদ। বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ফসল তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদ। উদ্ভিজ্জ তেল তাপমাত্রার প্রতি সংবেদনশীলতা ভিত্তি করে দুটি দলে ভাগ করা হয়। এর একটি উদ্বায়ী (volatile), অন্যটি অউদ্বায়ী। বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি (aromatic) গাছপালা থেকে উদ্বায়ী তেল তৈরি হয়। এসব উদ্ভিদ প্রধানত Lauraceae, Myrtaceae, Umbelliferae, Labiatae, Compositae ইত্যাদি গোত্রের সদস্য। অধিকাংশ উদ্বায়ী তেল বিভিন্ন প্রসাধনী বা সুগন্ধি দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহূত হয়।

তেল উৎপাদক উদ্ভিদ : সরিষা

অউদ্বায়ী বা চর্বিযুক্ত তেল (Fatty Oils) সাধারণত ভোজ্য তেল হিসেবে অথবা অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন তেলপ্রদায়ী উদ্ভিদের বীজে শতকরা ৪০-৬০ ভাগ তেল জমা থাকতে পারে। অনেক উদ্ভিদের ফল, পাতা, কন্দ, কান্ড এবং অন্যান্য অংশও কম বেশি তেল ধারণ করে। চর্বিযুক্ত তেল পাওয়া যায় নানা গোত্রের বহু উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে। তবে প্রধানত তেল সংগ্রহ করা হয় Brassicaceae (Cruciferae), Asteraceae (Compositae), Fabaceae (Leguminosae), Euphorbiaceae, Pedaliaceae, Arecaceae (Palmae) ইত্যাদি গোত্রের কতক প্রজাতি থেকে। নিম্নে ১ এবং ২ নম্বর সারণিতে বাংলাদেশের প্রধান ও অপ্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদের তালিকা দেওয়া হলো:

সারণি ১ প্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদ।

স্থানীয় নাম বৈজ্ঞানিক নাম গোত্র ফসল উৎপাদনের মৌসুম    ব্যবহার
সরিষা Brassica species(কয়েকটি প্রজাতি ও জাত) Brassicaceae বার্ষিক, রবি ফসল প্রধান ভোজ্য তেল; আচার সংরক্ষণে; মাথায় ও দেহে মালিশের জন্য; বাতের ব্যথা উপশমে; খৈল গোখাদ্য
তিল Sesamum Indicum                Pedaliaceae বার্ষিক, রবি ও খরিপ ফসল রান্নার কাজে; মাথার তেল হিসেবে, সাবান তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য
তিসি Linum Usitatissimum Linaceae                বার্ষিক, রবি ফসল বার্নিশ; রং এবং কালি তৈরির উপাদান হিসেবে; খাবার তেল হিসেবেও ব্যবহার্য; খৈল গোখাদ্য
চীনাবাদাম Arachis Hypogea      Fabaceae বার্ষিক, রবি ও খরিপ ফসল খাবার তেল হিসেবে; মার্জারিন, পি-নাট বাটার এবং  ঘি তৈরিতে; বীজ বাদাম হিসেবে খাওয়া যায়
সূর্যমুখী Helianthus Annuus Asteraceae বার্ষিক খাবার তেল হিসেবে; সাবান, মার্জারিন, বার্নিশ, পেইন্ট ইত্যাদি তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য
সয়াবিন Glycine Max Fabaceae বার্ষিক খাবার তেল হিসেবে ব্যাপক ব্যবহূত; সয়াবিস্কুট, সয়াডাল,সয়াখিচুরি, সয়ারুটি, সয়ামার্জারিন ইত্যাদি তৈরিতে; সাবান, ছাপার কালি, পেইন্ট, প্রসাধনী তৈরিতে
নারিকেল Cocos Nucifera Arecaceae বহুবর্ষজীবী শোধিত তেল রান্নার কাজে ও অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য তৈরিতে; ক্যান্ডিবার, মার্জারিন ও মিষ্টান্ন তৈরিতে; মাথার তেল হিসেবে ও প্রসাধনী তৈরিতে

সারণি ২ অপ্রধান তেল উৎপাদক উদ্ভিদ।

স্থানীয় নাম বৈজ্ঞানিক নাম গোত্র ফসল উৎপাদনের মৌসুম    ব্যবহার
গর্জনতিল Guizotia Abyssinica Asteraceae বার্ষিক, রবি ফসল খাবার তেল হিসেবে; পেইন্ট ও সাবান তৈরিতে; খৈল গোখাদ্য ও সার হিসেবে
ভেরেন্ডা Ricinus Communis Euphorbiaceae একাধিক বর্ষজীবী প্রধানত যন্ত্রপাতি পিচ্ছিলকারক হিসেবে; রেচক পদার্থ হিসেবে, মাথার তেল হিসেবে; লোশন, সাবান, বার্নিশ, ফিনাইল ইত্যাদি তৈরিতে; চামড়া সংরক্ষণে
কুসুমফুল Carthamus Tinctorius Asteraceae বর্ষজীবী খাবার তেল হিসেবে; সাবান, পেইন্ট, বার্নিশ ইত্যাতি তৈরিতে
লেমন গ্রাস Cymbopogon Citratus Poaceae একাধিক বর্ষজীবী সাবান ও প্রসাধনী সামগ্রীর সুগন্ধিদায়ক উপাদান হিসেবে

২০০-১০ অর্থবছরে জাতীয় পর্যায়ে প্রধান তেল ফসল উৎপাদন এলাকা, চাষকৃত মোট জমির পরিমাণ এবং উৎপাদনের প্রাককলিত এক হিসাব ৩ নম্বর সারণিতে উল্লেখ করা হলো।

সারণি ৩  তেলপ্রদায়ী প্রধান ফসল, চাষকৃত জমির পরিমাণ, বার্ষিক উৎপাদন এবং প্রধান চাষ এলাকা (২০০৯-১০)

ফসলের নাম জমির পরিমাণ (হে.) উৎপাদন (মে টন) প্রধান চাষাবাদ এলাকা
সরিষা (দেশী) ৪,৩১,৪৬৯ ১,৫১,২৫১ টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ফরিদপুর, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, কুষ্টিয়া,
সরিষা (উচ্চ ফলনশীল) ১,৬৬,৭৮৫ ৭০,৬৭৭ দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী, রংপুর
তিল ৮৭,৮৫০ ৩২,৩০৬ ফরিদপুর, রাঙ্গামাটি, বরিশাল, দিনাজপুর, ঢাকা, কুমিল্লা, পাবনা
চীনাবাদাম (শীতকালীন) ৬৬,৩৮৫ ৪৩,০৬০ নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ,
চীনাবাদাম (গ্রীষ্মকালীন) ১৬,৬২২ ১০,৪০৭ বরিশাল, পটুয়াখালী, রংপুর, বগুড়া
তিসি ২৬,০৪৯ ৬,৮৭০ ঢাকা, সিলেট, বরিশাল, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, পাবনা, রাজশাহী, দিনাজপুর
নারিকেল (২০০৮-০৯) ৬,৮৬২ ৩,১৬,৪০৫ নোয়াখালী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফরিদপুর, খুলনা, পটুয়াখালী, যশোর

উৎস  কৃষি পরিসংখ্যান বর্ষগ্রন্থ, ২০১০।

তেল ফসল দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে চাষ হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তেলের উৎপাদন যথেষ্ট কম। [মোঃ মাহফুজুর রহমান]

ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ  বাংলাদেশের তৈলবীজ উৎপাদক ফসলের মধ্যে সরিষা (Brassica species), তিল (Sesamum indicum),  চীনাবাদাম (Arachis hypogea), সূর্যমুখী (Helianthus annuus), কুসুমফুল (Carthamus tinctorius), তিসি (Linum usitatissimum), সয়াবিন (Glycine max) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কয়েক ডজন ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ এসব তৈলবীজ উৎপাদক ফসল আক্রমণ করে, তবে এর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাত্র কয়েকটি (সারণি ৪)।

সারণি ৪ তৈলবীজ উৎপাদক ফসলের ক্ষতিকর সাধারণ পতঙ্গ এবং এদের ক্ষতির ধরণ।

সাধারণ নাম ।। বৈজ্ঞানিক নাম ।। গোত্র ও বর্গের নাম ।। তির ধরন
সরিষা
সরিষার জাবপোকা Lipaphis erysimi Aphididae: Homoptera নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও শুঁটি থেকে রস চুষে খায়
সফাই Athelia proxima lugens Tenthredinidae: Hymenoptera লার্ভা পাতা খায়
প্রজাপতি Delias eucharis Pieridae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়
পাতার শুঁয়াপোকা Crocidolomia binotalis Pyralidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়, শুঁটি ছিদ্র করে ও গাছে জাল বুনে
তিল
তিলশুঁটির বাগ Eysarcoris ventralis Pentatomidae: Hemiptera নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও শুঁটি থেকে রস চুষে খায়
তিলের হক-মথ Acherontia styx Sphingidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়
পাতা ও শুঁটির Antigastra catalaunalis Pyralidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়
পাটের শুঁয়াপোকা Spilosoma obliqua Arctiidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়
মিরিড বাগ Cyrtopeltis species Miridae: Hemiptera নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতার রস চুষে এবং পাতায় ছিদ্র করে
চীনাবাদাম
পাতার বিটল Oxycetonia versicolor Cetoniidae: Coleoptera প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা খায়
চুঙ্গিপোকা Anarsia ephippias Gelechiidae: Lepidoptera পাতা দুমড়িয়ে তি করে
জেসিড Amrasca devastans Cicadellidae: Homoptera অপূর্ণদেহ কীট ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতার রস চুষে খায়
পাটের শুঁয়াপোকা Spilosoma obliqua Arctiidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়
কাটুই পোকা Agrotis ipsilon Noctuidae: Lepidoptera জমির লেভেলে গাছ কাটে
জাবপোকা Aphis craccivora Aphididae: Homoptera নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও কুঁড়ি থেকে রস চুষে খায়
উইপোকা Odontotermes species Microtermis species Odontotermes obesus Termitidae: Isoptera মাটির নিচে গাছ ছিদ্র করে
চীনাবাদামের থ্রিপস Haplothrips indicus Phlaeothripidae: Thysanoptera অপরিণত ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও ফুলের রস খায়
সয়াবিন
সয়াবিন বাগ Nezara viridula Pentatomidae: Hemiptera অপূর্ণদেহ কীট ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ উদ্ভিদের রস চুষে খায়
পাটের শুঁয়াপোকা Spilosoma obliqua Arctiidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায় ।।
ল্যাবল্যাব বাগ Coptosoma cribraria Pentatomidae: Hemiptera নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ উদ্ভিদের রস খায়
মিলিবাগ ।। Pseudococcus filamentosus Pseudococcidae: Hemiptera নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা ও ডগার রস চুষে খায়
সয়াবিনের শুঁয়াপোকা Anarsia ephippias Gelechiidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়
পাতামোড়ক পতঙ্গ Hedylepta indicata Pyralidae: Lepidoptera শুঁয়াপোকা পাতা মুড়িয়ে ফেলে
লিফ মাইনার Aproaerema species Gelechiidae: Lepidoptera লার্ভা পাতায় শুড়ঙ্গ তৈরি করে
সয়াবিনের কাণ্ডমাছি Ophiomyia phaseoli Agromyzidae: Diptera লার্ভা কচি চারা গাছে ছিদ্র করে
সাদামাছি Bemisia tabaci Aleyrodidae: Homoptera নিম্ফ ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতার রস খায়
ফি-বিটল Monolepta signata Chrysomelidae: Coleoptera লার্ভা ও প্রাপ্তবয়স্ক পতঙ্গ পাতা খায়
সূর্যমুখী
পাটের শুঁয়াপোকা Spilosoma obliqua Arctiidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়
ফি-বিটল Monolepta signata Chrysomelidae: Coleoptera লার্ভা ও বিটল পাতা খায়
কুসুমফুল
ফি বিটল Monolepta signata Chrysomelidae: Coleoptera লার্ভা ও বিটল পাতা খায়
মাজরা পোকা Melanogromyza species Agromyzidae: Lepidoptera লার্ভা কাণ্ড ছিদ্র করে
জাবপোকা Macrosiphum species Aphididae: Homoptera নিম্ফ ও পূর্ণবয়স্ক পোকা পাতার রস চুষে খায়
তিসি
তিসির গলমিজ Dasineura lini Cecidomyiidae: Diptera লার্ভা শুঁটি ছিদ্র করে
শুঁয়াপোকা Spodoptera litura Noctuidae: Lepidoptera লার্ভা পাতা খায়
কাটুই পোকা Agrotis ipsilon Noctuidae: Lepidoptera লার্ভা উদ্ভিদের গোড়া কাটে

সব ধরনের কীটপতঙ্গের মধ্যে সরিষার জাবপোকা এবং তিলের হক-মথ অনুকূল পরিবেশে মাঠপর্যায়ে তেল ফসলের সর্বাধিক ক্ষতিক করে।  [মোঃ ইব্রাহিম আলী]

রোগবালাই বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের তেলবীজ শস্য নানা ধরনের রোগবালাই দ্বারা আক্রান্ত হয়। এতে অনেক সময় অর্থনৈতিকভাবে ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সরিষা  বাংলাদেশে Albugo candida ছত্রাক সৃষ্ট সাদা মরিচা এক সাধারণ রোগ। এ রোগে সরিষা গাছের উপরের অংশ আক্রান্ত হয়। এ রোগে পাতা ও কান্ডে সাদা বা হালকা-হলদে রঙের ছোট ছোট দাগ দেখা যায়। সাধারণত এ দাগ পাতার নিচের দিকে দেখা দেয় এবং সংক্রমণের মারাত্মক অবস্থায় দাগগুলি পাতার উভয় পৃষ্ঠে বিস্তৃত হয়। ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়া এ রোগ বৃদ্ধিতে অনুকূল প্রভাব ফেলে।

Alternaria brassicaeA. bracissicola ছত্রাক সৃষ্ট অলটারন্যারিয়া ধসা রোগ সরিষা ফসলের একটি বিস্তৃত ও মারাত্মক রোগ। পাতায় সৃষ্ট দাগ প্রাথমিকভাবে বেশ ছোট থাকে। খুব শীঘ্র এ দাগগুলি বেশ বড় আকার ধারণ করে ও প্রায় এক সেন্টিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট হয়। শুরুতে নিচের দিকের পাতাগুলি আগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ প্রাথমিকভাবে বীজবাহিত। আর্দ্র, কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এ রোগের বৃদ্ধিতে অনুকূল প্রভাব ফেলে।

চীনাবাদাম  বাংলাদেশে Cercospora personataCercospora arachidicola ছত্রাকদ্বয়ের সৃষ্ট চীনাবাদামের টিক্কা রোগটি খুব সাধারণ ও প্রধান রোগ। দুটি রোগজীবাণুই একই পাতায় কিছুটা পার্থক্যসহ দাগ সৃষ্টি করে থাকে। C. personata সৃষ্ট পাতায় দাগগুলি বৃত্তাকার, প্রায় ৩ থেকে ৮ মিমি ব্যাসবিশিষ্ট। এ ক্ষতগুলি সাধারণত গাঢ় বাদামি থেকে কালো রঙের হয় ও পাতার উভয় পৃষ্ঠেই দেখা যায়। অপরপক্ষে C. arachidicola সৃষ্ট রোগে পাতায় দাগগুলি চীনাবাদাম গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধি পর্যায়ে দেখা দেয়। দাগগুলি বাদামি-লাল রঙের ও অনিয়ত বৃত্তাকার। বাতাসে বেশি আর্দ্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রা থাকলে এবং ঘন করে গাছ লাগানো হলে এ রোগ বেশি দেখা দেয়।

Sclerotium rolfsii ছত্রাক সৃষ্ট চীনাবাদামের ধসা রোগ সারা বিশ্বে বিস্তৃত। এ ছত্রাকের আক্রমণে গাছের গোড়ায় হালকা বাদামি পচন দেখা দেয়। পচে যাওয়া স্থানে সরিষা দানার মতো স্কেলরোসিয়াগুলির সাথে মিশ্রিত অবস্থায় সাদাটে ও তুলার মতো ছত্রাকের মাইসেলিয়ামের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

চীনাবাদামের অপ্রধান রোগগুলো হলো- ভাইরাস সৃষ্ট চীনাবাদামের মোজাইক রোগ; Aspergillus, Rhizopus ও Penicillium প্রজাতির ছত্রাক আক্রমণে বীজ পচন; Rhizoctonia solani ছত্রাক সৃষ্ট কান্ড পচা; Puccinia arachidis ছত্রাক সৃষ্ট মরিচা রোগ ও Meloidogyne arenaria নিমাটোড দ্বারা সৃষ্ট শিকড়ে গুঁটি রোগ।

সয়াবিন অ্যানথ্রাকনোজ সয়াবিনের অন্যতম প্রধান রোগ। Colletotrichum dematium var. truncata ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। সয়াবিন গাছের বৃদ্ধির প্রায় সব পর্যায়ে এ রোগের লক্ষণসমূহ স্পষ্টরূপে দেখা দেয়। ফসলের উপরের অংশে বিশেষ করে শুঁটি ও পুষ্পবৃন্তে এ রোগ বেশি হয়। রোগের লক্ষণ হিসেবে ধূসর থেকে লালচে বাদামি পচন ক্ষত লক্ষ্য করা যায়। এ ছত্রাক বীজবাহিত।

Phomopsis sojai ছত্রাকের আক্রমণে সয়াবিনের শুঁটি বা কান্ড ধসা রোগ হয়ে থাকে। সয়াবিন গাছের যে কোনো বায়বীয় অংশ ও মূল এ রোগের প্রতি সংবেদনশীল। লক্ষণ হিসেবে কান্ড ও শুঁটিতে পিকনিডিয়া (pycnidia) বহনকারী ফুস্কুড়ির মতো স্পোর দেখা যায়। Septoria glycines ছত্রাক সৃষ্ট বাদামি দাগ রোগ হলে সয়াবিনের পাতায় হলুদ রঙের বৃত্তাকার বাদামি অথবা কোণাকার দাগ দেখা যায়। দাগগুলি সয়াবিন পাতায় বেশ কিছুটা স্থান জুড়ে গর্তের সৃষ্টি করে। কান্ড, শুঁটি ও বীজ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

তিসি মরিচা তিসির খুব সাধারণ রোগ। Melamspora lini সৃষ্ট এ রোগে তিসির পাতার উজ্জ্বল কমলা রঙের ইউরিডোসোরি দেখা দেয়। এ রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সোরির রঙ কালো হতে থাকে। এতে অপরিপক্ক অবস্থাতেই পাতাগুলি মারা যেতে পারে।

Fusarium oxysporum ছত্রাকের আক্রমণে তিসির নেতিয়ে পড়া রোগ হয়। এ রোগজীবাণুর কারণেই তিসির বৃদ্ধির যে কোনো পর্যায়ে মূলের পচন, ড্যাম্পিং অফ বা নেতিয়ে পড়া লক্ষণ দেখা দেয়। কান্ডের পরিবহন কলাগুচ্ছে বাদামি রঙের অাঁকাবাঁকা মাইসেলিয়াম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।  [আবুল খায়ের]

আরও দেখুন চীনাবাদাম; তিল; তিসি; সরিষা; সয়াবিন; সূর্যমুখী