চাকলাপুঞ্জি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''চাকলাপুঞ্জি'''  হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানা সদরের প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে চান্দির মাজার বাস স্ট্যান্ডের নিকট অবস্থিত একটি নবোপলীয় প্রত্নক্ষেত্র। এখানে ঝোপ-ঝাড়ে আবৃত কয়েকটি ছোট টিলা রয়েছে এবং চারপাশে রয়েছে কিছু দীর্ঘস্থায়ী বৃক্ষ। বালু নদী নামে পরিচিত একটি ছোট স্রোতস্বিনী এ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুতাং নদীতে পড়েছে। স্রোতস্বিনীটি বর্যাকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় প্রায় শুকনো থাকে।
'''চাকলাপুঞ্জি'''  হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানা সদরের প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে চান্দির মাজার বাস স্ট্যান্ডের নিকট অবস্থিত একটি নবোপলীয় প্রত্নক্ষেত্র। এখানে ঝোপ-ঝাড়ে আবৃত কয়েকটি ছোট টিলা রয়েছে এবং চারপাশে রয়েছে কিছু দীর্ঘস্থায়ী বৃক্ষ। বালু নদী নামে পরিচিত একটি ছোট স্রোতস্বিনী এ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুতাং নদীতে পড়েছে। স্রোতস্বিনীটি বর্যাকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় প্রায় শুকনো থাকে।


[[Image:Chaklapunji.jpg|thumb|400px|right|হাত কুঠার ও হাত ছুরি, চাকলাপুঞ্জি]]
এ স্থান থেকে মোট ৮৩টি প্রত্নবস্ত্ত আবিস্কার হয়েছে। এগুলি বানানো হয়েছিল এ অঞ্চলে প্রাপ্ত ফসিল-কাঠ দিয়ে (স্থানীয়ভাবে বলা হয় গামাই পাথর) এবং তা পাওয়া গিয়েছে বালু নদীতে। কোনো বিশিষ্ট ফসিল-কাঠের টুকরো এবং এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রত্নবস্ত্তসমূহ দেখে বোঝা যায় যে, এগুলি খুব দূর থেকে আসে নি। সম্ভবত, এগুলি নিকটস্থ ক্ষুদ্র পাহাড় থেকে বাহিত হয়েছে। প্রত্নবস্ত্তগুলির মধ্যে আটটি হচ্ছে অস্ত্র। যেমন, ছুরি, ব্লেড, অসম্পূর্ণ সূক্ষ্মাগ্র অস্ত্র, পাতলা ফসিল-কাঠের সূক্ষ্মাগ্র অস্ত্র, একপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র, শেষপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র, একপ্রান্ত এবং শেষপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র ও ছেদক। অস্ত্র ছাড়াও নদীগর্ভে পাওয়া গিয়েছে অল্পবয়সের গবাদি পশুর আংশিক প্রস্তরিভূত হাড়। হাড়ের উভয় দিকে বাঁকা কাটা দাগ ছিল। এতে করে বোঝা যায় যে, নবোপলীয় যুগের মানুষ তাদের জীবন ধারণের জন্য পশু শিকার করত।  
এ স্থান থেকে মোট ৮৩টি প্রত্নবস্ত্ত আবিস্কার হয়েছে। এগুলি বানানো হয়েছিল এ অঞ্চলে প্রাপ্ত ফসিল-কাঠ দিয়ে (স্থানীয়ভাবে বলা হয় গামাই পাথর) এবং তা পাওয়া গিয়েছে বালু নদীতে। কোনো বিশিষ্ট ফসিল-কাঠের টুকরো এবং এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রত্নবস্ত্তসমূহ দেখে বোঝা যায় যে, এগুলি খুব দূর থেকে আসে নি। সম্ভবত, এগুলি নিকটস্থ ক্ষুদ্র পাহাড় থেকে বাহিত হয়েছে। প্রত্নবস্ত্তগুলির মধ্যে আটটি হচ্ছে অস্ত্র। যেমন, ছুরি, ব্লেড, অসম্পূর্ণ সূক্ষ্মাগ্র অস্ত্র, পাতলা ফসিল-কাঠের সূক্ষ্মাগ্র অস্ত্র, একপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র, শেষপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র, একপ্রান্ত এবং শেষপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র ও ছেদক। অস্ত্র ছাড়াও নদীগর্ভে পাওয়া গিয়েছে অল্পবয়সের গবাদি পশুর আংশিক প্রস্তরিভূত হাড়। হাড়ের উভয় দিকে বাঁকা কাটা দাগ ছিল। এতে করে বোঝা যায় যে, নবোপলীয় যুগের মানুষ তাদের জীবন ধারণের জন্য পশু শিকার করত।  
[[Image:Chaklapunji.jpg|thumb|right|হাত কুঠার ও হাত ছুরি, চাকলাপুঞ্জি]]


একটি রক্তিমাভ গুটিকা বা [[পুঁতি|পুঁতি]] পাওয়া গিয়েছে। পরিমার্জিত ও গোলাকার এ পুঁতিটি পাওয়া গিয়েছে চান্দির মাজারের নিকট বালু নদীর তীরে। নবোপলীয় দ্রব্য সামগ্রীর সঙ্গে পুঁতিটিকে সম্পর্কিত করা বেশ কঠিন। এটি নিকট ভবিষ্যতে প্রাগৈতিহাসিক ও প্রায় ঐতিহাসিক যুগের গবেষণায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে। যেহেতু এ নবোপলীয় দ্রব্য সামগ্রী মাটির কোনো সুনির্দিষ্ট স্তর থেকে পাওয়া যায় নি। তাই এ অঞ্চলে কখন নবোপলীয় মানুষ বসতি গড়েছিল তা বলা বেশ কঠিন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের নবোপলীয় প্রত্নস্থলের রেডিও কার্বনে নির্ধারিত তারিখ আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। চাকলাপুঞ্জি নবোপলীয় প্রত্নস্থলটি ত্রিপুরা নবোপলীয় প্রত্নস্থলের প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। দু অঞ্চলের দ্রব্য নির্মাণের উপকরণ এবং দ্রব্যাদিও ছিল অভিন্ন। তাই চাকলাপুঞ্জি নবোপলীয় প্রত্ন অঞ্চলও আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বা তার কিছু পরে গড়ে উঠেছিল বলে মনে করা যায়।  [এম.এম হক]
একটি রক্তিমাভ গুটিকা বা [[পুঁতি|পুঁতি]] পাওয়া গিয়েছে। পরিমার্জিত ও গোলাকার এ পুঁতিটি পাওয়া গিয়েছে চান্দির মাজারের নিকট বালু নদীর তীরে। নবোপলীয় দ্রব্য সামগ্রীর সঙ্গে পুঁতিটিকে সম্পর্কিত করা বেশ কঠিন। এটি নিকট ভবিষ্যতে প্রাগৈতিহাসিক ও প্রায় ঐতিহাসিক যুগের গবেষণায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে। যেহেতু এ নবোপলীয় দ্রব্য সামগ্রী মাটির কোনো সুনির্দিষ্ট স্তর থেকে পাওয়া যায় নি। তাই এ অঞ্চলে কখন নবোপলীয় মানুষ বসতি গড়েছিল তা বলা বেশ কঠিন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের নবোপলীয় প্রত্নস্থলের রেডিও কার্বনে নির্ধারিত তারিখ আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। চাকলাপুঞ্জি নবোপলীয় প্রত্নস্থলটি ত্রিপুরা নবোপলীয় প্রত্নস্থলের প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। দু অঞ্চলের দ্রব্য নির্মাণের উপকরণ এবং দ্রব্যাদিও ছিল অভিন্ন। তাই চাকলাপুঞ্জি নবোপলীয় প্রত্ন অঞ্চলও আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বা তার কিছু পরে গড়ে উঠেছিল বলে মনে করা যায়।  [এম.এম হক]

১০:১৫, ২১ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

চাকলাপুঞ্জি  হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট থানা সদরের প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে চান্দির মাজার বাস স্ট্যান্ডের নিকট অবস্থিত একটি নবোপলীয় প্রত্নক্ষেত্র। এখানে ঝোপ-ঝাড়ে আবৃত কয়েকটি ছোট টিলা রয়েছে এবং চারপাশে রয়েছে কিছু দীর্ঘস্থায়ী বৃক্ষ। বালু নদী নামে পরিচিত একটি ছোট স্রোতস্বিনী এ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুতাং নদীতে পড়েছে। স্রোতস্বিনীটি বর্যাকাল ছাড়া বছরের অন্যান্য সময় প্রায় শুকনো থাকে।

হাত কুঠার ও হাত ছুরি, চাকলাপুঞ্জি

এ স্থান থেকে মোট ৮৩টি প্রত্নবস্ত্ত আবিস্কার হয়েছে। এগুলি বানানো হয়েছিল এ অঞ্চলে প্রাপ্ত ফসিল-কাঠ দিয়ে (স্থানীয়ভাবে বলা হয় গামাই পাথর) এবং তা পাওয়া গিয়েছে বালু নদীতে। কোনো বিশিষ্ট ফসিল-কাঠের টুকরো এবং এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রত্নবস্ত্তসমূহ দেখে বোঝা যায় যে, এগুলি খুব দূর থেকে আসে নি। সম্ভবত, এগুলি নিকটস্থ ক্ষুদ্র পাহাড় থেকে বাহিত হয়েছে। প্রত্নবস্ত্তগুলির মধ্যে আটটি হচ্ছে অস্ত্র। যেমন, ছুরি, ব্লেড, অসম্পূর্ণ সূক্ষ্মাগ্র অস্ত্র, পাতলা ফসিল-কাঠের সূক্ষ্মাগ্র অস্ত্র, একপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র, শেষপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র, একপ্রান্ত এবং শেষপ্রান্ত তীক্ষ্ণ চাঁছা ছিলার অস্ত্র ও ছেদক। অস্ত্র ছাড়াও নদীগর্ভে পাওয়া গিয়েছে অল্পবয়সের গবাদি পশুর আংশিক প্রস্তরিভূত হাড়। হাড়ের উভয় দিকে বাঁকা কাটা দাগ ছিল। এতে করে বোঝা যায় যে, নবোপলীয় যুগের মানুষ তাদের জীবন ধারণের জন্য পশু শিকার করত।

একটি রক্তিমাভ গুটিকা বা পুঁতি পাওয়া গিয়েছে। পরিমার্জিত ও গোলাকার এ পুঁতিটি পাওয়া গিয়েছে চান্দির মাজারের নিকট বালু নদীর তীরে। নবোপলীয় দ্রব্য সামগ্রীর সঙ্গে পুঁতিটিকে সম্পর্কিত করা বেশ কঠিন। এটি নিকট ভবিষ্যতে প্রাগৈতিহাসিক ও প্রায় ঐতিহাসিক যুগের গবেষণায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে ব্যবহূত হতে পারে। যেহেতু এ নবোপলীয় দ্রব্য সামগ্রী মাটির কোনো সুনির্দিষ্ট স্তর থেকে পাওয়া যায় নি। তাই এ অঞ্চলে কখন নবোপলীয় মানুষ বসতি গড়েছিল তা বলা বেশ কঠিন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের নবোপলীয় প্রত্নস্থলের রেডিও কার্বনে নির্ধারিত তারিখ আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। চাকলাপুঞ্জি নবোপলীয় প্রত্নস্থলটি ত্রিপুরা নবোপলীয় প্রত্নস্থলের প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। দু অঞ্চলের দ্রব্য নির্মাণের উপকরণ এবং দ্রব্যাদিও ছিল অভিন্ন। তাই চাকলাপুঞ্জি নবোপলীয় প্রত্ন অঞ্চলও আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ বা তার কিছু পরে গড়ে উঠেছিল বলে মনে করা যায়।  [এম.এম হক]

গ্রন্থপঞ্জি  TC Sharma, "Prehistoric Situation in North-East India", Archaeology of North-Eastern India, New Delhi, 1991; MM Hoque, SMK Ahsan and S Hoque, "Prehistory of Chunarughat and Sylhet : A Preliminary Study", Sylhet: History and Heritage, Bangladesh Itihas Samiti, Dhaka,1999.