গ্রামবার্তা প্রকাশিকা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:২৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

গ্রামবার্তা প্রকাশিকা  উনিশ শতকের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাসিক পত্রিকা। ১৮৬৩ সালের এপ্রিল মাসে  কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের সম্পাদনায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরের বছর (১২৭১ বঙ্গাব্দের  আষাঢ়) থেকে এটি পাক্ষিক এবং ১৮৭১ সাল (১২৭৮ বঙ্গাব্দের  বৈশাখ) থেকে সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। প্রথমদিকে পত্রিকাটি মুদ্রিত হতো কলকাতার গিরিশ বিদ্যারত্ন প্রেস থেকে; পরে ১৮৬৪ সালে কুমারখালিতে মথুরানাথ যন্ত্র স্থাপিত হলে সেখান থেকে মুদ্রিত হতে থাকে। এ ছাপাখানাটি ১৮৭৩ সালে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়র পিতা মথুরানাথ মৈত্রেয় হরিনাথকে দান করেন।

গ্রামবার্তা প্রকাশিকায়  সাহিত্যদর্শন, বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হতো। সমসাময়িক কালের সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদ জানিয়ে লেখা নিবন্ধ ও সংবাদ প্রকাশ করে হরিনাথ তখন বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। ব্রিটিশ নীলকরদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপোষহীন। সব ধরনের বাধা উপেক্ষা করে তিনি কুসীদজীবী ও  নীলকর সাহেবদের শোষণ ও নিপীড়নের কাহিনী নির্দ্বিধায় প্রকাশ করেন।

গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় তৎকালীন  বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের খ্যাতনামা পন্ডিতরা লিখতেন। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্নবিষয়ক প্রবন্ধ,  ছড়া ইত্যাদিও এতে প্রকাশিত হতো। প্রখ্যাত মুসলিম লেখক মীর মশাররফ হোসেনের সাহিত্যচর্চার হাতেখড়িও হয় এ পত্রিকার মাধ্যমে। তিনি প্রথমে এর একজন মফঃস্বল সাংবাদিক ছিলেন। ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় এ পত্রিকায় তাঁর অনেক লেখা প্রকাশিত হয়। হরিনাথ ছিলেন তাঁর সাহিত্যগুরু। এ পত্রিকার মাধ্যমেই তিনি পরবর্তীকালে মুসলমান রচিত আধুনিক বাংলা সাহিত্যে সমন্বয়ধর্মী ধারার প্রবর্তক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন, যা পরবর্তী সময়ে বহু মুসলিম সাহিত্যিক কর্তৃক অনুসৃত হয়েছে। হিমালয় ভ্রমণকাহিনীখ্যাত লেখক ও সাংবাদিক জলধর সেনের সাহিত্যচর্চাও শুরু হয় এ পত্রিকার মাধ্যমে।

আঠারো বছর গ্রামবার্তা প্রকাশিকা সম্পাদনা করার পর সাংবাদিকতা ত্যাগ করে হরিনাথ ধর্মসাধনায় মনোনিবেশ করেন। এ পত্রিকার মাধ্যমে সুদীর্ঘকাল ধরে বঙ্গদেশে শিক্ষার প্রসার ও সর্ব প্রকার শোষণের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম করেছেন।

[মো: মাসুদ পারভেজ]