কোদালি বক
কোদালি বক (Spoonbill) ঠোঁটের অগ্রভাগ চামচের মতো এমন বৈশিষ্ট্যের Threskiornithidae গোত্রের পাখি। বিভিন্ন জলাশয়ের পানিতে ঠোঁট এপাশ থেকে ওপাশে টেনে এরা খাবার সংগ্রহ করে। আইবিসসহ বিশ্বে এ গোত্রের প্রজাতি সংখ্যা ৬, বাংলাদেশে রয়েছে একটি। ঠোঁট লম্বা ও প্রায় সোজা, মাঝখানে সরু ও আগা চ্যাপ্টা; এসব বৈশিষ্ট্যে এটি আইবিস থেকে পৃথক। প্রজনন মৌসুমে আইবিস ও বকদের সঙ্গে অনেক সময়ে এদের একত্রে দলবদ্ধভাবে দেখা যায়।
এই অদ্ভুত ধরনের পাখির সমাদর বিশ্বময়। লম্বা ও চ্যাপ্টা চামচের মতো ঠোঁট পানিতে দ্রুত চালানোর সময় আংশিক খোলা থাকে যতক্ষণ না কোনো শিকার স্পর্শ করে। অতিসংবেদী স্নায়ুপ্রান্তগুলি শিকার স্পর্শমাত্র ঠোঁট বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর পাখি মাথা উঁচিয়ে শিকারটি গলায় ফেলে উদরস্থ করে।
বাংলাদেশে কোদালি বা খুন্তি বক কদাচিৎ দেখা যায়। লম্বা পা ও লম্বা গলাওয়ালা তুষারশুভ্র জলাভূমির এ পাখির কালো-হলুদ রঙের দীর্ঘ ঠোঁটের আগা চামচাকার। ঘাড়ের ও গলার একাংশ গাঢ় লাল-হলুদ। প্রজননকালে লম্বা সাদা রঙের একটি গ্রীবা-ঝুঁটি দেখা দেয়। বাচ্চাদের থাকে স্বাভাবিক আকৃতির ঠোঁট যা ওরা বড় হলে ‘চামচের’ আকার ধারণ করে। গৃহপালিত হাঁসের আকারের এ পাখি প্রায় ৬০ সেমি লম্বা। দলবদ্ধ হয়ে কোদালি বক (৫০টি বা ততোধিক), কখনও আইবিস, বক ও অন্যান্য জলচর পাখির সঙ্গে একত্রে থাকে।
ব্যাঙাচি, কোলাব্যাঙ, শামুক, ঝিনুক, কীটপতঙ্গ ও আগাছা এদের প্রধান খাদ্য। সাধারণত ডাকে না, প্রজনন ঋতুতে অনুচ্চ খোঁতখোঁত ও ঠোঁটের কটকট আওয়াজ শোনা যায়। জুন-নভেম্বরে বাসা বাঁধে। মাঝারি আকারের গাছে ডালপালার টুকরা দিয়ে মাচানের মতো বড় বাসা বানায় এবং তাতে পাতা বা ঘাসের আস্তর বিছায়। ডিম পাড়ে ৩-৪টি, রং সাদা, তাতে থাকে লালচে-বাদামি ছিটা। উপকূলীয় জলাভূমি, বিল, নদী ও জোয়ারধৌত খাড়িতে এদের বিচরণ। আবাসস্থল ধ্বংস ও ব্যাপক শিকারের জন্যই মূলত বিপন্ন। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, চীন, জাপান, তাইওয়ান, সিরিয়া এবং মিশরেও এ পাখি বিস্তৃত। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]