করিম, এ.কিউ.এম বজলুল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:২২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

করিম, এ.কিউ.এম বজলুল  (১৯২০-১৯৯৮)  শিক্ষাবিদ ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানী। তিনি বি করিম নামেই অধিক পরিচিত। বজলুল করিম ১৯২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার অন্তর্গত কলমা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৬ সালে এন্ট্রান্স, ১৯৩৮ সালে ইন্টারমিডিয়েট এবং ১৯৪০ সালে বি.এসসি (পাস) এবং আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪২ সালে রসায়ন শাস্ত্রে এম.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন। বজলুল করিম তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কলকাতায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদানের মধ্য দিয়ে। পরবর্তী সময়ে তিনি যাদবপুর কলেজে একজন জুনিয়র প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন এবং তারও পরে খাদ্য ও ঔষধ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কেমিক্যাল স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন ল্যাবরেটরিতে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৪৫ সালে তিনি পিএইচ.ডি গবেষণার উদ্দেশ্যে লন্ডন গমন করেন। সেখানকার ইম্পেরিয়াল কলেজে কৃষি রসায়ন শাস্ত্রে ভর্তি হন এবং ১৯৪৮ সালে ‘Residual Effect of Fertilisers on the Growth and Yield of Potatoes’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৪৯ সালে লন্ডন থেকে প্রত্যাবর্তন করে ড. বি করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব প্রতিষ্ঠিত মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে তিনি রিডার পদে উন্নীত হন। আমেরিকান একাডেমি অব সায়েন্সেস কর্তৃক ভিজিটিং সাইন্টিস্ট হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়ে ড. বজলুল করিম আমেরিকা গমন করেন এবং সেখানকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভিস ক্যাম্পাসে মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে যোগদান করেন। ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেন। আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে এসে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালের শেষ দিকে তিনি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

বজলুল করিম

১৯৬৭ সালে অধ্যাপক করিম ‘সয়েল সার্ভে অব পাকিস্তান’ প্রকল্পের মহাপরিচালক নিযুক্ত হন এবং ১৯৬৯ সালে পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যাবর্তন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে অধ্যাপক করিম  বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন-এর প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পাঁচ বছর এ দায়িত্বে বহাল থাকেন। ১৯৭৮ সালে পুনরায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পূর্বের পদে ফিরে আসেন এবং ১৯৮২ সালের ৩০ জুন তারিখে অবসরগ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও ড. করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বাংলাদেশ মৃত্তিকা বিজ্ঞান সমিতি-এর সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক বজলুল করিম বিভিন্ন দেশিয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন এবং  বাংলাদেশের মৃত্তিকা বিষয়ক মৌলিক গবেষণার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্রসমূহের মধ্যে ছিল মৃত্তিকা-উদ্ভিদ পুষ্টি সম্পর্ক ও মৃত্তিকা রসায়ন। এ.কিউ.এম বজলুল করিম তাঁর শিক্ষকতা ও গবেষণা কর্মকান্ডের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক, শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে শেরে বাংলা স্বর্ণপদক, ১৯৮৪ সালে অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক এবং ২০০০ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) লাভ করেন। তিনি ১৯৯৮ সালের ৬ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  [তানজিনা খান মুন্নী]