কমলাপুর মসজিদ, বরিশাল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:২০, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

কমলাপুর মসজিদ বরিশালজেলার গৌরনদী উপজেলার কমলাপুর গ্রামে অবস্থিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি আয়তাকার মসজিদ। মসজিদটি এক সময় প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। বিশ শতকের ষাটের দশকের শেষদিকে এর উল্লেখযোগ্য অংশ পুরোপুরি মেরামত করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ১৯৭৫ সালে একে সংরক্ষণ করে এবং এর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য উদ্যোগ নেয়

একটি নিচু বাঁধানো চত্বরের উপরে স্থাপিত এবং ইট নির্মিত এ মসজিদ আয়তাকার। বাইরে এর পরিমাপ ১৭.২২ মি × ৮.০৮ মি। ১.৮৩ মিটার পুরু দেয়ালগুলিতে বহুখাঁজ বিশিষ্ট খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে-পূর্ব দিকে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি অন্যদুটি অপেক্ষা বড় এবং দেয়াল থেকে সামান্য উচু আয়তাকার প্রক্ষেপণের মধ্যে স্থাপিত হওয়ায় প্রাধান্য পেয়েছে। প্রক্ষেপণের দুপ্রান্তে রয়েছে দুটি অষ্টভুজ পার্শ্ববুরুজ। কিবলা দেয়ালে তিনটি অর্ধ-অষ্টভুজ মিহরাব আছে। এর মধ্যে মধ্যকার মিহরাবটি বাইরের দিকে অভিক্ষিপ্ত এবং এর দুপ্রান্তে রয়েছে ছোট অষ্টভুজ বুরুজ। কোণের অষ্টভুজ বুরুজগুলি বর্তমানে বপ্র (Parapet) পর্যন্ত উঁচু হলেও আদিতে এগুলি নিশ্চয়ই বাংলায় মুগল স্থাপত্যের প্রচলিত রীতিতে ছাদ ছাড়িয়ে উপরে প্রলম্বিত ছিল। এগুলির শীর্ষে ছিল ক্ষুদ্রাকৃতির ছত্রী।

কমলাপুর মসজিদ, বরিশাল


ইটের তৈরি সংলগ্ন স্তম্ভের ওপর থেকে আড়াআড়িভাবে নির্মিত দুটি বিশাল আকৃতির খিলানের সাহায্যে মসজিদের অভ্যন্তর ভাগকে তিনটি ‘বে’তে ভাগ করা হয়েছে। ‘বে’গুলির উপরে রয়েছে অষ্টভুজ পিপার (Drum) উপর স্থাপিত তিনটি সামান্য কন্দাকৃতির (bulbous) গম্বুজ। কেন্দ্রীয় গম্বুজটি অপর দুটি অপেক্ষা বড়। গম্বুজগুলির শীর্ষে রয়েছে পদ্ম-কলস নকশা শোভিত শীর্ষচূড়া (finial)। এগুলি নির্মাণে ব্যবহূত হয়েছে ঢাকার লালবাগ দুর্গের মসজিদের গম্বুজ নির্মাণ কৌশলের অনুরূপকৌশল।

মসজিদের অলংকরণের মধ্যে রয়েছে সুলতানি বৈশিষ্ট্যের পোড়ামাটির কাজ। কেন্দ্রীয় খিলানপথের বাইরের অংশ অলঙ্করণে সমৃদ্ধ এবং খিলানের স্প্যানড্রিলগুলিতে আছে প্যাঁচানো নকশা যার মধ্যে রয়েছে খোদাই করা গোলাপের পাশে পূর্ণ বিকশিত লোজেন্স (হীরকাকার)। এ ছাড়া এর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে কলস নকশা দেখা যায়। খিলানপথের আয়তাকার অংশে প্যাঁচানো ফুলেল নকশা, গোলাপ নকশা, জালি নকশা প্রভৃতি মোটিফ সম্বলিত পোড়ামাটির অলংকরণ রয়েছে। ফাসাদের টিকে থাকা অংশে রয়েছে খোপ নকশা (Panels)। মিহরাবগুলি বর্তমানে নিরাভরণ। কেবল এগুলির অর্ধ-অষ্টভুজাকৃতির খিলানের উপরের অংশে রয়েছে সামান্য অভিক্ষিপ্ত একটি ব্যান্ড নকশা; আর এর উপরে রয়েছে বদ্ধ পদ্ম-কলস নকশার একটি সারি। মিহরাবের বহুখাঁজ নকশাগুলি অসাধারণ।

প্রধান প্রবেশপথের উপরে স্থাপিত শিলালিপিটি বর্তমানে হারিয়ে গেছে। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে এটি জনৈক মাসুম খানের কীর্তি বলে মনে করা হয়। এর নির্মাণরীতি দেখে এ মসজিদটিকে সতেরো শতকের শেষ ভাগের ইমারত বলে মনে করা হয়।

[এম.এ বারি]