ইটের মাটি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৮:৫৫, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

ইটের মাটি (Brick Clay)  ইট তৈরী বা মৃৎশিল্পে ব্যবহার উপযোগী মাটি। সাধারণত লৌহ, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য উপাদান ধারণকারী অশোধিত মাটিকে ইটের মাটি বলা হয়। ইটের মাটির প্রধান প্রধান রাসায়নিক উপাদানসমূহ হচ্ছে: সিলিকা, অ্যালুমিনা, লৌহ অক্সাইড, ম্যাগনেশিয়া, চুন ও ক্ষার। এসব উপাদানের সামান্যতম হেরফের উৎপাদিত সামগ্রীর গুণাগুণের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। লৌহকণা, পাথরকণা, দ্রবণীয় লবণ ও চুনাপাথরের মতো কিছু ক্ষতিকারক উপাদানের উপস্থিতি প্রস্ত্ততকৃত ইটের ক্ষতি সাধন করে।

ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদি জেলার প্লাইসটোসিন এবং হলোসিন ইটের মাটির খনিজতাত্ত্বিক, রাসায়নিক ও প্রকৌশলগত গুণাগুণ বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। হলোসিন নমুনার উপাদানসমূহ হচ্ছে কোয়ার্টজ, ইলাইট, ক্লোরাইট ও কেওলিনাইট। অন্যদিকে প্লাইসটোসিন মাটির প্রধান উপাদানসমূহ হচ্ছে কোয়ার্টজ, ইলাইট ও কেওলিনাইট। সকল নমুনাতেই লঘু উপাদান হিসেবে পটাশ ও প্লাজিওক্লেস ফেল্ডস্পার বিদ্যমান, কিন্তু কোনো নমুনাতেই মন্টমরিল্লোনাইট  কর্দম শনাক্ত করা যায় নি।

হলোসিন ও প্লাইসটোসিন নমুনার সামগ্রিক রাসায়নিক উপাদানসমূহ উত্তম মানের ইট প্রস্ত্ততের জন্য সন্তোষজনক। তবে হলোসিন মাটি সামান্য সিলিকা (৬০.৭২% থেকে ৬০.৪৯%), চুন (১.১১% থেকে ১.৪৯%) ও ম্যাগনেসিয়াম (২.১৬% থেকে ২.৮৭%) এবং প্লাইসটোসিন  মধুপুর কর্দম অ্যালুমিনা (১৯.৯৫% থেকে ২১.০৭%) ও লৌহ অক্সাইডে (৮.১২% থেকে ৯.৮২%) সমৃদ্ধ। মধুপুর কর্দম অ্যালুমিনা সমৃদ্ধ হলেও প্রয়োজনীয় মাত্রার বেশ কম বিধায় ইট প্রস্ত্ততের জন্য আদর্শ নয়। এ ছাড়া এ কর্দমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লৌহকণা ছাড়াও দ্রবণীয় লবণ, যৌগ পদার্থ ও উদ্ভিজ্জ পদার্থের মতো ক্ষতিকর উপাদানও অল্প পরিমাণে পরিলক্ষিত হয়।

ইটের মাটির হলোসিন নমুনা প্রধানত  পলি আকৃতির কণা দ্বারা (৫৩.২৪% থেকে ৮৪.৩১%) গঠিত, আর প্লাইসটোসিন নমুনায় কাদা জাতীয় কণার (৪৩.৪৩% থেকে ৪৯.৮৫%) পরিমাণ পলিকণার চেয়ে ৩৪.৭৫% থেকে ৪৩.২৫% বেশি। প্রকৌশল গুণাগুণ যথা: তরল সীমা, নমনীয় সীমা ও নম্যতা সূচক মানদন্ডের বিচারে, হলোসিন নমুনা মধ্যম নমনীয়তা ও প্লাইসটোসিন নমুনা মধ্যম থেকে উচ্চ নমনীয়তার অন্তর্গত। প্লাইসটোসিন মধুপুর কর্দমের প্রসারণ ক্ষমতা হলোসিন মাটির চেয়ে সামান্য বেশি। মাটির কর্মক্ষমতার দিক বিবেচনা করলে সকল নমুনাই নিষ্ক্রীয় থেকে স্বাভাবিক ধরনের, যা ইট প্রস্ত্ততের জন্য বেশ উপযোগী। নমুনাসমূহের রৈখিক সংকোচন মান অনুযায়ী হলোসিন ইটের মাটি ‘অপ্রান্তিক’ থেকে ‘প্রান্তিক’ এবং প্লাইসটোসিন কর্দম প্রান্তিক। সকল নমুনাতেই ঘনায়তন সংকোচন মান প্রচলিত ইটের মাটির জন্য অনুমোদিত মাত্রার মধ্যেই রয়েছে। সম্প্রতি ডুপি টিলা স্তরসমষ্টির মাটিও উত্তম মানের ইট প্রস্ত্ততের উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে।

[সিফাতুল কাদের চৌধুরী]