বঙ্গীয় সাহিত্য বিষয়িনী মুসলমান সমিতি
বঙ্গীয় সাহিত্য বিষয়িনী মুসলমান সমিতি বাংলা সাহিত্য বিষয়ক একটি মুসলমান সংগঠন। ১৮৯৯ সালে ধনবাড়ির জমিদার সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর উদ্যোগ ও নেতৃত্বে কলকাতায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং শেখ আবদুর রহিম ছিলেন সম্পাদক। যে সভায় এ সমিতির জন্ম হয়, সে সভায় উপস্থিত ছিলেন শেখ আবদুর রহিম, মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দীন আহমদ, কবি দাদ আলী, মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী, কবি মোজাম্মেল হক, মোহাম্মদ আকরম খাঁ, আবুল হোসেন, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লা, মুনশি শেখ জমিরুদ্দীন, মৌলবি আবদুর রহমান খাঁ প্রমুখ। তাঁরা সকলেই ছিলেন সে যুগের সাহিত্যিক। সমিতির উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষার মাধ্যমে মুসলমান সমাজে জাগরণ সৃষ্টি করা।
সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সমিতিরি এক সভায় ঘোষণা করেন যে, বাংলার মুসলমানদের অতীত ও বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে শ্রেষ্ঠ বাংলা প্রবন্ধের জন্য একটি স্বর্ণপদক উপহার দিবেন। সমিতির তত্ত্বাবধানে কয়েকখানি বাংলা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। হিন্দু লেখকগণ উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও অন্যান্য রচনায় কোনো কোনো মুসলমান ঐতিহাসিক চরিত্রকে কলঙ্কিত ও হীনবীর্য করে চিত্রিত করলে মুসলমান সমিতি এ সবের প্রতিবাদ করে। সেন্ট্রাল টেক্সট বুক কমিটিতে মুসলমান সদস্য না থাকায় মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদের ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক প্রণীত ও নির্বাচিত হয় না এরূপ অভিযোগ সমিতির পক্ষ থেকে করা হলে বাংলা সরকার শেখ আবদুর রহিমকে কমিটির সদস্য মনোনীত করে। এভাবে বঙ্গীয় সাহিত্য বিষয়িনী মুসলমান সমিতি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য প্রীতির মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানদের জাতীয়তাবোধ ও স্বাধিকার চেতনার উন্মেষ ঘটাতে সচেষ্ট হয়। এর আয়ু ছিল প্রায় ১২ বছর; ১৯১১ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি গঠিত হলে মুসলমান সমিতি তার অঙ্গীভূত হয়। [ওয়াকিল আহমদ]