নাম-ই-হক
নাম-ই-হক ফারসিতে কাব্যাকারে লেখা ফিকাহ বিষয়ক একখানি গ্রন্থ। সম্ভবত শেখ শরফুদ্দীন আবু তওয়ামা গ্রন্থটি প্রণয়ন করেন। ১৮০টি স্তবকের এ গ্রন্থ তিনটি সূচনামূলক অধ্যায়সহ ১৩টি অধ্যায়ে বিভক্ত। সূচনামূলক অধ্যায় তিনটিতে হামদ (আল্লাহর বন্দনা), না’ত [নবী (সাঃ) ও তাঁর সাহাবীদের প্রশংসা] এবং গ্রন্থকারের নিজস্ব ভূমিকা সন্নিবেশিত হয়েছে। খাতিমাহ বা উপসংহারে গ্রন্থটি রচনার তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্রন্থটিতে উযু বা শরীরের অঙ্গাদি প্রক্ষালনের বিভিন্ন নিয়ম, গোসল বা শরীরকে পবিত্র করার মানসে আপাদ-মস্তক পানিতে ধৌতকরণ, তায়াম্মুম বা পানির বিকল্প হিসেবে বালি বা মাটি দ্বারা পবিত্র হওয়া, নামায বা প্রার্থনা, রোজা বা রমজান মাসে বাধ্যতামূলক উপোস থাকা, রোজা ভঙ্গ হওয়ার কারণ ও অবশ্য পালনীয় এবং রোজা না রাখার কাফ্ফারা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নবীজির ইন্তেকালের ৬৯৩ বছর পর গ্রন্থটি লিখিত হয় বলে উল্লেখ আছে। এ হিসাবমতে এটির রচনার তারিখ ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে নির্দিষ্ট করা যায়। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে এ জাতীয় গ্রন্থে হিজরি সালের উল্লেখ থাকে। ৬৯৩ দ্বারা লেখক যদি হিজরি বছর বুঝিয়ে থাকেন তবে গ্রন্থ রচনার তারিখ হবে ১২৯৩ খ্রিস্টাব্দ।
গ্রন্থকার বলেন, ‘এটি (অর্থাৎ বইটি) আপনাদের জন্য পৃথিবী জোড়া পরিচিত শরাফের স্মৃতিচারণ। তাঁর বংশ এবং জন্মস্থান বোখারায়। তিনি খোরাসানে শিক্ষা লাভ এবং অন্যান্য কৃতিত্ব অর্জন করেন’। কবিতার ‘শরাফ’ এবং শেখ শরফুদ্দীন আবু তওয়ামা যে অভিন্ন ব্যক্তি তা শনাক্তকরণ সম্ভব হয়েছে। তিনি সোনারগাঁওয়ে মাদ্রাসা ও খানকাহ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাই পন্ডিতগণ মনে করেন যে, শেখ শরফুদ্দীন আবু তওয়ামা-ই হলেন নাম-ই-হক কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা। সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবন এর রাজত্বকালে তিনি দিল্লিতে আসেন। সেখান থেকে সোনারগাঁও এসে তিনি মাদ্রাসা ও খানকাহ স্থাপন করে বসবাস করা শুরু করেন। শেখ শরফুদ্দীন ইয়াহিয়া মানেরী ছিলেন তাঁর প্রধান শিষ্য। অতএব উপরিউল্লিখিত নাম-ই-হক প্রণয়নের তারিখ ঠিক রেখে বলা যায় যে, সম্ভবত শরফুদ্দীন-ই ছিলেন গ্রন্থটির প্রণেতা। অবশ্য কেউ কেউ মনে করেন যে, তাঁর স্মৃতিচারণের উপর ভিত্তি করে তাঁরই কোন শিষ্য বইটি রচনা করেন।
গ্রন্থটির দুটি সংস্করণ পাওয়া গেছে। একটি সর্বপ্রথম ১৮৮৫ সালে বোম্বাই থেকে, অপরটি ১৯১৩ সালে (১৩৩২ হিজরি) কানপুর থেকে প্রকাশিত হয়। [আবদুল করিম]