নকশি শিকা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২১:৫২, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

নকশি শিকা  নকশা করা শিকা। এক প্রকার লোকশিল্প। সাধারণত  পাট দিয়ে এটি তৈরি করা হয় এবং এতে যখন বিভিন্ন রকম কারুকার্য করা হয় তখন একে বলা হয় নকশি শিকা। বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই শিকার ব্যবহার আছে। ঘরের আড়া বা সিলিং-এ শিকা বেঁধে তাতে খাদ্যদ্রব্যসহ সংসারের নানা জিনিস ঝুলিয়ে রাখা হয়। মেয়েরা এ শিল্পের রূপকার।

শিকা গৃহস্থালি কাজের জন্য নির্মিত হলেও তার মধ্যে শিল্পীর কারুচাতুর্য এবং সৌন্দর্যচেতনারও প্রকাশ ঘটে। পুঁতি, কড়ি, মাটির গোলাকার ঢেলা ইত্যাদির সাহায্যে শিকায় নকশি করা হয়। এর গ্রন্থিবৈচিত্র্য ও অলঙ্করণ-প্রক্রিয়া একটি অভিনব ব্যাপার। এতে বিভিন্ন রকম গ্রন্থি ব্যবহার করা হয়, যেমন মাউরা গিরা, রসুন গিরা, পাগড়ি গিরা, দামান গিরা, টাহা (টাকা) গিরা, বড়শি গিরা, ঝুঁটি গিরা, সুপারি গিরা ইত্যাদি। এর সঙ্গে যেসব অলঙ্করণ যুক্ত হয় সেগুলি হচ্ছে সিকি, টাকা, হাতির কান, ডালিম ইত্যাদি। কোনো কোনো শিকায় অষ্টদলপদ্ম ও কদমফুলের অলঙ্করণও দৃষ্ট হয়।

নকশি শিকার বিভিন্ন আঞ্চলিক নাম রয়েছে, যেমন জিলাপি, আমির্তি, আউলাকেশি, কাউয়ার ঠ্যাং, ইচার ঠ্যাং, জালি, বেড়ি, কউতর খোপি ইত্যাদি। গঠন-প্রকৃতির দিক দিয়েও শিকার বিভিন্ন নাম আছে, যেমন বাঁশের বাতার দুই প্রান্তে ঝোলানো শিকার নাম ‘ভার’ বা ‘বাক’; কাঁথা-বালিশ রাখার জন্য তৈরি শিকার নাম গাইন্জা, পাঞ্জাব, ফুলচাঙ্গ (বা ফুলটঙ্গি) ইত্যাদি। ফুলচাঙ্গ শিকা তৈরি করা হয় বাঁশের চারকোণা বা চাকায় লহর বা জালি বুনে এবং এতে বই-পুস্তক, কুরআন শরিফ, টুপি ইত্যাদিও রাখা হয়।#চিত্র:নকশি শিকা html 88407781.png

#চিত্র:নকশি শিকা html 88407781.png

#চিত্র:নকশি শিকা html 88407781.png

  1. নকশি শিকা(ঢাকা)#নকশি শিকা(ময়মনসিংহ)#নকশি শিকা(রাজশাহী)

কাঁথা-বালিশ ইত্যাদি রাখার জন্য বেণী লহরে তৈরি চার থাকবিশিষ্ট ‘জোত’ নামক এক প্রকার শিকাও ব্যবহূত হয়। একসঙ্গে অনেকগুলি হাঁড়ি-পাতিল ঝুলিয়ে রাখার জন্য ব্যবহূত শিকার নাম ‘হাজারি শিকা’। এছাড়া ‘হাত (সাত) শিকা’ নামে এক ধরনের শিকা আছে যার সাতটি শিকা পরস্পর সংলগ্ন থাকে। এতে পাট বেণী করে পাকিয়ে ছোট ছোট হাঁড়ি রাখার জায়গা করা হয়। এরূপ শিকার নিদর্শন পাওয়া যায়  পাবনা জেলার বেড়াতে।

অতীতে নকশি শিকা ঘরোয়াভাবেই তৈরি করা হতো এবং এর বেচাকেনার তেমন প্রচলন ছিল না। বর্তমানে কারুশিল্পের মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এগুলি বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে এবং বিদেশেও এর ভাল বাজার রয়েছে; নগরবাসীদের গৃহেও এখন নকশি শিকা শোভা পায়।  [মোমেন চৌধুরী]