ধীবর
ধীবর হিন্দুদের চতুর্বর্ণের অন্তর্ভুক্ত একটি উপবর্ণ। এরা মূলত মৎস্যজীবী সম্প্রদায়। বৈদিক যুগে ভারতে কৃষিজীবী, পশুপালনকারী, শিকারি প্রভৃতি পেশাজীবী মানুষের পাশাপাশি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের লোকজনও ছিল। বৃহদ্ধর্মপুরাণে বারোটি মধ্যম সংকর শূদ্র বর্ণের মধ্যে ধীবর ও জালিক নামে দুটি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের উল্লেখ আছে। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে উল্লিখিত ঊনত্রিশটি শূদ্র জাতির মধ্যে ধীবর একটি। প্রাচীনকাল থেকে বাংলায় অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল থাকায় দেশটি ছিল মাছে ভরা। তাই এ দেশে মৎস্যজীবী সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিল। বাংলায় পাল আমলে (৭৫০-১১৬০) কৈবর্ত নামে একটি ধনবান ও বিত্তবান উপবর্ণ ছিল। তাদের কেউ রাজা, কেউ বা বণিক ছিল। তারা পরবর্তীকালে একটি শক্তিশালী উপবর্ণ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। উত্তরবঙ্গে কৈবর্তরা দিব্যকের নেতৃত্বে দ্বিতীয় মহীপালের (১০৭১-৭২) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যা ‘কৈবর্ত বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। এ বিদ্রোহে জয়ী হয়ে তারা কিছুকালের জন্য একটি কৈবর্তরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে কৈবর্তদের মৎস্যজীবী বলা হয়েছে। তখন ‘মাহিষ্য’ নামেও একটি মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ছিল। কৈবর্ত ও মাহিষ্য এক ও অভিন্ন হিসেবে সমাজে স্বীকৃত হয়।
ধীবর সম্প্রদায়ের একটি গোষ্ঠী গঙ্গাপুত্র নামে অভিহিত। বর্তমান বাংলাদেশে জালিক দাস ও পরাশর দাস এবং পশ্চিমবঙ্গের হুগলি, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুরের চাষি কৈবর্তরা নিজেদের মাহিষ্য বলে পরিচয় দেয়। বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা অঞ্চলের মৎস্যজীবী ধীবর ও জালিকরা কৈবর্ত হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে বাংলাদেশের মৎস্যজীবীরা মালো, বর্মণ, রাজবংশী, কৈবর্ত, জলদাস ও দাস হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। তবে এখন তাদের অনেকেই লেখাপড়া শিখে পৈতৃক পেশা ত্যাগ করে ব্যবসা ও চাকরি ক্ষেত্রে নিজেদের গড়ে তুলছে।
[হীরালাল বালা]