বণিক

বণিক  হিন্দুদের একটি পেশাজীবী সম্প্রদায়, ব্যবসা-বাণিজ্য যাদের প্রধান বৃত্তি। চতুর্বর্ণের মধ্যে বৈশ্যবর্ণের উল্লেখ থাকলেও প্রাচীন শাস্ত্রে বর্ণ বা উপবর্ণ হিসেবে বণিক সম্প্রদায়ের তেমন উল্লেখ নেই। মনুসংহিতায় বৈশ্যদের পেশা হিসেবে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও পশুপালনের কথা বলা হয়েছে; সম্ভবত পরবর্তীকালে এদের থেকেই উপবর্ণ হিসেবে বণিক সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেছে।

প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে একদল মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত ছিল। তারা বিশ্বের নানা স্থানে বাণিজ্য করত; মশলাদি দ্রব্য আমদানি-রফতানি করত। এভাবে স্থল ও জলপথে ভারতবর্ষে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে ওঠে। মাড়ওয়ারি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, রাজপুত প্রভৃতি ভারতের প্রথম শ্রেণির ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠী।

বারো-তেরো শতকে রচিত বৃহদ্ধর্মপুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে সুবর্ণবণিক (সোনা ব্যবসায়ী), মোদক (ময়রা), তাম্বুলী (পান ব্যবসায়ী), তৌলিক ও গন্ধবণিকের উল্লেখ পাওয়া যায়। এসব শ্রেণির মানুষ ব্যবসায়ী ছিল বটে, কিন্তু সকলে বণিকের মর্যাদা পায়নি। বর্তমানে বাংলাদেশে হিন্দু সমাজে গন্ধবণিক, সুবর্ণবণিক, সাহা, কুন্ডু, কর্মকার, মোদক প্রভৃতি অনেক শ্রেণির ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের মধ্যে সাহা ও কুন্ডু শ্রেণি ব্যবসাক্ষেত্রে অগ্রসর এবং ধনবান। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ‘সাহা’ পদবি ব্যবহার করে। কুন্ডুদের সম্পর্কে সবিশেষ জানা না গেলেও মনে করা হয় যে, তারা তিলি সম্প্রদায়ের উত্তরপুরুষ। এখনও তিলি সম্প্রদায় একটি অনুন্নত শ্রেণি হিসেবে হিন্দু সমাজে বিদ্যমান আছে।  [হীরালাল বালা]