জয়গোপাল তর্কালঙ্কার
জয়গোপাল তর্কালঙ্কার (১৭৭৫-১৮৪৬) সংস্কৃত পন্ডিত, লেখক। ১৭৭৫ সালের ৭ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বজ্রাপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা কেবলরাম তর্কপঞ্চাননও ছিলেন একজন সংস্কৃত পন্ডিত এবং জয়গোপাল তাঁর নিকটই শিক্ষালাভ করেন।
জয়গোপাল বিখ্যাত তিন ইউরোপীয় প্রাচ্যতত্ত্ববিদের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন। তিনি তিন বছর হেনরি টমাস কোলব্রুকের সংস্কৃত শিক্ষার পন্ডিত ছিলেন এবং ১৮০৫-১৮২৩ পর্যন্ত উইলিয়াম কেরীর (১৭৬১-১৮৩৪) অধীনে শ্রীরামপুর মিশনে চাকরি করেন। চাকরির পাশাপাশি তিনি জে সি মার্শম্যানের (১৭৬০-১৮৩৭) সহযোগী হিসেবে ১৮১৮-১৮২৩ পর্যন্ত সাপ্তাহিক সমাচার দর্পণ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগেও কাজ করেন। এ সময় তিনি বাংলা ভাষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। তিনি এ পত্রিকার মাধ্যমে সংস্কৃতবহুল কঠিন বাংলাকে ভেঙে সহজ করে দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলেন। এ কারণে তিনি একজন শাব্দিক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন।
১৮২৪ সালে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলে জয়গোপাল সেখানকার সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং সুদীর্ঘ বাইশ বছর অধ্যাপনা করেন। সেখানে তাঁর ছাত্রদের মধ্যে পরবর্তীকালে যাঁরা বিখ্যাত হন তাঁরা হলেন পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১), মদনমোহন তর্কালঙ্কার (১৮১৭-১৮৫৮), তারাশঙ্কর তর্করত্ন (?-১৮৫৮) প্রমুখ।
জয়গোপালের প্রধান কীর্তি হলো কৃত্তিবাসী রামায়ণ (১৮৩০-৩৪) ও কাশীদাসী মহাভারতের (১৮৩৬) সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করা। এ ছাড়া তাঁর রচিত ও সম্পাদিত অন্যান্য গ্রন্থ হচ্ছে: শিক্ষাসার (১৮১৮, দ্বিতীয় সং), বিল্বমঙ্গলকৃত কৃষ্ণবিষয়কশ্লোকাঃ (১৮১৭), চন্ডী (১৮১৯), পত্রের ধারা (১৮২১) ও বঙ্গাভিধান (১৮৩৮)। কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক মহাভারত প্রকাশের ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং রাজা রাধাকান্ত দেব (১৭৮৪-১৮৬৭) প্রতিষ্ঠিত ধর্মসভার একজন সদস্য হিসেবে ফারসি ভাষায় একখানা অভিধান সঙ্কলন করেন। বিল্বমঙ্গলের কতিপয় সংস্কৃত শ্লোকের বঙ্গানুবাদ এবং ষড়ঋতুর বর্ণনামূলক কবিতা রচনা করে তিনি সুকবি হিসেবেও পরিচিত হন। ১৮৪৬ সালের ১৩ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়। [দুলাল ভৌমিক]