উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড
উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড (Horticulture Development Board/HDB) কৃষি অধিদপ্তরের অধীনে ১৯৭৩-৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা। ১৯৮২ সালে কৃষি অধিদপ্তর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (Department of Agricultural Extension/DAE) হিসেবে পুনর্গঠিত হওয়ার পর উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের খাদ্যশস্য উইং-এর সঙ্গে একীভূত হয়।
উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্য ছিল ১. বাংলাদেশের কৃষি বাস্ত্তসংস্থানিক অবস্থার উপযোগী বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি ও ফলের (বিশেষত তরমুজ) মানসম্পন্ন বীজ আমদানি; ২. পুষ্টিমান উন্নয়নের লক্ষ্যে নানা ধরনের শাকসবজি, ফল, ও মসলা উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা; ৩. গ্রামপর্যায়ে উদ্যান উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রসার এবং বর্ধিত পরিমাণে উদ্যানজাত সামগ্রী উৎপাদনের মাধ্যমে আয়বৃদ্ধি; ৪. উদ্যান সম্প্রসারণ সেবার জন্য কার্যকর পন্থা ও উপায় উদ্ভাবন; এবং ৫. গ্রামীণ মহিলাদের উৎপাদনী প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ এবং সেসঙ্গে উদ্যানজাত ফসলের পুষ্টির গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি।
বোর্ড নিজস্ব ৫৫টি ভিত্তিখামার ও নার্সারি পরিচালনা করে। বর্তমানে উদ্যান সম্প্রসারণ সেবা প্রদান এবং পাশাপাশি খামারীদের মধ্যে বিতরণের জন্য উদ্যান সম্প্রসারণ উপকরণাদি (জোড়কলম, গুঁটি, চারা, শাখাকলম, বীজ, স্ফীতকন্দ ইত্যাদি) উৎপাদনের মাধ্যমে ৭৪টি কেন্দ্র গোটা দেশে কাজ করছে।
সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খাদ্যশস্য উইং-এর বর্তমান ৭৪টি উদ্যান কেন্দ্রকে ৮টি অঞ্চলের অধীনে ন্যস্ত করেছে: ঢাকা (১২টি কেন্দ্র), ময়মনসিংহ (৬টি কেন্দ্র), কুমিল্লা (৩টি কেন্দ্র), রাজশাহী (১২টি কেন্দ্র), রংপুর (২টি কেন্দ্র), যশোর (১২টি কেন্দ্র), বরিশাল (৬টি কেন্দ্র), চট্টগ্রাম (৬টি কেন্দ্র) ও রাঙ্গামাটি (১৫টি কেন্দ্র)।
উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড পুস্তিকা ও প্রচারপত্র আকারে কিছু প্রশিক্ষণ উপকরণ প্রকাশ করেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য রবি মৌসুমে সবজি চাষ: বুলেটিন-১; গ্রীষ্ম মৌসুমে সবজি চাষ: বুলেটিন-২; ফলগাছ লাগানো ও পরিচর্যা: আনারস; টবে সবজি চাষ; ফলগাছ লাগানো ও পরিচর্যা: আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, কুল, সুপারি, জাম, লিচু, কাগজিলেবু, নারিকেল। সম্প্রসারণ কর্মী, এনজিও, কৃষি উন্নয়ন কর্মী ও চাষীদের মধ্যে এ প্রকাশনাগুলি বিতরণ করা হয়ে থাকে। উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক খামার কর্মকান্ড অনুশীলন এবং পাশাপাশি বসতবাড়ির আঙিনায় বাগান তৈরি সম্পর্কে গোটা দেশের বিপুল সংখ্যক চাষী ও শহুরে মহিলাদের প্রশিক্ষণ ও কারিগরী নির্দেশনাও দিয়েছে।
বর্তমানে খাদ্যশস্য উইং-এর পরিচালকের নেতৃত্বে প্রধানত উদ্যান সম্প্রসারণ কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। শুরুতে এ শাখা দুটি প্রকল্প গ্রহণ করে: ‘এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এর অর্থায়নে পরিচালিত কার্যক্রমের আওতায় ফলগাছের অতিরিক্ত চারা উৎপাদনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলিতে অবস্থিত উদ্যান উন্নয়ন বোর্ডের খামার ও নার্সারির ভৌত সুবিধাদি উন্নয়ন’ এবং ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি ও বান্দরবন জেলাগুলির সদরে এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলাগুলিতে উদ্যান পালন খামার ও নার্সারি প্রতিষ্ঠা’। প্রকল্প দুটির কাজ শেষ হওয়ার পর ‘বাংলাদেশে উদ্যান উন্নয়ন’ নামে নতুন একটি প্রকল্প ১৯৮৯-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এ প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্য ছিল দেশব্যাপী উন্নত জাতের ফল, সবজি ও মসলা ফসলের উন্নয়ন; অধিক পরিমাণে বাগানের ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে গ্রামীণ লোকের জন্য কর্মসংস্থান ও আয়বৃদ্ধি; এবং উদ্যান সম্প্রসারণ সেবার মান উন্নয়ন। প্রকল্পটির তিনটি অংশ ছিল- একটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সম্প্রসারণ কার্যক্রম; আরেকটি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে উদ্যানের ভূসম্পত্তি উন্নয়ন; এবং তৃতীয়টি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বিত গবেষণা। খাদ্যশস্য উইং-এর ওপর অর্পিত বাধ্যতামূলক কাজ ছাড়াও উদ্যান উন্নয়ন বোর্ড বর্তমানে সমন্বিত উদ্যান পালন ও পুষ্টির ওপর একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে। [মোঃ শহীদুল ইসলাম]