আলী, সৈয়দ মুর্তাজা
আলী, সৈয়দ মুর্তাজা (১৯০২-১৯৮১) লেখক। ১৯০২ সালের ১ জুলাই পিতার কর্মস্থল আসামের করিমগঞ্জ শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রামে। পিতা খানবাহাদুর সিকান্দার আলী ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার এবং সাহিত্যিক ও ভাষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন তাঁর অনুজ।
মুর্তাজা আলী একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি সিলেট সরকারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯২১) ও মুরারিচাঁদ কলেজ থেকে আইএসসি (১৯২৩) পাস করেন এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএসসি (১৯২৫) ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনের মতো চাকরি জীবনেও মুর্তাজা আলী অসাধারণ মেধার পরিচয় দেন। তিনি তৎকালীন আই সি এস পরীক্ষায় বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেন, যদিও তাঁকে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়। ১৯২৬ সালে আসাম প্রভিন্সিয়াল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ওই বছরই তিনি মৌলভীবাজার মহকুমার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪০-এ তিনি সাবডিভিশনাল অফিসার হিসেবে প্রমোশন পান এবং ১৯৪৪-এ শিক্ষা বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি পদে উন্নীত হন। দেশ বিভাগের পর মুর্তাজা আলী পূর্ব পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। চাকরি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি সেক্রেটারি ও বিভাগীয় কমিশনার পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৯৫৯ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলা একাডেমীর সভাপতি (১৯৬৯-৭১, ১৯৭৫-৭৭), বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি (১৯৭৪) এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটএর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।
মুর্তাজা আলী সাহিত্য, গবেষণা, ইতিহাস ও স্মৃতিচারণমূলক বহু গ্রন্থের প্রণেতা। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো: পশ্চিম পাকিস্তান (১৯৫২), The History of Jaintia (১৯৫৪), History of Chittagong (১৯৬৪), Personality Profiles (১৯৬৪); হযরত শাহজালাল ও সিলেটের ইতিহাস (১৯৬৫), প্রবন্ধ বিচিত্রা (১৯৬৭), আমাদের কালের কথা (১৯৬৮), মুজতবা-কথা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৭৬) ইত্যাদি। গবেষণার জন্য তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ৯ আগস্ট ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। [মোঃ হারুন-অর-রশীদ]