সৈয়দ মর্তুজা
সৈয়দ মর্তুজা (আনু. ১৫৯০-১৬৬২) সুফি ভাবধারার কবি। আনুমানিক ষোলো শতকের শেষভাগে তাঁর আবির্ভাব এবং সতেরো শতকের দ্বিতীয় ভাগে তিরোভাব। তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার সুতী থানার ছাপঘাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ হাসান ছিলেন উত্তর প্রদেশের বেরেলির অধিবাসী।
সৈয়দ মর্তুজা ছিলেন সুফি সাধক। জঙ্গিপুরের সৈয়দ শাহ আবদুর রাজ্জাক ছিলেন তাঁর পীর। আনন্দময়ী নামে তাঁর একজন সাধনসঙ্গিনী ছিলেন। আধ্যাত্মিক সাধনায় তাঁর ভূমিকার কথা স্মরণ করে কবিকে ‘মর্তুজানন্দ’ বলে অভিহিত করা হতো। গৌড়ের ফিরোজপুরের সুফি দরবেশ শাহ্ নিয়ামতুল্লাহ্র (মৃত্যু. ১৬৬৪) সঙ্গে মর্তুজার হূদ্যতা ছিল। মৃত্যুর পর ছাপঘাটিতে তাঁর মাযারে প্রতিবছর রজব মাসে তিনদিন ব্যাপী বার্ষিক উরস পালিত হতো। পরে ওই স্থানটি নদীতে ভেঙ্গে গেলে হারুয়া নামক গ্রামে তাঁর মাযার স্থানান্তরিত হয়। বর্তমানে ওই স্থানেই বার্ষিক উরস-মেলাদি অনুষ্ঠিত হয়।
মর্তুজা ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন সাধক। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরাই তাঁর ভক্ত। বার্ষিক উরসে ভক্তবৃন্দ সমবেত হয়ে সৈয়দ মর্তুজানন্দের নামে জয়ধ্বনি দেয়। তাঁর অধস্তন বংশধর খাদেম হিসেবে মাযারের তত্ত্বাবধান করে থাকেন।
সৈয়দ মর্তুজা বৈষ্ণবপদের আঙ্গিকে অনেকগুলি সুফিপদ ও যোগ-কলন্দর নামে একখানি তত্ত্বধর্মী কাব্য রচনা করেন। ফারসি ভাষায়ও তাঁর কিছু আধ্যাত্মিক গজল আছে। আঠারো শতকের পদকল্পতরু নামক বৈষ্ণবপদ সংকলনে সৈয়দ মর্তুজার একটি পদ অন্তর্ভুক্ত হয়। তাঁর সুফিপদে বৈষ্ণবতত্ত্বের এবং যোগ-কলন্দরে হিন্দুতন্ত্রের প্রভাব আছে। [ওয়াকিল আহমদ]