সরকারি চাকুরির নৈতিক আচরণবিধি

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:০৭, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সরকারি চাকুরির নৈতিক আচরণবিধি  বিধিবদ্ধ আকারে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য দাপ্তরিকভাবে গৃহীত আচরণের বিধিবিধান। এই নিয়মাবলি বিধিবদ্ধ আইন বা বিভিন্ন বিভাগীয় প্রনিয়ম বা বিধানিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। এই আচরণবিধি বিশেষ শর্তাধীনে সরকারি কর্মচারীদের জবাবদিহিতা ও সততা সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিকল্পে কিছু আচরণের নির্দেশ দেয় ও কিছু আচরণ নিষিদ্ধ করে। সরকারি কর্মচারীদের নৈতিকতার মান তাদের সামাজিক অবস্থান, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ অনুসারে গড়ে ওঠে। যারা সরকারি চাকুরিকে আত্মোন্নতির এবং নিজেদের ও স্বজনদের সুবিধা লাভের সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করে তারা দেশের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করে। গোষ্ঠী বা ব্যক্তি স্বার্থ নয়, জনস্বার্থ বাস্তবায়নই সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধির চূড়ান্ত মানদন্ড।

বাংলাদেশের সরকারি চাকুরি ব্যবস্থার আছে এক দীর্ঘ ঔপনিবেশিক ইতিহাস, যা ছিল নেতিবাচক কর্তৃত্বপরায়ণ ও ঔপনিবেশিক স্বার্থসিদ্ধির উপায়। প্রায় দুশত বছর ব্রিটিশের ভারত শাসনকালে চুক্তিবদ্ধ সরকারি চাকুরিতে প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ পোষকতানির্ভর থাকায় তাদের মনোবল ছিল খুবই দুর্বল। ওয়ারেন হেস্টিংস পদ্ধতিটি চালু করেন এবং কর্নওয়ালিস সেই ভিত্তির উপর উন্নততর আচরণের মান প্রতিষ্ঠা করেন। কর্নওয়ালিসের গৃহীত পদক্ষেপগুলো ছিল: প্রথমত, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা যথেষ্ট বৃদ্ধি যাতে তারা কর্মক্ষেত্রে ও অবসর সময়ে রুচিসম্মত আরামদায়ক জীবন যাপন করতে পারে; দ্বিতীয়ত, তিনি কোম্পানিতে চাকুরি লাভে অপরিহার্য পৃষ্ঠপোষকতার অপব্যবহারের বিরোধিতা করেন।

এসব পদক্ষেপের ফলে কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এবং কর্তব্য পালনে সততা, উৎসাহ ও নিষ্ঠার উন্নয়ন ঘটে। সরকারি কর্মচারীদের মনোবল বৃদ্ধির স্থায়ী নীতিমালা ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে  ইসলিংটন কমিশন (১৯১২) কর্তৃক বেতন-ভাতা নির্ধারণের ভিত্তি। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছিল যে, সরকার তার কর্মচারীদের এই পরিমাণ বেতন দেবে যাতে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ সম্ভব হয়, যাতে তারা আত্মমর্যাদা বজায় রাখতে ও প্রলোভন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে এবং চাকুরিকালীন মেয়াদে কর্মদক্ষ থাকে। এভাবে ব্রিটিশ সরকার ভারত শাসনের শেষপর্বে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নৈতিকতার ব্যাপার বা আচরণের মানের উপর বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে তাদের মনোবল গড়ে তোলার একটি আবহ সৃষ্টির চেষ্টা করে।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর সরকারি চাকুরির ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক চাকুরির আচরণবিধির প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত থাকে। ২৪ বছরের পাকিস্তানী শাসনামলে সর্বস্তরের সরকারি কর্মচারীর মধ্যে বিদ্যমান দুর্নীতি এবং সততা ও নিষ্ঠার অভাবের ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। প্রচলিত দুর্নীতি ছিল ঘুষ, প্রতারণা, সরকারি তহবিলের অপব্যবহার, দাপ্তরিক নথি রদবদল, সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগে অর্থলাভ ও স্বজনপ্রীতি। পাকিস্তান ফৌজদারি দন্ডবিধির (১৯৬৩) ১৬১ ধারা অনুসারে সরকারি কর্মচারীদের দাপ্তরিক কাজের জন্য বিধিসম্মত পারিশ্রমিক বহির্ভূত কোনো প্রকার আর্থিক সুবিধা গ্রহণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

বাংলাদেশে সরকারি কর্মচারীদের নৈতিকতা বিষয়ে কোনো বিধিবদ্ধ আইন নেই। নৈতিক বিধি হিসেবে যেটুকু আছে তা ‘সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধি, ১৯৭৯’ এবং ‘সরকারি কর্মচারীদের (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ১৯৮৫’ বিধিগুলির মধ্যেই বিবৃত। এই বিধিমালায় সরকারি কর্মচারীদের সততা ও নিষ্ঠার পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত আচরণের মান নির্ধারণ এবং সম্ভাব্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।  [এ.টি.এম ওবায়েদুল্লাহ]