সুহ্ম

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১১, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

সুহ্ম প্রাচীন বাংলার একটি আঞ্চলিক ভূখন্ড। এর অবস্থান সাধারণত দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলায় ধরা হয়। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের পতঞ্জলির বর্ণনায়  বঙ্গ ও পুন্ড্র-এর সাথে সুহ্মের সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। মহাভারত-এ কর্ণ ও ভীমের বিজয়ের বর্ণনাকালে  তাম্রলিপ্ত/দামলিপ্ত-এর (বর্তমানের তমলুক) অধিবাসী হতে স্বতন্ত্র সুহ্ম-র জনসাধারণের উল্লেখ আছে। কিন্তু দশকুমারচরিত সুহ্ম ও তাম্রলিপ্তকে আলাদা সম্প্রদায় নয়, বরং তাম্রলিপ্তকে সুহ্মরই অংশ হিসেবে বর্ণনা করেছে। কালিদাসের রঘুবংশে রঘুর বিজয়কালে সুহ্ম অধিবাসীদের পরাজয়ের উল্লেখ আছে এবং দক্ষিণে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ভাগীরথী ও কাঁসাই-এর মধ্যবর্তী অঞ্চলকে তাদের আবাসভূমি হিসেবে দেখান হয়েছে।

পন্ডিতদের মতে, আচারঙসূত্র নামক জৈন গ্রন্থে বর্ণিত কিংবদন্তি অনুযায়ী বজ্যভূমি ও শুভ্যভূমি নিয়ে রাঢ় গঠিত ছিল। শুভ্যভূমিকে সাধারণত সুহ্ম বা সুহ্মভূমির অপভ্রংশ হিসেবে ধরা হয়। তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে, ভৌগোলিক শব্দ ‘সুহ্ম’ রাঢ়ের অংশবিশেষকেই বোঝায়। মহাভারত-এর টিকাকার নীলকণ্ঠ সুহ্ম ও রাঢ়কে এক ও অভিন্ন হিসেবেই বর্ণনা করেছেন। ধোয়ী-র পবন দূত-এ সুহ্ম-র অবস্থান ভাগীরথী অববাহিকায় দেখান হয়েছে।

নীহাররঞ্জন রায় অনুমান করেন যে, সুহ্ম অঞ্চলের পাশাপাশি ব্রহ্ম বা ব্রহ্মোত্তর নামক আর একটি বসতি ছিল। কাব্যমীমাংসা-র একটি  অনুচ্ছেদে ‘অঙ্গ, বঙ্গ, সুহ্ম, ব্রহ্ম, পুন্ড্র ইত্যাদির উলে­খে এ কথার সমর্থন মেলে। তাহলে ধরে নেওয়া যায় যে, পূর্ব ভারতে সুহ্মর নিকটে ব্রহ্ম নামের একটি বেশ বড় জনবসতি ছিল। অতএব, সুহ্ম-ব্রহ্মোত্তর উক্তিটি সম্ভবত সুহ্মকে নির্দেশ করে, যার উত্তরে ব্রহ্ম সংলগ্ন।

এটি সাধারণভাবে স্বীকৃত যে, ‘সুহ্ম’ বাংলার পুরো পশ্চিমাঞ্চলকেই বোঝায়, খুব সম্ভব তার দক্ষিণ অংশকেও। পশ্চিম বাংলার মেদিনীপুর জেলার বর্তমান তমলুক এর আশেপাশে বিক্ষিপ্ত যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করা হয়েছে, তার সাথে দামলিপ্ত (তামলিপ্ত বা তাম্রলিপ্ত-এর প্রতিশব্দ)-এর সাদৃশ্য ইঙ্গিত করে যে, দামলিপ্তই সম্ভবত উপকূলবর্তীয় সুহ্ম অঞ্চল ছিল।  [রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়]