বোকাইনগর দুর্গ
বোকাইনগর দুর্গ ময়মনসিংহ শহর থেকে ১৯.৩২ কিমি পূর্বে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা বালুয়া নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি দুর্গ। বালুয়া নদীর একটি সংযোগধারা দুর্গের ভেতর দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত ছিল।
বোকাইনগর দুর্গের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। জনশ্রুতি আছে যে, পনেরো শতকে যখন প্রাচীন কামরূপ রাজ্য বিভিন্ন অংশে ভাগ হয়ে যাচ্ছিল তখন ‘বোকাই’ নামে একজন কোচ উপজাতি-প্রধান এ দুর্গটি নির্মাণ করেন। বোকাই মারা যাওয়ার পর তাঁর নামেই দুর্গটির নামকরণ করা হয়। অন্য কিংবদন্তি অনুযায়ী, সুলতান দ্বিতীয় সাইফুদ্দীন ফিরুজ শাহ (১৪৮৬-১৪৮৯)-এর প্রতিনিধি মজলিস খান হুমায়ুন দুর্গটি নির্মাণ করেন। ১৪৯৫ খ্রিস্টাব্দে দুর্গটি হোসেন শাহ এর নিয়ন্ত্রণে আসে এবং তিনি তাঁর পুত্র নুসরত শাহকে এর অধিকর্তা নিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে উসমান খান আফগান মুগলদের কাছে পরাজিত হয়ে উড়িষ্যা থেকে পালিয়ে ঈসা খান এর আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং বোকাইনগরের সামন্তরাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তিনি দুর্গটি পুনঃনির্মাণ করে এটিকে একটি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং এখান থেকে মুগলদের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে ইসলাম খান তাঁকে চূড়ান্তভাবে পরাস্ত করেন এবং দুর্গটি মুগলদের অধিকারে আসে।
বোকাইনগর দুর্গটি ছিল পূর্ব-পশ্চিমে ১.৬০ কিমি লম্বা এবং ০.৮০ কিমি চওড়া। দুর্গটি মাটির তৈরি উঁচু প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত এবং বাইরে গভীর পরিখা দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল। দুর্গের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে খাজা উসমানের বাসস্থান ছিল বলে জানা যায়। অসংখ্য ইটের টুকরা, দক্ষিণ দেয়ালের অংশ, দক্ষিণ-পূর্ব দিকের ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষা বুরুজ (Bastion) ইত্যাদি দুর্গের বিদ্যমান নিদর্শন। [শাহনাজ হুসনে জাহান]