ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট, ১৮৭৮
ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট, ১৮৭৮ দেশীয় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের লক্ষ্যে প্রণীত একটি বহুল বিতর্কিত আইন। ভাইসরয় লর্ড লিটনের শাসনামল তাঁর সর্বাধিক বিতর্কিত সংবাদপত্র নীতির জন্য বিশেষভাবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এই নীতিরই ফলশ্রুতিতে ১৮৭৮ সালের ১৪ মার্চ প্রণীত হয় ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট। এর আগে রাজদ্রোহ ভাবাপন্ন বলে অভিযুক্ত কোনো নাটক রচনা ও মঞ্চায়ন নিষিদ্ধ করে প্রণীত হয় ড্রামাটিক পারফর্ম্যান্সেস অ্যাক্ট (১৮৭৬)। ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্টের উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রচারণা বন্ধ করা। বিলটি উত্থাপন করে কাউন্সিলের আইন বিষয়ক সদস্য দেশীয় সংবাদপত্র ও সাময়িকীগুলো কিভাবে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে তার বর্ণনা দেন। ভাইসরয় লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রকে ‘কুচক্রী বাজে লেখকদের প্রকাশ্য রাজদ্রোহী প্রচারণা’ বলে অভিযুক্ত করেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, অধিকাংশ দেশীয় সংবাদপত্রের সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্রিটিশ রাজের পতন ঘটানো।
যেসব পত্রিকা সরকারকে উদ্বিগ্ন করে তুলছিল তা হলো সোমপ্রকাশ, সুলভ সমাচার, হালিশহর পত্রিকা, অমৃত বাজার পত্রিকা, ভারত মিহির, ঢাকা প্রকাশ, সাধারণী ও ভারত সংস্কারক। এর সবগুলো পত্রিকাকে সরকারের বিরুদ্ধে রাজদ্রোহমূলক আন্দোলন পরিচালনার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। প্রণীত আইনে সংবাদপত্র প্রকাশের পূর্বে বিষয়বস্ত্তর সকল প্রুফ-শিট পুলিশের কাছে পেশ করার বিধান রাখা হয়। কোন ধরনের খবর রাজদ্রোহের আওতায় পড়ে তা পুলিশই নির্ধারণ করত, আদালত নয়। এ আইনের আওতায় অনেক সংবাদপত্রকে জরিমানা করা হয় এবং সম্পাদকদের কারাদন্ড দেওয়া হয়। ফলে এধরনের নিবর্তনমূলক ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল সংগঠন একযোগে এই পদক্ষেপের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে এবং তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে। বাংলা ও ভারতের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ এ আইনের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং একে অবৈধ ও অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান। সংবাদপত্রেও চলতে থাকে অবিরাম সমালোচনা। পরবর্তী ভাইসরয় লর্ড রিপন উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শেষ পর্যন্ত আইনটি প্রত্যাহার করে নেন। [সিরাজুল ইসলাম]