মিত্র, হরিশচন্দ্র
মিত্র, হরিশচন্দ্র (১৮৩৭-১৮৭২) কবি, নাট্যকার, প্রবন্ধকার, সাংবাদিক। তিনি ১৮৩৭ সালে ঢাকায় এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা অভয়চরণ মিত্র ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার অধিবাসী। হরিশচন্দ্র চরম দারিদ্রে্যর মধ্যে বেড়ে উঠেন। তরুণ বয়সে তিনি এক ছাপাকলে কম্পোজিটর হিসেবে কাজ করেন। ১৮৫৮ সালে তাঁর প্রথম কবিতা ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি ঢাকায় এক জুনিয়র স্কুলে কিছুকাল শিক্ষকতা করেন।
১৮৬০ সালে হরিশচন্দ্র ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র মাসিক কবিতা কুসুমাবলী প্রকাশ করেন। ১৮৬২ সালে তিনি অবকাশরঞ্জিকা নামে অপর একটি মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৮৬৩ সালে ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা সাপ্তাহিক ঢাকা দর্পণ প্রকাশ করেন। তাঁর সম্পাদনাকৃত অন্যান্য পত্রিকার মধ্যে রয়েছে কাব্য প্রকাশ (১৮৬৪), হিন্দু হিতৈষী (১৮৬৫) এবং হিন্দু রঞ্জিকা (১৮৬৮)।
হরিশচন্দ্র মাসিক মিত্র প্রকাশ (১৮৭০) নামক পত্রিকা প্রকাশ ও সম্পাদনা করেন। পত্রিকাটি উনিশ শতকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সর্বোৎকৃষ্ট সাময়িকীসমূহের অন্যতম বলে বিবেচিত হয়।
তাঁর প্রথম গ্রন্থ শুভস্য শীঘ্রং নামক একটি নাটক। তাঁর অন্যান্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ম্যাও ধরবে কে (১৮৬২), ঘর থাকতে বাবুই ভেজে (১৮৬৩), জানকী নাটক (১৮৬৩), জয়দ্রথবধ বৃত্তান্ত (১৮৬৪)। তাঁর তিনটি নাটক প্রহ্লাদ নাটক, অনুড়া যুবতী ও হতভাগ্য শিক্ষক ১৮৭২ সালে প্রকাশিত হয়।
তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে হাস্যরসতরঙ্গিণী (১৮৬২), বিধবা বঙ্গললনা (১৮৬৩), বীর বাক্যাবলী (১৮৬৪), কীচকবধ কাব্য (১৮৬৬), বঙ্গবালা (১৮৬৮), রামায়ণ (১৮৬৯), কবিরহস্য (১৮৭০), কবিকৌতুক (১৮৭০), নির্বাসিতা সীতা (১৮৭১), দুর্ভাগিনী শ্যামা (১৮৭২), কবিতাবলী (১৮৭২) ও চারুকবিতা (৩ খন্ড, ১৮৭২)।
তাঁর গীতিনাট্যগুলি হলো আগমনী (১৮৭০), নতুন জামাই, হঠাৎ বাবু, ছাল নাই কুকুরের বাঘা নাম ইত্যাদি। রক্ষণশীল হিন্দু হরিশচন্দ্র ব্রাহ্মধর্ম এবং সাহিত্যে অশ্লীলতার বিরোধিতা করেন। তাঁর প্রবন্ধগ্রন্থ হলো কৌতুক শতক (১৮৬৩), কীর্তিবাসের পরিচয় (১৮৭০) ও কবিকলাপ (১৮৬৬)। কবিকলাপ হচ্ছে প্রাচীন কবিদের সংক্ষিপ্ত জীবনচিত্রের সংগ্রহ। তদুপরি তিনি সরলপাঠ (১৮৬৩), কবিতা কৌমুদী (৩ খন্ড), ছাত্রসখা, কুসুমলতা ও চরিতাবলীর অর্থ সহ বহুসংখ্যক স্কুল পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন। ১৮৭২ সালের ৪ এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়।
[সৈয়দ আবুল মকসুদ]