ভূ-পদার্থবিজ্ঞান
ভূ-পদার্থবিজ্ঞান (Geophysics) পৃথিবী ও এর পরিবেশ সম্পর্কীয় বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় পদার্থবিদ্যার প্রয়োগ, যেমন: পৃথিবীর চুম্বকত্ব, আবহবিদ্যা ইত্যাদি। ভূ-পদার্থবিজ্ঞান, ‘বিশ্ব ভূ-পদার্থ’ নামে অভিহিত সামগ্রিক পৃথিবীর গবেষণা থেকে শুরু করে ‘অনুসন্ধানী ভূ-পদার্থ’ নামে পরিচিত ঊর্ধ্ব ভূত্বকের প্রসন্ধানসহ ব্যাপক বিষয়ের গবেষণা কার্যক্রমে প্রয়োগযোগ্য। অনুসন্ধানী ভূ-পদার্থবিজ্ঞানে, ভৌগোলিকভাবে নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলসমূহের মধ্যে গৃহীত পরিমাপসমূহ ভূগর্ভে ভৌত ধর্মের বণ্টন নির্ধারণ করতে এবং ব্যতিক্রমী ভৌত ধর্মবিশিষ্ট অঞ্চল চিহ্নিত করতে ব্যবহূত হয়। এই ব্যতিক্রমী অঞ্চলসমূহকে তখন স্থানীয় অন্তর্ভূ-পৃষ্ঠ ভূবিদ্যা নামে অভিহিত করা হয়। সক্রিয় ভৌত ধর্মের ভিত্তিতে নিম্নলিখিত ভূ-পদার্থিক খনিজ আহরণ পদ্ধতি চালু রয়েছে: (১) অভিকর্ষ, (২) চৌম্বক, (৩) ভূ-কম্পনীয়, (৪) বৈদ্যুতিক ও তড়িৎচৌম্বক, (৫) তেজস্ক্রিয় ও (৬) কূপ ভূ-পদার্থ বিজ্ঞান।
আধুনিক ভূ-পদার্থিক পদ্ধতির সনাতন রূপগুলো বাংলাদেশে ব্যবহূত হয় প্রায় পঞ্চাশ বছর পূর্ব থেকে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বড় বড় তেল কোম্পানি, যেমন শেল, স্টানভ্যাক, পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও জাতীয় তেল ও গ্যাস উন্নয়ন কর্পোরেশন দেশের বিভিন্ন ভূভাগে অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করে। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র অভিকর্ষিক ও বায়ু চৌম্বক জরিপ চালানো হয়েছে এবং ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জি.এস.বি) ১:১০,০০,০০০ স্কেলে বাংলাদেশের বগ্যার অভিকর্ষ ব্যত্যয় (Bouguer gravity anomaly) ও বায়ু চৌম্বক ব্যত্যয় (aeromagnetic anomaly) মানচিত্র প্রণয়ন করে। উপাত্তের ভিন্ন ভিন্ন ঘনত্ব সম্বলিত একক ও বহুপক্ষীয় ভূ-কম্পনীয় জরিপ দেশের অধিকাংশ উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে পরিচালিত হয়েছে। সত্তর-এর দশকের মধ্যভাগে পরিচালিত বহুপক্ষীয় ডিজিটাল বা গাণিতিক ভূ-কম্পনীয় জরিপে বাংলাদেশের প্রধানত উপকূল অঞ্চলগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। দেশের উপকূলীয় বলয় ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন অংশে ভূগর্ভস্থ জল অনুসন্ধান, কাজের উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক অনুসন্ধান বিশেষ করে ভূ-পৃষ্ঠ রোধাঙ্ক জরিপ চালানো হয। শিলা-পদার্থিক পরিমাত্রা মূল্যায়নের জন্য কূপ খননের সময় ভূ-পদার্থিক লগিং নিয়মিত ব্যবহার করা হয়। [আ.স.ম উবাইদ উল্লাহ]