পাল, কৃষ্টদাস
পাল, কৃষ্টদাস (১৮৩৮-১৮৮৪) সাংবাদিক, বাগ্মী, লেখক, রাজনীতিবিদ। ১৮৩৮ সালের এপ্রিল মাসে পশ্চিমবঙ্গের কাঁসারিপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা ঈশ্বরচন্দ্র পাল কলকাতার এক ক্ষুদ্র দোকানে কাজ করতেন। গ্রাম্য পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর কৃষ্টদাস ওরিয়েন্টাল সেমিনারি এবং হিন্দু মেট্রোপলিটন কলেজে অধ্যয়ন করেন। কলেজ জীবনেই তিনি ‘ক্যালকাটা লিটারেরি ফ্রি ডিবেটিং ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৫৬ সালে ডেভিড হেয়ারের স্মৃতিসভায় উপস্থাপিত তাঁর প্রবন্ধ ‘দি ইয়ং বেঙ্গল ভিন্ডিকেটেড’ সুধীসমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কৃষ্টদাসের কর্মজীবন শুরু হয় আলীপুর জেলা জজ কোর্টে অনুবাদক হিসেবে। তিনি ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনে সহকারী সচিব হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৮৭৯ সালে এর সচিব পদে উন্নীত হন। কর্মদক্ষতাগুণে তিনি সরকারি-বেসরকারি মহলে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
১৮৬৩ সালে কৃষ্টদাস ‘জাস্টিস অফ দি পিস’ নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি ‘ক্যালকাটা মিউনিসিপল কাউন্সিল’-এর কমিশনার মনোনীত হন। ১৮৭২ সালে তিনি ‘বঙ্গীয় আইন পরিষদ’-এর সভ্য হন। ১৮৮৩ সালে বেঙ্গল টেন্যান্সি বিলের সঙ্কটকালীন মুহূর্তে লর্ড রিপন কৃষ্টদাসকে ‘ভারতবর্ষীয় ব্যবস্থাপক সভা’র (Viceroy’s Legislative Council) সভ্য নিয়োগ করেন। ১৮৭৭ সালে তিনি ‘রায়বাহাদুর’ এবং ১৮৭৮ সালে সিআইই উপাধিতে ভূষিত হন।
ছাত্রাবস্থা থেকেই কৃষ্টদাস মরনিং ক্রনিকল, সিটিজেন, ফিনিক্স, প্যাট্রিয়ট প্রভৃতি পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৮৬১ সালে কালীপ্রসন্ন সিংহ হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার স্বত্বাধিকার ক্রয় করলে কৃষ্টদাস এর সম্পাদক নিযুক্ত হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করেন। হিন্দু প্যাট্রিয়ট-এ কর্মরত থাকাকালে তিনি ক্যালকাটা মানথ্লি ম্যাগাজিন প্রকাশ শুরু করেন। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন শম্ভুচন্দ্র মুখোপাধ্যায়।
কৃষ্টদাস ব্রিটিশ সরকারের অনুগত হলেও দেশের স্বায়ত্তশাসনের প্রয়োজনীয়তা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি ইলবার্ট বিলের একজন জোরালো সমর্থক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন। চা শ্রমিকদের পক্ষে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখেন এবং ইমিগ্রেশন বিলকে ‘The Slave Law of India’ বলে অভিহিত করেন। উচ্চশিক্ষার সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে প্রতিবাদ করেন। ১৮৮৪ সালের ২৪ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়। [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]