ফিচ, রালফ
ফিচ, র্যালফ (১৫৫০-১৬১১) পরিব্রাজক ও লন্ডন শহরের একজন ধনী ব্যবসায়ী। তিনি প্রাচ্যে পর্যটনের উদ্দেশ্যে ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে ‘টাইগার’ নামক জাহাজে করে ইংল্যান্ডের রানী প্রথম এলিজাবেথের সনদ নিয়ে ভারতে আসেন। সনদের বিষয়বস্ত্ত ছিল, ইংরেজদের ব্যবসা ও ভ্রমণ সংক্রান্ত নিরাপত্তার অনুরোধ পত্র। গুপ্তচর সন্দেহে হরমুজ বন্দরে তাঁকে গ্রেফতার করে পর্তুগিজদের তত্ত্বাবধানে গোয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে দুজন খ্রিস্টান পাদরির দেয়া ২ হাজার ডুকে জামিনে ১৫৮৪ সালে তিনি মুক্তিলাভ করেন।
গোয়া ত্যাগ করে তিনি বুরহানপুর হয়ে আকবর এর রাজধানী ফতেহপুর সিক্রিতে আসেন এবং ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। বন্ধু নিউবেরির পরিকল্পনা ও নির্দেশ মতো ফিচ্ বাংলাদেশ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি আগ্রা ত্যাগ করেন। আগ্রা থেকে যমুনা ও গঙ্গা নদী হয়ে প্রয়াগ, বেনারস ও পাটনার ভেতর দিয়ে ১৮০ খানা নৌকা বোঝাই পণ্য সহ তিনি ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে তান্ডা শহরে পৌঁছেন। যদুনাথ সরকার এর মতে শহরটি মালদহ শহরের প্রায় ২৪.১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ছিল। তিনি তান্ডা থেকে কুচবিহার রাজ্যে যান। ওখান থেকে হুগলি বা পোর্ট পিকেনো পৌছেন। হুগলি থেকে সাতগাঁও, বাখরগঞ্জ এবং শ্রীপুর হয়ে তিনি ঈসা খান এর রাজধানী সোনারগাঁয়ে পৌঁছেন। সোনারগাঁও থেকে তিনি চট্টগ্রাম বা পোর্ট গ্রান্ডে আসেন। তারপর তিনি এখান থেকে সন্দ্বীপ হয়ে পেগুর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে মালাক্কা দ্বীপে পৌঁছেন এবং ফিরতি পথে তিনি পুনরায় বাংলায় আসেন এবং জাহাজের অভাবে ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর থেকে ১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে অবস্থান করেন। এরপর তিনি দক্ষিণ ভারত হয়ে গোয়ায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেখান থেকে হরমুজ, বসরা, বাগদাদ, আলেপ্পো ও ত্রিপলি হয়ে ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন উপস্থিত হন।
লন্ডন অবস্থান কালেই তিনি তাঁর ভ্রমণ-বৃত্তান্ত রচনা করেন। পরবর্তী কালে তাঁর এ বিবরণী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য বিশেষ সহায়ক হয়েছিল। তাঁর ভ্রমণ-বৃত্তান্তে তিনি বাংলার তান্ডা, হুগলি, সপ্তগ্রাম, চট্টগ্রাম, বাখরগঞ্জ, শ্রীপুর, সোনারগাঁও প্রভৃতি শহর ও বন্দর এবং সুন্দরবন অঞ্চল ও গঙ্গা নদীর গতি প্রবাহ সম্পর্কে ভূগোলবেত্তাদের তথ্য প্রদানে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে র্যালফ ফিচের মৃত্যু হয়। [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]